বিশ্বের যে নেতাদের মৃত্যুর রহস্য অজানা


পৃথিবীতে নানাভাবে অনেক মানুষ বিখ্যাত হয়েছেন যুগে যুগে। কেউ রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে শোষণ নির্যাতনের মাধ্যমে, কেউ সাহিত্য রচনা করে আবার কেউবা বিমান চালিয়ে। তবে বিশ্বখ্যাত এমন অনেকে আছেন, যাঁদের মৃত্যুর রহস্যের সন্ধান মেলেনি।
এর মধ্যে রয়েছেন নেপোলিয়ান বোনাপার্ট ও বিশ্বের প্রথম নারী বৈমানিক অ্যামেলিয়া ইয়ারহার্টসহ আরো অনেকে। তাঁদের মৃত্যুর রহস্যের কথা ধারাবাহিক চার পর্বে তুলে ধরেছে দৈনিক মতবাদের আন্তর্জাতিক ডেস্ক। প্রথম পর্বে পড়ুন নেপোলিয়ন বোনাপার্টের মৃত্যুর ইতিহাস।
ফ্রান্সের বিশ্বখ্যাত একনায়কতান্ত্রিক সম্রাট নেপোলিয়ন। যার পুরো নাম নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। যিনি বিশ্বের সামরিক অনেক সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু এতকিছুর পরও এক সময় নিঃশেষ হয়ে যায় তার সব শক্তি ও ক্ষমতা। তাই ১৮১৫ সালে ওয়াটারলুর যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর নেপোলিয়নকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল আফ্রিকার পশ্চিম উপক‚ল থেকে প্রায় ১ হাজার ১৬২ মাইল দূরে অবস্থিত দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের দুর্গম দ্বীপ সেইন্ট হেলেনাতে।
এরপর সেখানেই জীবনের শেষ ছয়টি বছর অতিবাহিত করেন তিনি। ব্রিটিশরা চেয়েছিল, নেপোলিয়ন ফ্রান্স থেকে যত দূরে থাকবে, ততোই তাদেও জন্য ভালো। কারণ নেপোলিয়ন এর আগে একবার ভ‚মধ্যসাগরের এলবা দ্বীপের নির্বাসন থেকে পালিয়ে ফ্রান্সে চলে গিয়েছিলেন। নির্বাসিত জীবনে নেপোলিয়ন প্রায়ই অসুস্থ হয়ে সময় কাটান।
সে দিনগুলো ছিল যেন তাঁর মৃত্যুর জন্য প্রহর গোনা। এভাবে এক সময় জীবনের শেষ ছয় মাসে তার অসুস্থতা মারাত্মক অবস্থায় পৌঁছে যায়। অনেকে বলেন, এটাই প্রকৃতির নিয়ম। কারণ শক্তির অপব্যহার বা অপচয় করলে এক সময় তার নিজে নিজেই নিঃশেষ হয়ে যায়। তাইতো নেপোলিয়নও যৌবনে অনেক শক্তিমান থাকলেও ১৮২১ সালের ৫ মে মাত্র ৫১ বছর বয়সে তার অকাল মৃত্যু হয়।
নেপোলিয়নের মৃত্যুসনদে লেখা ছিল, পাকস্থলীর ক্যানসারে মারা যান তিনি। তবে ফ্রান্সের এই সাবেক সম্রাট বেঁচে থাকতেই নিজের মৃত্যু নিয়ে রহস্য সৃষ্টি করে গেছেন। এখনো যার কোনো সমাধান হয়নি। মৃত্যুর তিন সপ্তাহ আগে লেখা নেপোলিয়নের উইল বা ইচ্ছাপত্রে লিখেছিলেন, ‘সময়ের আগেই মারা যাচ্ছি আমি, আমাকে হত্যা করেছে ইংরেজ শাসকগোষ্ঠী এবং তাদের গুপ্তহত্যাকারীরা।’
এ কারণে অনেকের ধারণা, খুব পরিকল্পিতভাবে নেপোলিয়নকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছিল।
কারণ মৃত্যুর ১৯ বছর পর ১৮৪০ সালে প্যারিসে মর্যাদাপূর্ণ শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের জন্য নেপোলিয়নের মরদেহ কবর থেকে তোলা হয়েছিল। ওই সময় নেপোলিয়নের মরদেহ তুলনামূলক বেশ ভালো অবস্থায় ছিল।
কিছু বিজ্ঞানী বলেছেন, বিষ হিসেবে আর্সেনিক প্রয়োগের কারণেই নেপোলিয়নের শরীরে স্বাভাবিক পচন ধরেনি। ১৯৬১ সালে এক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় ধরা পড়ে যে নেপোলিয়নের চুলেও অতিমাত্রায় আর্সেনিকেন উপস্থিতি ছিল।
এছাড়া ২০০৮ সালে আরেক পরীক্ষায় দেখা গেছে, নেপোলিয়নের পুরো জীবনের চারটি পর্যায়েই তাঁর দেহে আর্সেনিকের উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি। এমনকি তাঁর ছেলে এবং স্ত্রীর শরীরেরও ছিল একই অবস্থা।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, দীর্ঘ সময় ধরে নেপোলিয়নের শরীরে আর্সেনিক প্রয়োগ করা হয়েছিল। কারণ, অল্প মাত্রায় দীর্ঘ সময় আর্সেনিক প্রয়োগ করা হলেও তা সহজে চিহ্নিত করা যায় না।
তবে ২০০৪ সালের এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানা যায়, সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নির্বাসিত জীবন যাপনের সময় নেপোলিয়নের শরীরে নানা ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছিল। সেইসব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেই ফরাসি এই সমরনায়কের মৃত্যু হয়।
এদিকে, নেপোলিয়নের যে ক্যানসার হয়েছিল, তার সপক্ষেও যুক্তি উপস্থাপন করেছেন অনেকে। ২০০৭ সালের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, এই সাবেক সমর নায়ক ক্যানসার আক্রান্ত হয়েই মারা গেছেন। তবে শত গবেষণা হলেও নেপোলিয়নের মৃত্যুরহস্য এখনো সঠিক ভাবে কেউ উদঘাটন করতে পারেননি।
আগামীকাল পড়ুন বিশ্বনন্দিত প্রথম নারী বৈমানিক অ্যামেলিয়া ইয়ারহার্টের মৃত্যুরহস্য
