ডায়াবেটিক রোগীর ত্বকের সমস্যা
ডায়াবেটিস সব থেকে দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া ক্রনিক ডিজিজ বা চলমান অসুখগুলোর অন্যতম। সারাবিশ্বে কয়েক মিলিয়ন মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এই রোগীর ৭৫ শতাংশই টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। অধিকাংশই অতিরিক্ত স্থূলকায় বা অবেসিটিতে ভোগেন। তাঁদের এক-তৃতীয়াংশ ভোগেন বিভিন্ন চর্ম বা ত্বকের সমস্যায়। কিছু ত্বকের সমস্যা বারবার হওয়ায় অনেক সময় ডায়াবেটিসের পূর্ব লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। তবে আশার কথা, বেশিরভাগ ত্বকের সমস্যা প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করলে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখলে দ্রুত ভালো হয়ে যায়। ডায়াবেটিক রোগীরা সাধারণত যেসব চর্ম সমস্যায় ভোগেন সেগুলো হলো-
১. ব্যাকটেরিয়াজনিত প্রদাহ
২. ডায়বেটিস র্যাশ
৩. ডায়াবেটিস ব্লিস্টার
৪. ডায়াবেটিক ডার্মোপ্যাথি
৫. ইরাপ্টিভ জ্যান্থোম্যাটসিস
৬. ছত্রাক বা ফাংগাসের সংক্রমণ
৭. নেকরোবায়োসিস লাইপয়ডিকা
৮. ত্বকের চুলকানি।
ত্বকের সমস্যা দেখা দিলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির উচিত দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। ত্বকের যে কোনো সমস্যা সামান্য অবহেলার কারণে ভবিষ্যতে বড় জটিলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
এবার আসুন ডায়াবেটিক রোগীর ত্বকের সমস্যা জেনে নিই।
১. ব্যাক্টেরিয়াজনিত প্রদাহ :ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়াজনিত ত্বকের প্রদাহে ভোগেন। যেমন- ফোড়া, নখের ইনফেকশন, চোখের পাপড়ির প্রদাহ, সেলুলাইটিস ইত্যাদি। এগুলোর কোনো একটি দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক অ্যান্টিবায়োটিক নেওয়া উত্তম।
২. ডায়াবেটিক র্যাশ :ডায়াবেটিক রোগীদের ত্বক অনেক শুস্ক থাকে। ধারণা করা হয়, তাদের ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে ত্বক বেশি শুস্ক থাকে। এই শুস্ক ত্বকে লালচে র্যাশ উঠতে দেখা যায়।
৩. ডায়াবেটিক ব্লিস্টার :গরমকালে ডায়াবেটিস রোগীদের ত্বকে পানিমুখী ফুসকুড়ি বা ব্লিস্টার উঠতে দেখা যায়। অনেক সময় এসব ব্লিস্টারে পুঁজ জমে ক্ষত সৃষ্ট হতে পারে।
৪. ডায়াবেটিক ডার্মোপ্যাথি :অনেক ডায়াবেটিক রোগীর পায়ে কিছু কালো দাগ পড়তে দেখা যায়। আসলে ডায়াবেটিসের কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির পায়ের ছোট ছোট রক্তনালিতে রক্তপ্রবাহে বিঘ্ন ঘটে। ফলে রক্তের জলীয় অংশ রক্তনালি থেকে বের হয়ে ত্বকের ঠিক নিচে জমা হয়। যার কারণে কিছু দাগ সৃষ্টি হয়। একেই বলা হয় ডায়াবেটিক ডার্মোপ্যাথি।
৫. ইরাপ্টিভ জান্থোম্যাটসিস :ইরাপ্টিভ জ্যান্থোমা সাধারণত অনেক দিন ধরে রক্তের গল্গুকোজ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হয়ে থাকে। এটি সাধারণত এক ধরনের হলুদাভ, শক্ত গোটা, যা হাত-পা, পিঠে হতে পারে। রোগীর কোলেস্টেরল বেশি থাকলেও এগুলো হতে দেখা যায়।
৬. ছত্রাক বা ফাংগাসের সংক্রমণ :ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রায়শ ছত্রাক বা দাউদে আক্রান্ত হতে পারেন। যেমন ক্যান্ডিডা, রিং ওয়ার্ম বা ইস্ট নামক ছত্রাকের সংক্রমণ বেশি দেখা যায়।
৭. নেকরোবায়োসিস লাইপয়ডিকা :এটি ডায়াবেটিক রোগীদের একটি বিশেষ ধরনের ত্বকের ক্ষত। এটা সাধারণত মহিলাদের বেশি হয়। এগুলো পায়ে বেশি হতে দেখা যায়। এগুলো সাধারণত লালচে বাদামি রঙের এবং ছোট ছোট গুটি আকারের হয়ে থাকে।
৮. ত্বকের চুলকানি :ধারণা করা হয়, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত সঞ্চালন অনেক শ্নথ হয়ে যায়। ফলে ত্বকের শুস্কতা বাড়তে থাকে। এই শুস্কতার কারণে ত্বকে চুলকানি বাড়তে পারে।
৯. ডায়াবেটিস নিউরোপ্যাথি :ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্রের কর্মক্ষমতা কমে যায়। ফলে ত্বকের অনুভূতি হ্রাস পায়। ত্বকে বিভিন্ন ধরনের আলসার বা ক্ষত দেখা দিতে পারে। অনেক সময় ব্যথার অনুভূতি হ্রাস পাওয়ার কারণে রোগী ব্যথা বা আঘাতের কথাও বলতে পারে না।
ত্বকের শুস্কতার কারণে বেশিরভাগ ডায়াবেটিস রোগীর সমস্যা হয়ে থাকে। এ জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা। তাহলে সহজেই ত্বকের এসব উপসর্গ থেকে মুক্ত থাকা যায়।
[বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ]
এএজে