বরিশাল
শীতে নির্বাচনের হাওয়া : মহসিন মার্কেটে প্রতিদিন কোটিটাকার পোশাক বিক্রি
নগরীর পোশাকপল্লীতে জমে উঠেছে শীতবস্ত্রের বেচাকেনা। সব বয়সের মানুষের জন্য নানা রকম শীতবস্ত্রের পসরা সাজিয়েছেন ও বিক্রি করছেন দোকানিরা। এরই মধ্যে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলার ক্রেতারা এসব বস্ত্র কেনার জন্য মার্কেটগুলোতে ভীড় জমিয়েছে ।দম ফোলানো সময়ও হচ্ছে না এখানকার ব্যবসায়ীদের। বিক্রিও হচ্ছে দেদার। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চলতি বছর শীতে জাতীয় নির্বাচন থাকায় এবার ব্যবসা ভালো হবে।
কারণ গ্রাম থেকে শহরে নিজ নিজ দলের প্রার্থীর জন্য দিনরাত নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত থাকবে অধিকাংশ মানুষ। আর বেশিরভাগ সময় ঘরের বাইরে থাকতে হবে। আবার নির্বাচনের প্রার্থীরা ভোটারদের মন পেতে শীতবস্ত্র বিতরণ বাড়িয়ে দেবেন। তাই গরম কাপড়ের কদর বেড়ে যাবে। সব মিলিয়ে বিক্রিও ভালো হবে বলে আশা করছেন তারা। জানতে চাইলে হাজী মুহাম্মদ মহসিন মার্কেটের ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম মতবাদকে বলেন, এখানকার ব্যবসায়ীরা শীত বাজারে অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতেই ধুমছে পোশাক বিক্রি করছে। শীত পোশাক বিক্রির জন্য অধিক পেঁচাল পাড়তে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এবার শীত মৌসুমে মহসিন মার্কেটের পোশাকপল্লীতে প্রত্যেক দোকানে গড়ে প্রায় ১০ হাজার টাকার পোশাক বেচাবিক্রি হচ্ছে।এতে করে ১৭৯টি দোকানে গড়ে ১ কোটি টাকার বেশি শীত পোশাক বিক্রি হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে শীত এরকম ঝেকে বসলে, বিক্রি আরও বেড়ে যাবে। মঙ্গলবার সরেজমিন মহসিন মার্কেট খ্যাত পোশাকপল্লী ঘুরে দেখা গেছে, এখানকার প্রত্যেকটি দোকানে শীত পোশাক ধুমছে বিক্রি করছে দোকান মালিকরা। দেশের কারখানায় তৈরি ও দেশের বাইরের থেকে আমদানি করা শীত পোশাক ঝুলিয়ে ও থরে থরে সাজিয়ে রেখেছেন দোকানের কর্মচারীরা।
আবার স্তুপ আকারে এসব পোশাক সাজানো হয়েছে। ক্রেতা আসলে বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক দেখাচ্ছেন বলে জানান সুমন স্টোর্সের মালিক সুমন মিয়া। তামিম ফ্যাশনের মালিক মমিনুল ইসলাম বলেন, ক্রেতাদের পছন্দ হলেই কিনছেন। তাছাড়া মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, এখানে মেয়েদের কার্ডিগান ও ছেলেদের জন্য সোয়েটার, জ্যাকেট, ব্লেজার, ট্রাউজারসহ বিভিন্ন ধরনের গরম কাপড় পাওয়া যাচ্ছে। দাম ও মানে ভালো হওয়ায় বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে এসব বস্ত্র কিনছেন ক্রেতারা। মা-বাবার আর্শীবাদ দোকানের মালিক পরিমল দাস তমাল বলেন, রাতের দিকে ক্রেতাদের ভীড় জমে। বিক্রিও হচ্ছে দেদার।
আর অধিকাংশ ক্রেতারা নিজেদের পাশাপাশি পরিবারের জন্যও এবার বেশি করে কেনাকাটা করছেন। একই মার্কেটের ব্যবসায়ী মোঃ রুবেল বলেন, বরিশালে আস্তে আস্তে শীত জেঁকে বসতে শুরু করেছে। আর এ কারনে বেচাবিক্রি বেড়ে যাওয়ায় শীতের মধ্যেও দেরী করে দোকান বন্ধ করতে হচ্ছে। কাওছার ফ্যাশনের মালিক রাজু সিকদার বলেন, প্রতিদিন ১০/১২ হাজার টাকার শীত পোশাক বিক্রি হচ্ছে। মেহেন্দিগঞ্জের নূরে আলম পোশাক কিনতে এসে বলেন, ধর্মীয় উৎসব ব্যতীত শীতের সব ধরনের পোশাক এখান থেকেই কিনতে হয়। এবারও শীতকে ঘিরে পোশাক কিনতে এসেছেন।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, একই স্থানে দেশি ও বিদেশি অনেক ধরনের নতুন ও পুরাতন শীত পোশাক পাওয়া যায়। কাপড়ের মান অনেক ভালো। ডিজাইনও অনেক চমৎকার। আর এ কারনে সব বয়সের মানুষের জন্য সব ধরনের শীত পোশাক পাওয়া যায়। পরিবারের সদস্যরাও পোশাকগুলো পছন্দ করে। সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ থেকে আসা মোজাম্মেল মিয়া বলেন, পোশাকের মানের তুলনায় দাম কম হওয়ায় প্রতিবছর এখানে শীত পোশাক কিনতে আসেন।
পোশাকের সেলাই থেকে শুরু করে কাপড়ের মান ভালো হওয়ায় বেশি দামেও কিনেন।আর আমরাও আমাদের পছন্দ অনুযায়ী শীত পোশাক পেয়ে সন্তুষ্ট। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহসিন মার্কেটের পোশাকপল্লীতে বেচাবিক্রি বেড়ে যাওয়ার কারনে দোকানগুলোতে নতুন করে কর্মচারীও নেওয়া হয়েছে। নগরীর দক্ষিণ চকবাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারন সম্পাদক সালাম মল্লিক বলেন, নিম্নশ্রেণীর মানুষ এখান থেকে শীতের পোশাক কিনে থাকেন। তিনি আরও বলেন, দোকানগুলোতে গড়ে ৩০০০ হাজার থেকে ৫০০০ টাকার বেচাবিক্রি হচ্ছে। এতে করে দেখা যাচ্ছে এসব দোকানগুলোতে প্রতিদিন প্রায় ১০ লক্ষ টাকার বেচাবিক্রি হচ্ছে।