মুক্তমত
ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের ভবন : বোধোদয় হইবে আর কবে?
বর্তমানে দেশের অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ। কোথাও কোথাও কোমলমতি শিক্ষার্থীরা খোলা আকাশের নিচে বহু কষ্টে লেখাপড়া করিতেছে। কোথাও আবার জীবনের ঝুঁকি লইয়া ১০ বত্সর আগে পরিত্যক্ত বিদ্যালয়েও ক্লাস করিতেছে। বিষয়টি কতটা ভয়াবহ তাহা এই মুহূর্তে বরগুনার তালতলীর ঘটনাটিকে বলা যায় তাহার জ্বলন্ত প্রমাণ। গত শনিবার এখানকার পি কে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা যখন ক্লাস করিতেছিল, তখন হঠাত্ সেই কক্ষের বিমের একাংশ ধসিয়া পড়িয়া এক ছাত্রী নিহত হইয়াছে মর্মান্তিকভাবে। আহত হইয়াছে তাহার ১০ সহপাঠী। অভিযোগ উঠিয়াছে, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়া ভবনটি নির্মাণের কারণে এই হতাহতের ঘটনা ঘটিয়াছে। এই স্কুলভবনটি ২০০২ সালে নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। কিন্তু ইহার এক বত্সরের মধ্যেই বিমে ফাটল দেখা দেয়। ইহার পর একাধিকবার সংস্কার করা হইলেও গত দুই বত্সর ধরিয়া ভবনটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ।
এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৩২৭টি। তন্মধ্যে নির্মাণের পর আর কোনো সংস্কার না করায় প্রায় দেড় হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় অতি জরাজীর্ণ। আর সব মিলাইয়া জরাজীর্ণ বিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় সাত হাজার। দেশে শুধু এলজিইডি নির্মিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০ হাজার। অথচ তাহাদের নির্মিত অনেক ভবনই আজ ঝুঁকিপূর্ণ। এইসব ভবনের বিম, দেওয়াল ও ছাদে ফাটল ধরিয়াছে। খসিয়া পড়িতেছে পলেস্তারা। বাহির হইয়া পড়িয়াছে ছাদের রড। এইসব ঝুঁকিপূর্ণ স্কুলভবন জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার বা তাহা ভাঙিয়া ফেলিয়া পুনর্নির্মাণ না করিলে পি কে সরকারি বিদ্যালয়ের মতো আরো অনেক শিশুশিক্ষার্থীর জীবনসংহারের ঘটনা ঘটিতে পারে। এই ধরনের সংস্কার বা পুনর্নির্মাণের কাজ একেবারেই যে হইতেছে না, তাহা নহে। কিন্তু এক একটি স্কুলভবনের এই ধরনের কাজ শেষ না করিতেই আরো অসংখ্য ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হইয়া পড়িতেছে। এইখানে সবচাইতে যে প্রশ্নটি বড় হইয়া দেখা দিয়াছে তাহা হইল—শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল এমনকি প্রশাসনিক ভবন, মিলনায়তন ইত্যাদি জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণের অল্প সময়ের ব্যবধানে তাহা কেন ব্যবহার অনুপযোগী হইয়া পড়িবে? কেন তাহাতে নিম্নমানের সামগ্রী এমনকি কোথাও কোথাও রডের বদলে বাঁশ ব্যবহার করা হইবে? স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিসহ ইহা যাহাদের দেখভাল করিবার কথা, তাহারা তাহা হইলে কী করিতেছেন? এই ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কি কোনো দায়-দায়িত্ব নাই? তাহারা কেন এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ভবন নির্মাণের সময় বা পরে তদারকি করেন না? কেন অনিয়ম ধরা পড়িবার পরও তাহার প্রতিবাদে জনসাধারণকে লইয়া সোচ্চার ভূমিকা পালন করেন না?
সরকার এক একটি স্কুলসহ গুরুত্বপূর্ণ ভবন নির্মাণে যে অর্থ বরাদ্দ দেন, তাহাতে সেই ভবন অন্তত ৪০ হইতে ৫০ বত্সর টেকসই হইবার কথা। অথচ ১০-১৫ বত্সরের মধ্যে ভবনগুলি ঝুঁকিপূর্ণ হইতেছে বা ভাঙিয়া পড়িতেছে! এইজন্য যে বাজেট দেওয়া হয়, তাহাতে ঘাটে ঘাটে ঘুষ দিতে না হইলে হয়ত ঠিকাদারগণ কাজটি ভালোভাবে সম্পন্ন করিতে পারিতেন। এই অনিয়মের লাগাম টানিয়া ধরিবেন কে? প্রাথমিক শিক্ষার পরিবেশ উন্নত করিতে প্রকল্পের মাধ্যমে ও রাজস্ব বাজেটের আওতায় এইসব বিদ্যালয় ভবনের সংস্কারকাজ দ্রুত গতিতে আগাইয়া নেওয়া প্রয়োজন।