পিরোজপুর
স্বরূপকাঠির মানচিত্রে সন্ধ্যার গ্রাস
সন্ধ্যা নদীর অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হচ্ছে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার বসতঘর, বাগানবাড়ি, ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ জনপদ। প্রমত্তা সন্ধ্যার অব্যাহত ভাঙনে পাল্টে যাচ্ছে উপজেলার কৌরিখাড়া ও গনমান গ্রামের মানচিত্র। ভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে শান্তিহার কুনিয়ারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এরই মধ্যে বিদ্যালয়টির ৬২ শতাংশ জমির মধ্যে ৫৬ শতাংশই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে ভাঙনকবলিত নদীর পাড় থেকে এ বিদ্যালয় ভবনের দূরত্ব মাত্র ১০ থেকে ১৫ ফুট।
গত কয়েক দিনে নদীর পাড়ে (বিদ্যালয় ভবনের পাশে) বড় ধরনের ফাটল দেখা দেওয়ায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যেকোনো সময় বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবনটি নদীতে ভেঙে পড়তে পারে- এমন আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। নদীভাঙনের তীব্রতা দেখে বিদ্যালয় ছেড়ে চলে গেছে অনেক শিক্ষার্থী। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে মাত্র ২৪ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করলেও নিয়মিত উপস্থিত হচ্ছে ১৩ থেকে ১৫ জন। আর পাঠদানে নিয়োজিত আছেন চার শিক্ষক। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুম জানান, নদীভাঙনের কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের বেশির ভাগ অন্যত্র চলে গেছেন। সে কারণে বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা কম।
কয়েক বছর আগে দক্ষিণ ও উত্তর কৌরিখাড়া গ্রামের ভাঙনরোধে ব্লক ও জিওটেক্স ব্যাগে বালু ভর্তি করে ফেলা হয়। ফলে ওই এলাকায় ভাঙন থামলেও সন্ধ্যা নদীর দক্ষিণ দিকে ভাঙনের তীব্রতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ভাঙনের তীব্রতা বাড়ায় দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে দক্ষিণ কৌরিখাড়া ও গনমান গ্রামে অনন্ত ৪০টি বসতভিটা, কৌরিখাড়া লঞ্চঘাট এলাকার ১০টি দোকানসহ প্রায় ৫০ একর বাগানবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। দফায় দফায় ভাঙনের ফলে দক্ষিণ কৌরিখাড়া ও গনমান এলাকার সন্ধ্যাপাড়ের মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
সন্ধ্যা নদীর তীরে বসবাসকারী গনমান গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, ‘নদীভাঙনের কারণে বসতঘর স্থানান্তর করেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। জায়গাজমি না থাকায় শেষ আশ্রয়স্থল বসতভিটায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছি। এরই মধ্যে নদীভাঙনে কৌরিখাড়া ও গনমান গ্রাম দুটির দুই-তৃতীয়াংশ সন্ধ্যার গহ্বরে হারিয়ে গেছে। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে স্বরূপকাঠির মানচিত্র থেকে অচিরেই হারিয়ে যাবে ওই গ্রামগুলো।’
স্থানীয়রা জানান, আশির দশকের শেষ দিকে শুরু হয়ে এখনো অব্যাহত রয়েছে এ নদীর ভাঙন। অব্যাহত ভাঙনের ফলে উপজেলার গনমান, ছারছীনা, দক্ষিণ কৌরিখাড়া, উত্তর কৌরিখাড়া, শান্তিহার, কুনিয়ারী, ব্যাসকাঠি, জলাবাড়ী, পূর্ব সোহাগদল সেহাংগল এলাকার কয়েক হাজার একর ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ জনপদের অনেক বসতভিটা সন্ধ্যার গর্ভে হারিয়ে গেছে। নদীভাঙনের ফলে বারবার স্থান পরিবর্তন করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন অনেকে। ভিটেমাটি হারিয়ে অনেক পরিবার রাস্তার ওপর, কেউবা অন্যের বাগানে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। স্বরূপকাঠি-পিরোজপুর সড়কের কামারকাঠিতে নদীভাঙনের ফলে চরম ঝুঁকির মধ্যে চলাচল করছে যানবাহন। এদিকে সন্ধ্যা নদীর ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে কৌরিখাড়া বিসিক শিল্পনগরী, ইন্দুরহাট মিয়ারহাট বন্দর, কৌরিখাড়া ডাকঘরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইদ আহম্মদ জানান, স্বরূপকাঠিতে সন্ধ্যা নদীর ভাঙনরোধে ৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু করা হবে।
এদিকে গত ১৯ এপ্রিল স্বরূপকাঠি সন্ধ্যা নদীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক। এ সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নদীভাঙন-কবলিত এলাকার গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
দেশ রুপান্তর/ডেস্ক