বরগুনা
পাথরঘাটায় কাঁকড়া চাষীদের সুদিন
জলজ প্রাণিদের মধ্যে কাঁকড়া সুপরিচিত। উপকূলীয় অঞ্চলে বিশেষ করে পাথরঘাটা উপজেলা ‘মাছের রাজ্য’ হিসেবে পরিচিত হলেও বর্তমানে কাঁকড়ার অঞ্চল নামেও বেশ পরিচিতি লাভ করেছে।
মাছ ও ধানের চেয়ে বেশি লাভজনক হওয়ায় কাঁকড়াচাষির সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। উন্নত পদ্ধতিতে কাঁকড়ার চাষ ও মোটাতাজাকরণে পাথরঘাটায় এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় শতাধিক চাষি রয়েছে। যাদের আয়ের উৎসই এখন কাঁকড়া চাষ। আর এ চাষিদের কারিগরী সহযোগিতা করছেন পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ও স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘সংগ্রাম’।
পাথরঘাটা প্রান্তিক জনপদ ঘুরে দেখা গেছে, যেখানে কয়েক বছর আগেও ধানের মৌসুমে চাষিরা ধান চাষ করতেন। এ অঞ্চলের চাষিরা সিডর পূর্ববর্তী সময়ে এক ফসল দিতো, সিডর পরবর্তী থেকে দুয়ের অধিক ফসল ফলানোর জমিতে আজ কাঁকড়া চাষ করছেন। মাঠে মাঠে দেখা যায়, কাঁকড়া ঘের আর ঘের। দেখলে মনেই হবেনা কয়েক বছর আগেও এখানে ধান চাষ হতো। কয়েক বছর আগেও এ অঞ্চলের মানুষ কাঁকড়া চাষের বিষয়টি ভাবাতো দূরের কথা শোনেওনি। এখন এ অঞ্চলের মানুষ কাঁকড়া চাষের দিকে ঝুঁকছে। আস্তে আস্তে এ সংখ্যা বাড়ছে। চাষিরা বলছেন, মৎস্য আহরণ ও ধান চাষের চেয়ে বেশি লাভবান হওয়াতে কাঁকড়া চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন তারা।
বছরে প্রাকৃতিক উৎস হতে সংগ্রহ ও চাষের মাধ্যমে যে পরিমাণ কাঁকড়া পাওয়া যায় তার ৯৫ ভাগ কাকড়া বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়ে থাকে। আর এর সিংহ ভাগই জোগান দিচ্ছে পাথরঘাটার কাঁকড়া। সাধারণ শক্ত খোলসযুক্ত ও নরম খোলসযুক্ত এ দুই ধরনের কাঁকড়া রফতানি করা হয়। রফতানিকরা কাঁকড়ার ৯৫ ভাগ হলো শক্ত খোলসযুক্ত। পাথরঘাটার বিভিন্ন ছোট ছোট খাল, বলেশ্বর ও বিষখালী নদীতে আহরণকারীরা আহরণ করে চাষিদের কাছে বিক্রি করে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আহরণকারীরা নদী-নালায় ছোট ছোট কাঁকড়া আহরণ করছেন। খামারে বাচ্চা কাঁকড়া বড় করা এবং খোলস পাল্টানো ‘জাত কাঁকড়া’ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক কাঁকড়ার বিক্রয়যোগ্য আকার পর্যন্ত মোটাতাজাকরণ করা হয়।
পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের পশ্চিম কাঠালতলী গ্রামের কাঁকড়া চাষি লিটন মন্ডল জানান, আহরণকারীদের কাছ থেকে বড় এবং খোল পাল্টানো কাঁকড়া ক্রয় করে তা তাদের ঘেরে চাষ করে। প্রতি বছর তিনবার বিক্রি করা যায়। তাতে প্রতিবারই আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আয় হয় তাদের। লোনা, আধালোনা ও স্বাদুপানিতে কাঁকড়া চাষ করেন তারা।
কাঁকড়া চাষি উত্তম মজুমদার বলেন, দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে কাঁকড়ার চাষ এবং ব্যবসা করেন। এক একর জমিতে কাঁকড়া চাষ করছি। তবে সরাসরি আমরা বাজারজাত করতে না পারায় মধ্যসত্ত্বভোগিরা লাভবান হচ্ছে বেশি। এ জন্য সহজে কাঁকড়া নিজেরাই মোকামে বাজারজাত করার দাবি করছেন। একাধিক কাঁকড়া চাষিরা বলছেন, সহজ শর্তে ঋণ পেলে আরও কাঁকড়া চাষি বৃদ্ধি পাবে।
স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সংগ্রামের ভ্যালু চেইঞ্জ ফ্যাসিলেটেটর গিয়াস উদ্দিন বলেন, উপজেলায় প্রায় দেড় শতাধিক চাষি রয়েছে। সব সময়ই আমরা কারিগরী সহযোগিতা করে আসছি। যখনই চাষিদের কোনো সমস্যা হয় তাৎক্ষণিক গিয়ে পানির লবণাক্ত পরিমাপ করা এবং অক্সিজেন পরিমাপ করে পরামর্শ দিয়ে থাকি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে পাথরঘাটা উপজেলায় ১ হাজার জনকে কাঁকড়া চাষের আওতায় আনা। এছাড়া চাষিদের স্বল্প সুদেও ঋণ দেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে পাথরঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শিশির কুমার বড়াল বলেন, কৃষি চাষের বিকল্প কাঁকড়া চাষ এ ক্ষেত্রে কৃষি বিভাগের কোনো আইনগত বাধা নেই। চাষি যেটাকে লাভবান মনে করবে সেটিই করতে পারবে।
বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সরদার মহিউদ্দিন বলেন, কাঁকড়া চাষ একটি লাভজনক। আমরা এরইমধ্যে কিছু সংখ্যক কাঁকড়া চাষিদের প্রশিক্ষণও দিয়েছিলাম।
এছাড়া আমরা সব সময়ই পরমার্শ দিয়ে থাকি। এখন অনেকেই কাঁকড়া চাষে উদ্ধুদ্ধ হচ্ছে। কাকড়া থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে।
ডিএম/বাংলানিউজ/ডেস্ক