বরিশাল
প্রধান নির্বাহীর ইন্ধনে মেয়রের নির্দেশ উপেক্ষিত, রোড ইন্সপেক্টরদের মারধর
বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবত সাদিক আবদুল্লার নির্দেশ অমান্য করে ভবন নির্মাণ কাজ করেছেন অবসরপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ফরহাদ হোসেন। কাজের বাধা দিতে গেলে করপোরেশনের সড়ক পরিদর্শকদের (রোড ইনসপেক্টরর আরআই) মারধর করে তাড়িয়ে দেন তিনি ও তার লোকজন।
আজ শুক্রবার বিকেলে মেয়রের নির্দেশে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজ বন্ধ করতে করপোরেশনের সড়ক পরিদর্শকদের (রোড ইনসপেক্টরর আরআই) ঘটনাস্থলে পাঠালে তাদের মারধর করেন ফরহাদ হোসেনের শ্যালক বাহরুল হক এবং নিমামুল ইসলাম। এক পর্যায়ে বাহরুল হক, নিজামুল হকসহ শ্রমিকদের নিয়ে আরআইদের মেরে তাড়িয়ে দেন।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের সড়ক পরিদর্শক (আরআই) মো. রেজাউল কবির বলেন, নগরের শ্রীনাথ চ্যাটার্জী লেনে ফরহাদ হোসেন নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেন। করপোরেশনের নিয়ম অনুযায়ী জায়গা না ছাড়ার কারণে তাকে নোটিশ দিয়ে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি গতকাল শুক্রবার বন্ধের দিন কাজ করেছেন। বিষয়টি জেনে মেয়র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমাদের সেখানে পাঠিয়েছেন। আমি এবং আরআই মো. সাজ্জাত হোসেন ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার একান্ত সহকারী এসএম হেলাল উদ্দিনকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে কেন কাজ করা হচ্ছে তা জানতে চাই। এসময় ফরহাদ হোসেনের শ্যালক বাহরুল হক এবং নিমামুল ইসলামসহ অন্যরা আমাদের মারধর করেন। আমার জামার বুতাম পর্যন্ত ছিড়ে ফেলেছে। এক পর্যায়ে তারা ও তাদের সহযোগীরা মিলে বাঁশ নিয়ে তাড়া করে। প্রাণ ভয়ে আমরা সেখান থেকে চলে আসি। বিষয়টি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং মেয়রকে জানানো হয়েছ।
এব্যাপারে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবত সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, আমি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে আগে নির্দেশ দিয়েছিলাম কাজ বন্ধ রাখার। তারপরও কিভাবে কাজ করে? গতকাল আমার আরআইদের কাজ বন্ধ করতে ঘটনাস্থলে পাঠালে তারা আমার আরআইদের মারধর করেছে। আজ শনিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে বর্ধিত অংশ ভেঙে দেওয়া হবে।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশেই ফরহাদ হোসেন ওই নির্মাণ কাজ করছিলেন। ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে যোগসাজসে ওই কাজ করা হচ্ছিল। তবে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খায়রুল হাসান ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি মেয়রের কাছে বলেছেন তার (প্রধান নির্বাহী) কর্মকর্তার মিথ্যা দোহাই দিয়ে ওই কাজ করা হচ্ছিল। তিনি ওই কাজ করার জন্য কাউকে বলেননি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ফরহাদ হোসেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে নানান ধরণের দুর্নীতি করেছেন। তিনি শ্রীনাথ চাটার্জী লেনে ঐতিহ্যবাহী শ্রীনাথের বাড়িটি অবৈধভাবে দখল করেছেন। এলাকায় তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী হিসেবে বেশি পরিচিত। তিনি ও তার পরিবার বর্তমানে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। যদিও বর্তমানে আওয়ামী লীগের দিকে আসার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এলাকার কাউন্সিলর মহানগর বিএনপি নেতা অ্যাড. মীর জাহিদুল কবিরের পক্ষে নির্বাচন করেছেন এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ভরাডুবির পেছনেও এই পরিবার ও তার শ্যালকদের ভূমিকা রয়েছে। তাঁর শ্যালক বাহরুল হকও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এতকিছুর অধিকারী ফরহাদ হোসেন বর্তমানে নিজেকে আ.লীগের লোক বলে দাবি করে অবৈধ কাজ হাসিলের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে বর্তমান সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সখ্যতা আছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তিনি মেয়রের নির্দেশ অমান্য করে ভবন নির্মাণ কাজ করছেন।