জাতীয়
আস্থা-বিশ্বাসের ঘাটতিতে বিএনপি ছেড়ে আ’লীগে ইনাম চৌধুরী
মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জন্য বড় দেয়াল হতে পারতেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী। হেভিওয়েট প্রার্থী ক্যাটাগরিতে যোগ্যতার নিরিখে মহাজোট প্রার্থী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিএনপি তাকেই বেছে নিতে পারে- এমনটি ভেবেছিলো সিলেটবাসী।
কিন্তু রাজনীতির শেষ বলতে কিছু নেই, সেটাই সত্য হলো ইনাম আহমদ চৌধুরীর ক্ষেত্রে। তার চেয়েও নির্মম সত্য, তিনি বিএনপি ত্যাগ করে যোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগে। মাত্র নয়দিন পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর এই সময়ে অভিভাবকতুল্য একজন নেতার দল ত্যাগে বড় ধাক্কা লেগেছে সিলেট বিএনপি পরিবারে।
তবে সিলেট বিএনপির শীর্ষ নেতারা ইনাম আহমদ চৌধুরীর চলে যাওয়া দলের জন্য কোনো ধাক্কা হিসেবে মনে করছেন না। তারা তাকে ‘ডেড হর্স‘ হিসেবে অভিহিত করছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা।
অবশ্য দল ছাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইনাম আহমদ চৌধুরী বলেন, আমি আওয়ামী লীগে যোগ দিলাম কারণ, আমি মনে করি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে শেখ হাসিনার হাত তথা আওয়ামী লীগের হাতকে আরও শক্তিশালী করা দরকার। যাতে এই দল জাতিকে সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের পথে নেতৃত্ব দিতে পারে।
তিনি বলেন, বিশ্বে প্রতিযোগিতার দৌড়ে মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে টিকে থাকা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য আমাদের আরও সমৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে উন্নয়নের মহাসড়কে বিজয়ের অভিযাত্রা শুরু করেছেন। দেশে-বিদেশে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। দেশের আধুনিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ডিজিটালাইজেশনসহ ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।
‘আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও ছিটমহল প্রাপ্তি, সমুদ্রসীমা জয়, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে পেরেছেন। যে কারণে ব্যবসায়ীরাও উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় মিলিত হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাই নিজেও সেই যাত্রায় শরিক হতে চাই।’
কোন ক্ষোভের কারণে বিএনপি ছেড়েছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জীবনে আমরা ভুল থেকেও শিক্ষা লাভ করি। অভিজ্ঞতার মাধ্যমেও আমাদের জানার ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করি। নতুন চ্যালেঞ্জ আমাদের জন্য সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে।
তার মতে, বিএনপিতে দীর্ঘকাল অবস্থানের পরও আশাহত হয়েছি। কোনো ব্যাপারে মর্মাহত হতে হয়েছে। বিএনপিতে আস্থা ও বিশ্বাসের ঘাটতি রয়েছে। যে কারণে আমার মতামত দৃষ্টিভঙ্গি সেখানে প্রতিফলিত হয়নি। মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্ত গ্রহণেও স্বচ্ছতার অভাব ছিল। যে কারণে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। ফলে নিজের অভিজ্ঞতা পরদর্শিতার নিরিখে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় শামিল হতে বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি নিজেকে সমর্পণ করেছি। কাজে লাগানো না লাগানো, সেটা আমার বিবেচ্য বিষয় নয়।
অন্যদিকে, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম বলেন, ইনাম আহমদ চৌধুরী ডিগবাজি খাওয়ার লোক। ওয়ান ইলেভেনের সময় তিনি ডিগবাজি খেয়েছিলেন। এখন আবারো ডিগবাজি খেলেন। তার মতো নেতাদের অভ্যাস এটাই। তিনি এখন ‘ডেড হর্স’। তার চলে যাওয়াতে বিএনপিতে ধাক্কা লাগার কারণ দেখি না। কেননা, বিএনপি একটি বড় দল। অতীতেও তার মতো এভাবে অনেকেই গেছেন।
আওয়ামী লীগে যোগদানের পর শুক্রবার (২১ ডিসেম্বর) সিলেটে আসছেন ইনাম আহমদ চৌধুরী। এদিন বিকেলে তিনি সিলেট-১ আসনে মহাজোটের প্রার্থী ড. একে আব্দুল মোমেনকে সঙ্গে নিয়ে তার পৈত্রিক নিবাস নগরের ধোপাদিঘীর পাড় হাফিজ কমপ্লেক্সে সাংবাদিক ও পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন- জানিয়েছেন জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা।