ইউপি চেয়ারম্যানকে জুতার মালা দিয়ে বাজার ঘুরালেন বিক্ষুদ্ধ জনতা
ভোলার চরফ্যাশনের আবুবকরপুর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ জমাদারকে জুতার মালা গলায় দিয়ে স্থানীয় রৌদেরহাট বাজারে ঘুরালেন বিক্ষুব্ধ জনতা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে তার ওই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মারধরের পর স্থানীয় বাজারে নিয়ে জুতার মালা পরিয়ে ঘুরানো হয়।
খবর পেয়ে নৌ-বাহীনির সদস্যরা তাকে বিক্ষুদ্ধ জানতার হাত থেকে উদ্ধার করে দুলারহাট থানায় সোপর্দ করেন। সিরাজ জামাদার ওই ইউনিয়নের তিন বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন।
বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতার আমলে সরকারের ছত্রছায়ায় তিনি তিনবার চেয়ারম্যান নির্বিাচিত হন। ক্ষমতার দপটে তিনি ওই ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের ওপর জুলম, চাঁদাবাজি ও জমিদখল ও সালিশের নামে সাধারণ মানুষের ওপর অমানষিক নির্যাতন করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ নানান অপকর্মে লিপ্ত ছিলেন।
গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ত্যাগের পর গা-ঢাকা দেন চেয়ারম্যান সিরাজ জমাদার। পরিবেশ কিছুটা শান্ত হলে তিনি রাতের আধারে নিজ বাড়িতে এসে আত্মগোপনে ছিলেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি বাড়িতে আত্মগোপনে আছেন এমন খবরের ভিত্তিতে বিক্ষুব্ধ জনতা তার বাড়ি ঘেরাও করে মারধর করেন। পরে তাকে জুতার মালা গালায় দিয়ে স্থানীয় রৌদের হাটে ঘুরান এবং বিক্ষোভ করেন।
স্থানীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মাইনুল ইসলাম জিহাদী জানান, তিনি এবং তার মসজিদ কমিটির সদস্যরা ওয়াজ মাহফিলের জন্য চাঁদা আদায় করতে স্থানীয় রৌদ্রের হাটে গেলে চেয়ারম্যান সিরাজ জামাদার তাকে চাঁদা তুলতে বাধা দেন। তার বাধা না মানলে চেয়াম্যানসহ তার দলবল তাকে ওই বাজারে প্রকাশ্য হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করেন। এ ঘটনায় তিনি ওই দিন থানায় অভিযোগ জানাতে গেলেও মামলা নেয়নি পুলিশ।
এছাড়াও তিনি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে একাধিক আলেম দের মারধর করেছেন। ভয়ে আতংকে অনেকেই তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারেননি। ওই ইউনিয়নের সামসুদ্দিন নামের একজন ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক জানান, তার পারিবারিক জমি সংক্রন্ত বিরোধ নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে দারস্ত হলে তিনি তার কাছে মোটা অংকের টাকা দাবী করেন।
তার দাবীকৃত টাকা দিতে অপারগতা জানালে তিনি তাকে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে আটক করে মারধর করেন। এমনি ভাবে চেয়ারম্যান সিরাজ জামাদারের নির্যাতনের শিকার ওই ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে চেয়ারম্যান হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ইউপি সদস্য জানান, আওয়ামী লীগ মনোনিত তিন বারের নির্বাচিত চেয়াম্যান আওয়ামীগের ক্ষততার আমলে তিনি ইউপি সদস্যদের জিম্মি করে রেখে ইউনিয়ন পরিষদের জেলেদের নামের সরকারী বরাদ্দের শত শত টন চাল আত্মসত করে বিক্রি করেছেন।
ইউপি সদস্যরা প্রতিবাদ জানালে একাধিক ইউপি সদস্য তার হাতে লঞ্চিত হয়েছেন। তার ক্ষমতার দপটে কেউই প্রতিবাদ করতে পারেননি। তিনি তার ক্ষমতার দাপটে ইউপি সদস্যদের জিম্মি করে তিনি ইউনিয়ন পরিষদটাকে একটি দূর্ণীতির আখড়া তৈরি করেছেন।
দুলাহাট থানার ওসি মাকসুদুর রহমান মুরাদ জানান, খবর পেয়ে জনতার হাতে অবরুদ্ধ চেয়ারম্যানকে উদ্ধার করে নৌ-বাহিনীর সদস্যরা থানায় সোপর্দ করেছেন। ওই চেয়াম্যানের বিরুদ্ধে একাধিক ভোক্তভোগীর মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।
এইচকেআর