জাতীয়
কাঁদলেন ইসি মাহবুব তালুকদার, কাঁদালেনও
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে স্মৃতি মনে করে কেঁদেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন তিনি।
সভায় মাহবুব তালুকদার বলেন, আমার আজ বারবার কার কথা মনে পড়ছে আপনারা জানেন? আমার মনে পড়ছে বঙ্গবন্ধুর কথা। আমার পরম সৌভাগ্য যে, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সরকারিভাবে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। অনেক স্মৃতি।’
এদিন জাতির জনককে নিয়ে বেশ কিছু স্মৃতি স্মরণ করেন ইসি মাহবুব। এসময় তার চোখ থেকে অঝোরে পানি বেরিয়ে আসে।তার গাল বেয়ে চোখের পানি পড়তে থাকে। তার আবেগময় বক্তব্য শুনে অন্যরাও কেঁদে ওঠেন।
স্মৃতিচারণার একপর্যায়ে পুরো মিলনায়তনে ছিল পিনপতন নীরবতা। এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মাহবুব তালুকদার। কোনো কথা বলতে পারছিলেন না।তার স্বর ভারী হয়ে উঠে। অস্পষ্ট স্বরে কেবল সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে নিজের আসনের দিকে চলে যান।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে স্মৃতি স্মরণ করে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ওই দিনই তিনি আমায় ডেকে পাঠান। বলেন, মাহবুব, তুমি আমার সঙ্গে থাকবা। আমাকে রাষ্ট্রপতির সহকারী প্রেস সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়। পদবি বড় কথা নয়, দায়িত্ব অর্পিত হওয়ার পর স্বভাবতই আমি খুব খুশি হই।’
ওইদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমার দায়িত্ব পড়ে, বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর ডিকটেশন নেয়ার। সিদ্ধান্ত হয় দুপুরে খাওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর বিশ্রামের সময়টুকুতে আমি তার রুমে ঢুকে যাব। তিনি আমাকে বলেন, যদি কোনো অজুহাতে ডিকটেশন দেয়ার জন্য তিনি সময় না দিতে পারেন, তাহলে আমি যেন জোর করে ডিকটেশন নিই। সেইমতে আমি পরপর তিন দিন বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর ডিকটেশন নিই। তার ডিকটেশন রেকর্ডও করি। চতুর্থ দিন এসে বঙ্গবন্ধু বেঁকে বসেন। বলেন, তোমার জন্য তো আমি বিশ্রামটুকুও নিতে পারছি না।আমি তাকে বলি, ‘আইয়ুবের শাসন, আপনার ছয় দফা, পাকিস্তানের জেলে বন্দীর দিনগুলো, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা এ রকম গুরুত্বপূর্ণ সব অধ্যায়ের বিষয়গুলো নিয়ে তো আপনাকে ডিকটেশন দিতে হবে। আপনার বিশ্রামের সময় আপনাকে বিরক্ত করা আমারও ভালো লাগে না। তাই আপনি আমাকে অন্য একটা সময় বের করে দিন। বঙ্গবন্ধু বলেন, আমি সব কাজ গুছিয়ে আনছি, পরিবারের বিয়েশাদি শেষ করে দিয়েছি। সামনেই ডিকটেশন নেয়ার সময় বের করে দেব। কোনো কিছুই আটকে থাকবে না।’
দ্বিতীয় ঘটনার বর্ণণা দিতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মাহবুব তালুকদার। বলেন, ‘দ্বিতীয় ঘটনাটি ১৯৭৫ সালের এপ্রিল মাসের। বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমান যেদিন মারা যান। সেদিন আমি ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সারা দিন ছিলাম। চল্লিশার দিনে ঠিক হয়, বঙ্গবন্ধু টুঙ্গিপাড়া যাবেন। সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ, তিন বাহিনীর প্রধান ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা থাকবেন। গাজী জাহাজে টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরু হয়।আমার জাহাজ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা না থাকায় কাপড়চোপড় সঙ্গে নেয়ার কথা মনে হয়নি। রাতে জাহাজ ছাড়লে দেখি, আমার শোয়ার কোনো জায়গা নাই। একপাশে একটি খালি সোফা পেয়ে শুয়ে পড়ি। পাশেই তখনকার এডিসি রাব্বানি সাহেব ছিলেন।একপাশে একটি খালি সোফা পেয়ে শুয়ে পড়ি। পাশেই তখনকার এডিসি রাব্বানি সাহেব ছিলেন। মাঝরাতে আমার ঘুম ভেঙে যায়। দেখি, রাব্বানি জেগে আছেন। আমার মাথার নিচে বালিশ। আমি অবাক হয়ে রাব্বানিকে জিজ্ঞেস করি, এই বালিশ আমার মাথার নিচে কে দিলেন? রাব্বানি বলেন-রাতে বঙ্গবন্ধু রাউন্ডে এসেছিলেন। তিনি দেখেন আপনি মাথার নিচে হাত দিয়ে সোফায় শুয়ে আছেন। বঙ্গবন্ধু তার রুমে গিয়ে বালিশ নিয়ে এসে আপনার মাথার নিচে রেখে গেছেন।’
এ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্না শুরু করেন মাহবুব তালুকদার।ভার ভার কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি জানতাম বঙ্গবন্ধুর দুটি বালিশ ছাড়া ঘুম হয় না। তখন আমি বালিশ ফিরিয়ে দিতে বঙ্গবন্ধুর রুমের দিকে যাওয়ার কথা বলি। রাব্বানি জানান, গিয়ে লাভ নেই। বঙ্গবন্ধু দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েছেন।’
এসময় পুরো মিলনায়তনে ছিল পিনপতন নীরবতা। এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মাহবুব তালুকদার। তার স্বর ভারী হয়ে উঠে। অস্পষ্ট স্বরে কেবল সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে নিজের আসনের দিকে চলে যান।
ডিএম/যুগন্তর/ডেস্ক