Scroll
আইনজীবী রেজাউল হত্যায় এখন ডাবল তদন্ত
বরিশালে শিক্ষানবিশ আইনজীবী রেজাউল করিম রেজাকে ডিবির নির্যাতনে হত্যার অভিযোগে আগে মামলা নেয়নি পুলিশ। তবে এখন পিবিআই-কে ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পুলিশও আলাদাভাবে শুরু করেছে তদন্ত।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার জানিয়েছেন, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য এসআই মহিউদ্দিন মহিকে ইতিমধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
২৯ ডিসেম্বর রাতে রেজাউল করিমকে বরিশালের সাগরদী এলাকায় হামিদ খান সড়কে তার বাসার সামনের চায়ের দোকান থেকে আটক করে ডিবি পুলিশ। ৩০ ডিসেম্বর তাকে একটি মাদক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ১ জানুয়ারি রাতে কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ২ জনুয়ারি দিবাগত রাত ১২টার পর তিনি হাসপাতালেই মারা যান।
রেজাউল করিমের স্ত্রী মারুফা আক্তারের ভাষ্য অনুযায়ী, “রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি (রেজাউল) চায়ের দোকান থেকে চা খেয়ে বাসায় ফিরবেন, ঠিক সেই সময়ে চায়ের দোকানের সামনে তাকে প্রথমে ডিবির এসআই মহিউদ্দিন সার্চ করে কিছু না পেয়ে দুইজন মাদক ব্যবসায়ীর নাম দিতে বলে। সে তাদের নাম দিতে না পারায় তাকে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। এরপর ছেড়ে দেয়ার জন্য পাঁচ লাখ টাকা চায়। সেটা দিতে রাজি না হওয়ায় তাকে ডিবি অফিসে নিয়ে সারা রাত নির্যাতন করে। তাকে কিছু খেতেও দেয়া হয়নি। পরে তাকে ১৩৭ গ্রাম গাঁজা দিয়ে মাদক ব্যবসায়ী সাজিয়ে মাদক মামলার আসামি করে কারাগারে পাঠায়।”
তিনি বলেন, “আটকের পর আমার শ্বশুর ইউনূস মুন্সি ডিবি কার্যালয়ে যান। তার সামনেই আমার স্বামীকে নির্যাতন করা হয়। আমার শ্বশুর এর প্রতিবাদ করলে এসআই মহিউদ্দিন তাকেও লাথি মারতে যায়। পরে আমার শ্বশুর চলে আসেন।”
নিহতের আইনজীবী জাকির হোসেন বলেন, “তার পরিবারের সদস্যরা থানায় মামলা করতে গেলে থানা মামলা নেয়নি। মঙ্গলবার আদালতে মামলা করলে মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আনিসুর রহমান মামলাটি গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।”
তিনি বলেন, “ডিবি অফিসে নির্মম নির্যাতনের কারণেই রেজাউল করিমের মুত্যু হয়েছে। তার কাছে কোনো মাদক পাওয়া না গেলেও মাদক দিয়ে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। এসআই মহিউদ্দিন মহি এবং অন্য দুই জন পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।”
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান জানান, পুলিশের পক্ষ থেকেও তদন্ত করা হচ্ছে। তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে অভিযুক্ত এসআই মহিউদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আগে থানা মামলা নেয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আদালতে তো মামলা হয়েছে। এখন আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।”
স্খানীয় সূত্র জানায়, ডিবির এসআই মহিউদ্দিন এর আগেও অনেক নিরীহ মানুষকে চাঁদা না পেয়ে হয়রানী করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের তিনি মাদকসহ নানা মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছেন। তবে পুলিশ কমিশনারের দাবি, আগে তার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ তিনি শোনেননি।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসেবে গত বছরের ১২ মাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে ২২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৮৮ জন ক্রসফায়ারে আর ৩৪ জন মারা গেছেন নির্যাতনে। সূত্র: ডয়েচে ভেলে।