রাজনীতি
পৌনে চার ঘণ্টার সংলাপ শেষ
খোলামেলা হয়েছে-কাদের ॥ ভালো হয়েছে-ড. কামাল ॥ সন্তুষ্ট নই-ফখরুল
গতকাল রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি সময় সংলাপ করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দল। সংলাপ শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়েদুল কাদের বলেছেন খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। এ সময় মন্তব্য করতে গিয়ে ড. কামাল বলেছেন আলোচনা ভালো হয়েছে। কিন্তু বিএনপি সহাসচিব মীর্জা ফকরুল হোসেন আলমগীর বলেছেন আমরা সন্তুষ্ট নই, আরো আলোচনা হতে পারে।
বহুল আলোচিত এই সংলাপে যোগ দিতে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বেইলি রোডে তার বাসা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ৫টার দিকে রওনা হয় ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দলটি। সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে তারা গণভবনে পৌঁছান।
জাতীয় যুব দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সন্ধ্যা ৬টায় গণভবনে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা পৌঁছানোর পর ব্যাংকোয়েট হলে বসেন। সংলাপের নির্ধারিত সময় সন্ধ্যা ৭টায় সেখানে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। রাত ১০টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত এই সংলাপ চলে।
সংলাপ শেষে প্রথমেই বেরিয়ে যান জাফরুল্লাহ চৌধুরী। গণভবন রওনা হওয়ার আগে বিকাল সাড়ে ৪টায় কামাল হোসেনের বাড়িতে পৌঁছে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। এর পৌনে এক ঘণ্টা পর তারা রওনা হন। কামালের বাড়িতে বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর থাকলেও প্রতিনিধি দলে থাকা বিএনপির অন্য নেতারা ছিলেন না। তারা আলাদাভাবে গণভবনে পৌঁছান। এর মধ্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নাম প্রতিনিধি দলে থাকলেও তিনি সংলাপে যাননি। সবাই পৌঁছে যাওয়ার ১৫ মিনিটের বেশি সময় পর গণভবনে ঢোকেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
এদিকে সংলাপে সন্তুষ্ট নন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রাতে সংলাপ শেষে গণভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন। সংলাপ শেষে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। সংলাপে সন্তুষ্ট কি না, সংলাপে কি কি হলো সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সন্তুষ্ট নই। আর কোনো কথা তিনি বলেননি।
অন্যদিকে আলোচনায় অগ্রগতি আছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ। তিনি বলেন, সবাই ভালো বলেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি এ মন্তব্য করেন। এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমরা সংবিধানের বাইরে যেতে পারব না।
তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে যে সাত দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়েছে, তার অনেকগুলো সংবিধানসিদ্ধ নয়। তবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য ঐক্যফ্রন্টকে আহ্বান জানানো হয়েছে এবং আলোচনার পথ এখনও খোলা আছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ৫০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে সংলাপ শেষে বের হয়ে এসে তিনি এ মন্তব্য করেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, সংবিধানের আলোকেই আমরা আলোচনার করা চেষ্টা করেছি।
নির্বাচন হবে, আলোচনা হবে সংবিধান অনুযায়ী। নির্বাচনকালীন সরকার এবং সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতার ব্যাপারে তাকে প্রশ্ন করা হলে কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, আমরা সংবিধানের বাইরে কোনো আলোচনা করতে পারি না।
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে কাদের বলেন, সংলাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- খালেদার মামলার বিষয়টি আদালতের ব্যাপার। তা আইনের মাধ্যমে সমাধান হবে।
এদিকে আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক শ. ম. রেজাউল করিম বলেছেন, আমরা সংবিধানের বাইরে কোনো আলোচনা করতে পারিনা। ৭ দফা সংবিধানসিদ্ধ নয়। সংলাপের পর বাণিজ্যমন্ত্রী আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন যেকোনো জায়গায় যেকোনো সময় আলোচনা হতে পারে। এসময় সাংবাদিকদের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আলোচনা হয়েছে।
সংবিধানের মধ্যেই আমরা কথা বলেছি। সংবিধানের আলোকে আলোচনা হয়েছে। আলোচনা গঠনমূলক হয়েছে।’আলোচনা কি আজই শেষ? না আরও হবে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যেকোনো জায়গায় যেকোনো সময় আলোচনা হতে পারে। আমরা তাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা বলেছি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, আলোচনা সুন্দর হয়েছে। তবে সংলাপের সফলতা সম্পর্কে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
এর আগে সংলাপের শুরুতে সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশটা আমাদের সবার। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং সার্বিক উন্নয়নই আমাদের মূল লক্ষ্য।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ সরকারের ৯ বছর ১০ মাস হতে চলেছে। আমরা এ সময়ের মধ্যে দেশের কতটুকু উন্নয়ন করতে পেরেছি। তবে এটুকু বলতে পারি, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ভালো আছে। তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণভবন জনগণের ভবন। আজ আপনারা এ অনুষ্ঠানে এসেছেন। এখানে আমি আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই।’ তিনি বলেন, ‘দিন বদল হচ্ছে।
এটাকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। মহান নেতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে শহীদদের রক্তের বিনিময়ে আমরা মহান স্বাধীনতা অর্জন করেছি। স্বাধীনতার সুফল যেন মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাতে পারে সেটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। আর সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। উন্নয়নের বিচারের ভার আপনাদের ওপর ছেড়ে দিলাম।’ প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর রুদ্ধদ্বার সংলাপ শুরু হয়।
সংলাপে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দলে ছিলেন বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমীন, সাবেক দুই সংসদ সদস্য এস এম আকরাম ও সুলতান মো. মনসুর আহমেদ, জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জেএসডির আ স ম আবদুর রব, তানিয়া রব, আবদুল মালেক রতন, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, আ ও ম শফিকউল্লাহ, মোকাব্বির খান, জগলুল হায়দার আফ্রিক এবং নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না। সংলাপে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফর উল্যাহ, আবদুল মতিন খসরু, মো.আব্দুর রাজ্জাক, রমেশ চন্দ্র সেন, আনিসুল হক, মাহাবুব-উল আলম হানিফ, আবদুর রহমান, দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুস সোবহান গোলাপ, শ ম রেজাউল করিম, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু, মইনুদ্দিন খান বাদল, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া।