তথ্য-প্রযুক্তি
ডিএসএলআর নাকি মিররলেস ‘আপনি ঠকছেন না তো!’
যেকোনো পণ্য কিনতে গেলে ক্রেতারা শুরুতে যে কথাটি ভাবেন সেটি হলো, ‘আমি ঠকছি না তো!’ ক্যামেরা-প্রেমীরাও এটা ভাবেন। কিন্তু আজকাল এই ভাবনার আগে তারা আরেকটি বিষয় নিয়ে চিন্তা করেন ডিএসএলআর নাকি মিররলেস?
কয়েক বছর আগেও ডিজিটাল সিঙ্গেল লেন্স রিফ্লেক্স ক্যামেরা বা ডিএসএলআরের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি ছিল। কিন্তু সেই জায়গা এখন মিররলেস ক্যামেরা দখল করছে। ডিএসএলআর থেকে ওই ক্যামেরাগুলোতে ভালো কিছু সুবিধা পাওয়া যায়।
জনপ্রিয় ফটোগ্রাফি প্রতিষ্ঠান ড্রিম ওয়েভারের ফটোগ্রাফার হিমাংশু বিশ্বাস প্রণব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মিররলেস ক্যামেরা দিয়ে অন্ধকারে ছবি ভালো আসে। কারণ এই ক্যামেরা ছবি ডেলিভারি দিতে ছোট পেরিস্কোপ প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রযুক্তিতে ইলেকট্রনিক ভিউফাইন্ডার ব্যবহৃত হয়। এগুলো ছোট টিভি স্ক্রিনের মতো, যা অন্ধকারে ব্যবহার করা সহজ হয়।’
হিমাংশু জানান, এ ধরনের ক্যামেরায় একদম শব্দহীনভাবে শ্যুট করা যায়। বাটন চাপার পর ‘শাটার নয়েজ’ আসে না। প্রতি সেকেন্ডে দশ কিংবা তার বেশি শট নেওয়া যায়। মিররলেস ক্যামেরায় অটোফোকাসও তুলনামূলক দ্রুত হয়।
ফুলফ্রেমের প্রথম মিররলেস ক্যামেরা বাজারে আনে সনি। সেটা ২০১৩ সালের কথা। সেই থেকে বেশ কিছু ক্যামেরা জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
ডিএসএলআর এবং মিররলেসের পার্থক্য
একটা ডিএসএলআর ক্যামেরা কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া ৩৫ মিলিমিটারের ফিল্ম ক্যামেরার মতোই ডিজাইনে বানানো। লেন্সের ভেতর দিয়ে আসা আলো ক্যামেরার ভেতরে থাকা একটা আয়নায় প্রতিফলিত হয়ে প্রিজমের মধ্য দিয়ে ভিউফাইন্ডারে দৃশ্যমান হয় আর আমরা তা দেখতে পাই। আর যখন আমরা শাটার বাটনে চাপ দিই, তখন ক্যামেরার ভেতরে থাকা আয়নাটা ওপরে উঠে গিয়ে আলোকে সেন্সরে যেতে দেয় এবং সেন্সর তখন ইমেজ প্রসেসরের সাহায্যে ছবিটা তৈরি করে দেয়।
আর মিররলেস ইন্টারচেইঞ্জেবল লেন্স ক্যামেরায় আলো লেন্সের মধ্য দিয়ে সোজা ক্যামেরা সেন্সরে যায় এবং সেন্সর তখন ইলেকট্রনিক ভিউফাইন্ডারে ছবিটা কেমন হতে পারে তা দেখায় এবং শাটার বাটনে চাপ দিলে ইমেজ প্রসেসর ছবিটা তৈরি করে দেয়। আমাদের স্মার্টফোনের ক্যামেরাও মিররলেস ক্যামেরার একটা উদাহরণ।
যে মিররলেস ক্যামেরাগুলো কিনতে পারেন
দাম
ক্যামেরাগুলোর দাম বাংলাদেশের সাধারণ ক্রেতাদের খানিকটা নাগালের বাইরে। তবে পেশাদার ফটোগ্রাফরা এগুলো ব্যবহার করতে পারেন। সব মিলিয়ে দাম পড়বে লাখ টাকার ওপরে।
এত টাকা দিয়ে আবার অধিকাংশ মানুষ ফটোগ্রাফি দুনিয়ায় নিজের যাত্রা শুরু করতে চান না বা পারেন না। তাদের জন্য ডিএসএলআরই যথেষ্ট। দামের বিচারে এই ক্যামেরাও কয়েক লাখ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। আবার ৫০ হাজারের ভেতরও কিনতে পারবেন।
নিকন (১৮-১৪০ মিমি লেন্সসহ)
ডি৫৩০০ মডেলের ক্যামেরাটির দাম পড়বে ৩৫ হাজার ৫০০ টাকার মতো। এতে ওয়াইফাই প্রযুক্তি যুক্ত থাকায় আলোকচিত্রীরা সহজে ছবি শেয়ার করতে পারেন। ক্যামেরার সাহায্যে স্মার্টফোন, ট্যাবলেটে ছবি শেয়ারের পাশাপাশি সরাসরি সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটেও আপলোড করা যায় এবং ক্যামেরা থেকে মেইল করাও যায়। এ ছাড়া ওয়াইফাই ব্যবহার করে দূর থেকে ক্যামেরায় ছবি তোলা সম্ভব হবে। ডি৫৩০০ মডেলের ক্যামেরার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ডিএসএলআর সিরিজে জিপিএস প্রযুক্তি যুক্ত করছে নিকন, যা ছবিতে জিওট্যাগ বসাতে আলোকচিত্রীদের সাহায্য করবে।
সনি
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ক্যামেরা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সনি ১৯৯৬ সালে প্রথম ক্যামেরা বাজারে আনে। এখন পর্যন্ত তারা বেশ কয়েকটি ভালো ক্যামেরা বাজারে ছেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে সনির যন্ত্রাংশ খুব একটা সহজলভ্য নয়। ক্যামেরা কেনার আগে এ বিষয়টি মাথায় রাখা ভালো। তবে খুব বেশি বাড়তি যন্ত্রাংশ দরকার না পড়ায় এ ব্র্যান্ডটিকে আপনার পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন। একদম নতুন ফটোগ্রাফারদের জন্য সনি সাইবারশট ডিএসসি ডব্লিউ৩০ একটি ভালো ক্যামেরা। এর বাড়তি সুবিধা হলো এতে একটি ভিউ ফাইন্ডার আছে, যা কাছাকাছি দামের অন্য ব্র্যান্ডগুলোতে পাওয়া যাবে না। আরেকটু ভালো ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে আপনার পছন্দের তালিকায় থাকতে পারে এইচএক্স ৪০০ভি বা ডিএসসি এইচ৪০০ ক্যামেরা দুটি। এইচ৪০০ মডেলের সনি ক্যামেরার দাম পড়বে ৩০ হাজারের মতো।
ক্যানন
এই ক্যামেরার অনেক মডেল বাজারে পাবেন। চাহিদার মধ্যে হরেক রকম দাম আছে। গত আগস্টেও তারা নতুন মডেলের দুটি ক্যামেরা বাজারে ছেড়েছে। একটি ইওএস ৯০ডি মডেলের ডিএসএলআর, আরেকটি ইওএস এম ৬ মার্ক ২ মিররলেস ক্যামেরা। দুটিতেই ৩২ দশমিক ৫ মেগাপিক্সেলের এপিএস-সি সেন্সর, ডিজিক ৮ প্রসেসর, ফোরকে ভিডিও ধারণ, ওয়াইফাই, ব্লুটুথ ও ইউএসবি-সি সংযোগ রয়েছে। এগুলোর বাইরে দোকান থেকে কিংবা অনলাইনে অসংখ্য মডেল থেকে পছন্দের ক্যামেরাটি নির্বাচন করতে পারেন।
কম দামে মিররলেস
১৬-৫০মিমি এফ/৩.৫-৫.৬ লেন্সসহ ৪০-৪৫ হাজারের ভেতর মিররলেস ক্যামেরা কিনতে চাইলে সনি এ৬০০০ মডেলটি নিতে পারেন। ক্যামেরাটি সহজে বহনযোগ্য। দ্রুত ছবি তুলতে সক্ষম।
যা মাথায় রাখবেন
কোন কোম্পানির কোন মডেলের ক্যামেরা কিনবেন, সেটি আপনার কাজের ওপর নির্ভর করবে। পেশাদার হিসেবে কাজ শুরু করতে গেলে ভালো লেন্স নিতে হবে। তাতে মডেলের দামও বেশি যাবে। ডিজিটাল ক্যামেরার মেগাপিক্সেল যত বেশি হবে, ছবির মানও তত ভালো হবে এই ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়। ইমেজ সেন্সরের ওপর ছবির মান নির্ভর করে। সেন্সরের আকার যত বড় হবে, ছবির মান তত ভালো হবে। ক্যামেরায় দুই ধরনের ইমেজ সেন্সর দেখা যায়। সিসিডি ও সিএমওএস নামের সেন্সর সিএমওএস সেন্সরে কম ব্যাটারি খরচ হয়।
এ ছাড়া জুম নিয়েও ভাবতে হবে। অপটিক্যাল ও ডিজিটাল দুই ধরনের জুম থাকে। অপটিক্যাল জুম লেন্সের ফোকাল দৈর্ঘ্য পরিবর্তন করে বিষয়বস্তুকে কাছে নিয়ে আসে। ফলে ছবির মান অটুট থাকে। যে ক্যামেরাটি কিনতে চান অনলাইনে সার্চ দিয়ে, সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া ভালো।
কোথায় পাবেন
রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ের বিসিএস কম্পিউটার সিটি, বসুন্ধরা সিটি শপিং মলসহ দেশের বিভিন্ন প্রযুক্তি পণ্য বিক্রেতাদের কাছে পাওয়া যাবে ডিএসএলআর ক্যামেরা। এখন ফেইসবুকে অনেক গ্রুপে ক্যামেরা কেনাবেচা করা হয়। সেখান থেকে সেকেন্ড হ্যান্ডও কিনতে পারেন। তবে এসব ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত। অনেক সময় মানহীন ক্যামেরা দিয়ে আপনাকে বিক্রেতা ঠকাতে পারে।