Scroll
বরিশালে জীবনের পাশাপাশি জীবিকাতেও চলছে মহামারী
করোনা ভাইরাসের কারণে থমকে গেছে দেশ। করোনার তান্ডবের প্রভাবে অর্থনীতিতে নেমেছে ধস। যার প্রভাবে থমকে গেছে বরিশাল অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকা। করোনায় যেমন জীবনে মহামারী দেখা দিয়েছে তেমন মহামারী দেখা দিয়েছে জীবিকাতে। কমেছে আয়, বিপরীতে বাড়ছে দ্রব্যমূল্য। বেঁচে থাকার এ যুদ্ধে সারাদেশের মতো বরিশালেও নিম্ন কিংবা মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি।
চিকিৎসা, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য, যাতাযাত ভাড়া থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে বেড়েছে ব্যয়। বিপরীতে মানুষের আয় একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। আবার কারো আয়ের পরিমান শূণ্যের কোঠায়। দিনে দিনে জীবনযাত্রায় ব্যয় আরো বাড়ছে। করোনার কারণে জীবন একদিকে যেমন মহামারীতে পড়েছে, তেমন মহামারীতে পড়েছে জীবিকাও।
বলিশাল অঞ্চলে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সরকারি চাকরিজীবী, মাল্টিন্যাশনাল ও বড় কোম্পানিতে কাজ করা কিছু মানুষ বাদে অন্যরা সবাই এখন চরম সংকটে আছেন। অন্য যারা চাকুরি করছেন তাদের অনেকেই চাকুরি ইতোমধ্যেই হারিয়েছেন বা হারানোর ঝুঁকির মধ্যে আছেন।
নগরীর আলেকান্দার মনির। বেসরকারি একটি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে চাকুরি করেন। যাতাযাত বিল ৫ হাজার ও বেতন পেতেন ১৫ হাজার। করোনাকালিন সময়ে এসে অফিস থেকে যাতায়াত বিল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি বেতন কেটে করা হয়েছে ৬ হাজার। এতো অল্প বেতনে মনির পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তিনি জানান, সঞ্চয় যেটুকু ছিল তা ভেঙে খাওয়া হয়েছে। এখন হাত ফাঁকা। অল্প বেতনে নিজেদের চলাই দায় হয়ে পড়েছে।
মহানগরীর পলাশপুর এলাকার রিকশাচালক মজিদ খলিফা। তিনি জানান, মানুষ আগের মতো আর ঘর থেকে বের হয় না। তাই রিকশা ভাড়াও কমেছে। আসে সারাদিন রিকশা চালিয়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হলেও এখন তা ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় নেমে এসেছে।
চারদিকে এখন কর্মী ছাঁটাই আর কর্ম হারানোর আতঙ্ক। তার মধ্যে বড় সংকট চিকিৎসা। চিকিৎসা পেতে গিয়ে নিম্ন কিংবা মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি। তারা সরকারি সেবাও ঠিকমতো পাচ্ছেন না। আবার বেসরকারি কোনো হাসপাতালের সেবা ব্যয় বহনের সাধ্যও নেই। আবার সামর্থ্য যাদের আছে তারা করোনা সংকটের কারণে কাঙ্খিত মানের চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। ফলে একদিকে চিকিৎসা অন্যদিকে জীবিকা নিয়ে উভয় সংকটে পড়েছে এই শ্রেণির মানুষ।
এদিকে বাজারগুলোতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে অনেক। দুই মাস আগে গরিবের ডালভাতের উপকরণ মোটা মসুর ডাল যে দাম ছিল তার তুলনায় ১৫-২০ টাকা বেশী রাখা হচ্ছে। আর এ সময়ে মোটা চালের দামও ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেচে। এমনকি হাত ধোয়ার লিকুইড সাবান ও বিভিন্ন স্যানিটাইজারের দামও অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। ফলে জীবনও একদিকে যেমন মহামারীতে অন্যদিকে জীবিকাও।
সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস বলছে, করোনাভাইরাস মহামারীর আঘাতে অন্তত ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। আর বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ব্র্যাক ও পিপিআরসি বলছে, আগে দেশের ২০ শতাংশ মানুষ দরিদ্র ছিল। এখন সেটা আরও ৫ শতাংশ বেড়ে ২৫ শতাংশে উঠেছে। সামনের দিনে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করে সংস্থা দুুটি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশ এক কঠিন দুর্যোগের মধ্য দিয়ে চলছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো পৃথিবীতে এক অজানা শঙ্কা ভর করে চলেছে। এই মহামারী কবে নাগাদ পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে তা-ও এক রকম অনিশ্চিত। সব মিলিয়ে স্থবির হয়ে পড়েছে জীবনমান, ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাপন।