বরিশালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ১২৭ শিশু ভর্তি, একজনের মৃত্যু

গত একসপ্তাহ ধরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে বরগুনা জেলার বেতাগী থেকে আসা মো.আবরার হোসেন (২) বছরের এক শিশু। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিশুটি নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়েছেন।
শিশুটির মা রিমা বেগম বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারনে তার শিশু আববার হোসেনের ঠান্ডা লাগে। স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ খাওয়ানোর পর না উন্নতি না হওয়ায় বেতাগী উপজেলা হাসপাতালে গত সপ্তাহের বুধবার ভর্তি করেন। শুক্রবার সেখান থেকে শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে এই হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের-২ ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছে শিশু আবরার হোসেন।
শুধু আববার হোসেনই নয় ঝালকাঠির রাজারপুর উপজেলার বাসিন্দা মো. খোরশেদ আলম, পটুয়াখালীর দশমিনা থেকে কুলসুম বেগমের মতো অনেকেই তাদের শিশু সন্তানের নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি, অ্যাজমা শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে একই ওয়ার্ডে ভর্তি করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশু ওয়ার্ডে সরেজমিনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
শিশু ওয়ার্ডের তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১১ নভেম্বর মঙ্গলবার একদিনেই শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ৭০ জন শিশু রোগী। তবে তাদের ভিতরে ১৮ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে, তবে বাকিরা এখনো চিকিৎসাধীন। পরবর্তী দিনগুলোতেও রোগীর চাপ কমেনি। বুধবার ও বৃহস্পতিবার মিলিয়ে মোট ভর্তি হয়েছে আরও ৫৭ জন শিশু, যাদের মধ্যে বেশিরভাগেরই উপসর্গ ছিল উচ্চ জ্বর, কাশি, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট। দুর্ভাগ্যবশত, এ সময়ের মধ্যে একজন শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
চিকিৎসকরা বলছেন, গরম থেকে শীতের আগমন-হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তনের এ সময়টিকে বলা হয় ‘ক্রিটিক্যাল পিরিয়ড’। এ সময়ে সামান্য অসতর্কতায় বড় ধরনের শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ বা নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। সে কারণে এখনই শীতের প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
সরেজমিনে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বর্তমানে দ্বিগুণ শিশু রোগী ভর্তি রয়েছে। বেডের সংকট থাকায় অনেক শিশু মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে। মাত্র আড়াই দিনে (১১ নভেম্বর মঙ্গলবার থেকে ১৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ১২৭ জন শিশু রোগী, যা চলতি মাসের অন্যান্য দিনের তুলনায় দ্বিগুণ।
এদিকে বেডের চেয়ে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি হওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে এ পরিস্থিতিতে চিকিৎসা সেবায় গতি এবং অতিরিক্ত বেড ব্যবহারের ব্যবস্থা করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে আবহাওয়ার পরিবর্তন মেনে বরিশালেও তাপমাত্রার পারদ ক্রমাগত নামছে। মাসের শুরুতে মধ্য কার্তিকে বরিশালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যেখানে ২৫.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল সেখানে বৃহস্পতিবার সকালে তা স্বভাবিকের প্রায় ২ ডিগ্রি নিচে, ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক মো. আনিচুর রহমান বলেন, ধীরে ধীরে তাপমাত্রা কমে শীতের প্রকোপ বাড়বে। পুরোপুরি শীত অনূভূতি হবে ডিসেম্বর মাস থেকে।
শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহকারী রেজিষ্টার মারজানা আফরিন বলেন, সকালে ঠাণ্ডা, দুপুরে গরম, আবার রাতে ঠাণ্ডা, এমন আবহাওয়ায় সতর্কভাবে চলতে হয়। হঠাৎ গরম থেকে শীতে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। সিভিয়ার নিউমোনিয়া হলে মৃত্যু ঝুঁকিও বেশি, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে।
এই সময়ে করণীয় নিয়ে তিনি বলেন, শিশুদের পোশাকের ক্ষেত্রে সকালে গরম জামা পরানো, আবার দুপুরে খেলাধুলার সময় হালকা-পাতলা পোশাক পরানো দরকার। ঠাণ্ডা লাগলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।