খেলা স্লাইড
‘আসল শত্রু’কে চিনতে পেরেছেন সৌম্য
দীর্ঘ দুই বছর ধরে যে প্রশ্নের কোনো জবাব ছিল না; একটি ইনিংস খেলেই সেই জবাব সবার সামনে ফাঁস করলেন সৌম্য সরকার। প্রশ্নটা ছিল, কেন এই দীর্ঘ ফর্মহীনতা? কেউ কোনো উত্তর দিতে পারেনি। শুধু বলা হতো, সৌম্যর সমস্যাটা মানসিক। সেই মানসিক সমস্যার উৎস কী?- কেউ জানত না। কিন্তু দেরিতে হলেওসৌম্য তার আসল শত্রুকে ঠিকই চিনতে পেরেছিলেন। তাই মাঠে ফিরলেন আবার সেই পুরনো বিধ্বংসী রূপে।
চোখ জুড়ানো সব বড় বড় শট খেলা সৌম্য সরকারের মানসিক সমস্যার কারণ ছিল সোশ্যাল সাইট ফেসবুক! হ্যাঁ, ফেসবুকের কারণেই দিনের পর দিন হীনমন্যতায় ভূগতেন সৌম্য। না, এতে মার্ক জুকারবার্গের কোনো দোষ নেই। দোষ আমাদের বাঙালির। দু-একটি ম্যাচ ব্যর্থ হলেই সেই ফেসবুকে তীব্র আক্রমণ করা হতো তাকে; এখনও এটা হয়। অশ্লীল গালাগালির সঙ্গে সৌম্য হিন্দু বলে তাকে নিয়মিত সাম্প্রদায়িক আক্রমণ করে যেত এক শ্রেণীর মানুষ।
মানুষ হিসেবে বাঙালিরা শিক্ষিত-ভদ্র এখনও হতে পারেনি। কবে হতে পারবে সেটা কেউ জানে না। ভাবুন তো, দিনের পর দিন নিরবিচ্ছিন্নভাবে গালাগালি হজম করা একটা মানুষের পক্ষে সম্ভব? যারা এসব গালাগাল করে যাচ্ছেন, তারা কি নিজেরা দিনের পর দিন এসব সহ্য করতে পারবেন? তারা কি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই সফল?
সৌম্য নিজেই তো বললেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, ওই সময় বাইরের কথা বেশি শুনতাম। ফেসবুকটা যখন ব্যবহার করতাম, তখন নেতিবাচক মন্তব্যগুলো আসত অনেক, যা মাথায় গেঁথে যেত। মানুষ ইতিবাচক জিনিসটা লেখেও না। এমন এক-একটা হেডলাইন আসত, যেন আমি সবই খারাপ করেছি। আর আমরা বাংলাদেশিরা হেডলাইনটাই বেশি পড়ি, ভেতরে কী আছে পড়ে দেখি না।’
সৌম্যর শেষের কথাটি খুব বেশি করে সত্য বাংলাদেশের কথিত পাঠক আর তথাকথিত ভুঁইফোড় মিডিয়ার জন্য। কাটতি বাড়াতে ভুঁইফোড় মিডিয়া চটকদার সব শিরোনামে নিউজ করে; যার সঙ্গে মূল খবরের কোনো সম্পর্ক থাকে না। আর বাংলাদেশি পাঠকেরা মূল নিউজ না পড়ে শুধু নিউজের হেডিং দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়! এই ব্যাপারটি বুঝতে পেরে চরম সিদ্ধান্ত নেন সৌম্য সরকার। ফেসবুক দেন বন্ধ করে।
বিধ্বংসী এই ওপেনারের ভাষায়, ‘এটা বোঝার পর ফেসবুক ব্যবহার বন্ধ করার কথা ভেবেছি। নেতিবাচক জিনিসগুলো কম নেব, মানুষের সঙ্গে কথা কম বলব। শুধু ইতিবাচক জিনিস নিয়েই বেশি ভাবার চেষ্টা করেছি। অনুশীলনও কম করতাম তখন, যখন খারাপ যায় তখন সবই খারাপ যায়, ভালো কিছু করলেও দেখা যায় খারাপই হচ্ছে। একটু বন্ধুদের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতাম সেই সময়ে।’
এই ‘আসল শত্রু’কে চিনতেই পেরেই দীর্ঘদিন পর মানসিক সমস্যা থেকে বের হয়ে আসেন সৌম্য। যা সবার জন্য একটা অনেক বড় শিক্ষা। নিজ নিজ ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য মনকে শান্ত রাখতে হবে। বর্তমান সোশ্যাল সাইট মানসিক সমস্যার একটা বড় কারণ হয়ে উঠেছে। প্রত্যাশামতো লাইক না পড়লে, কমেন্ট না পড়লে কিংবা অশ্লীলতার শিকার হলে মানসিক অস্থিরতা চলে আসে। সুতরাং সোশ্যাল সাইটে ডুব দেওয়ার আগে ভেবে দেখুন; এটা আপনার জীবন শেষ করে দিচ্ছে না তো?