আইন-আদালত
রাজীবের পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ
দুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারানোর পর মারা যাওয়া কলেজছাত্র রাজীব হাসানের পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। স্বজন পরিবহন ও বিআরটিসি বাসকে সমান হারে এই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন।
রাজীবের পরিবার বলতে আছে দুই ভাই। তারা দুজনই মাদ্রাসা শিক্ষার্থী। তারাই পাবে ক্ষতিপূরণের টাকা।
আদেশে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ ও স্বজন পরিবহনের মালিককে ৫০ লাখ টাকা করে পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। আর এই টাকা রাজীবের খালা জাহানারা বেগম ও তাদের ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদের ছেলে কাস্টম কর্মকর্তা ওমর ফারুকের যৌথ অ্যাকাউন্টে জমা হবে। মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের মূল শাখায় ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি খোলার নির্দেশ দেন আদালত।
আদেশে আরও বলা হয়, ক্ষতিপূরণের ৫০ ভাগ টাকা পরিশোধ করে ২৫ জুনের মধ্যে এ সংক্রান্ত অগ্রগতির প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দিতে হবে।
২৫ জুন মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করে ওইদিন ক্ষতিপূরণের বাকি ৫০ শতাংশ টাকা কীভাবে দিতে হবে তার বিষয়ে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন আদালত।
গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ানবাজার এলাকায় বেপরোয়া প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয় স্বজন পরিবহন ও বিআরটিসির একটি বাস। এ সময় বিআরটিসি বাসে থাকা তিতুমির সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব হাসানের হাত কাটা পড়ে স্বজন পরিবহনের বাসের চাপায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ১৬ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজীব।
দুর্ঘটনার পর ৪ এপ্রিল রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনার পাশাপাশি রুল জারি করেন। রাজীবের চিকিৎসার খরচ স্বজন পরিবহন মালিক ও বিআরটিসিকে বহনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক কোটি টাকা দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়।
গতকাল সোমবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজীবের মারা যাওয়ার তথ্য হাইকোর্টকে জানান এই আইনজীবী। পরে আদালত বলেন, রাজীবের মৃত্যুতে পরিবারের যে ক্ষতি হয়েছে তাতে আমরা মর্মাহত। টাকা দিয়ে তো জীবনের মূল্য হয় না। কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বললেওতো আর জীবন ফিরে পাওয়া যাবে না। তবে পরিবারের বিষয়টি দেখতে হবে। পরে আদালত ক্ষতিপূরণের আদেশের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করে।
আইনজীবী আদালতকে জানান, রাজীবের বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড় ছিলেন। পড়ালেখার পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার টাইপ করে তিনি নিজের এবং ছোট দুই ভাইয়ের খরচ চালাতেন। ছোট দুই ভাই মেহেদি ও আবদুল্লাহ তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় সপ্তম ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে।
এ সময় আদালত বলেন, আমরা দুই ভাইয়ের জন্য ক্ষতিপূরণের আদেশ দেব। কিন্তু কার অনুকূলে দেব?
আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস বলেন, তাদের মামা ও খালা আছে। এ পর্যায়ে আদালত রাজীবের খালাকে মঙ্গলবার হাজির হয়ে একটি আবেদন করতে বলেন। আজ রাজীবের খালা ও মামা আদালতে হাজির ছিলেন।
রাজীবের মৃত্যুর পর তার দুই ভাই ১৪ বছর বয়সী আবদুল্লাহ হৃদয় এবং ১৫ বছর বয়সী মেহেদী হাসান বাপ্পীকে নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে চলচ্চিত্র নায়ক ও নির্মাতা অনন্ত জলিল ফেসবুকে দুই কিশোরের দায়িত্ব নেয়ার আগ্রহের কথা জানান। তবে তার কাছ থেকে আশানুরূপ সহযোগিতা মিলেনি বলে জানিয়েছেন রাজীবের খালা।
গত ১৮ এপ্রিল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন জানান, রাজীবের দুই ভাই যতদূর পড়তে চায়, সে ব্যবস্থা তারা করে দেবেন। পড়াশোনা শেষে চাকরির ব্যবস্থাও তারা করবেন। অবশ্য রাজীবের খালা জাহানারা বেগম তার দুই ভাগ্নেকে সরকারি তত্ত্বাবধানে পড়াশোনা করাতে চান না। যদিও তারা আর্থিক সহযোগিতা নিয়েছেন।