মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে রোগীকে শেবাচিম থেকে বেসরকারি হাসপাতালে রেফার

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি ওয়ার্ডের চিকিৎসক এ.কে.এম মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে রোগী মারা যাওয়ার ভয় দেখিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী রেফার (স্থানান্তর) করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর প্রতিবাদে বিচার চেয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী রোগীর বাবা। এই ঘটনায় শেবাচিমের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডাঃ নাজমুল হককে প্রধান করে একটি তদন্ত বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
শেবাচিমের পরিচালক বরাবর গত ২২ আগস্ট লিখিত সেই অভিযোগে ভুক্তভোগী রোগীর বাবা রাসেল হোসেন বলেন, "গত ১৬ আগস্ট আমার অসুস্থ মেয়ে শুকরিয়া (০৯) কে চিকিৎসার জন্য আপনার আওতাধীন হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করাই। সেখান থেকে তাকে অপারেশনের জন্য শিশু সার্জারি ওয়ার্ডে প্রেরণ করা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ এ.কে.এম মিজানুর রহমান ১৫ দিন আগের করা রিপোর্ট এবং ১৬ আগস্টের বর্তমান রিপোর্ট দেখে বলেন এই রিপোর্ট চলবে না। আবিদ ইসলামিয়া ডায়াগনস্টিক ল্যাব ও ডাঃ নজরুল ইসলামের আলট্রাসান রিপোর্ট থেকে টেস্ট করিয়ে আনতে হবে। তার কথা মতো টেস্ট কারানোর পর তিনি জানান পেটের নাড়িতে প্যাঁচ লেগেছে। রোগীকে জরুরী ভিত্তিতে অপারেশন করাতে হবে, নয়তো রোগী বাঁচবে না। এই অপারেশন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হবে না। হেমায়েত উদ্দিন ডায়াবেটিক হাসপাতালে অপারেশন করাতে হবে। টাকা লাগবে ৩০ হাজার, বাকি অন্যান্য খরচ আপনার। অপারেশন করার পর রোগী বাঁচবে কিনা তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। "
লিখিত ওই অভিযোগে আরো বলা হয়, ‘‘সরকারি হাসপাতালের একজন চিকিৎসকের এমন আচরণে আমি হতবাক। আমরা গরিব মানুষ। আর্থিক অনটনের কারণেই কম খরচে ভালো সেবা পাওয়ার আশায় সরকারি হাসপাতালে গিয়েছিলাম।
সেখানে চিকিৎসক কর্তৃক আমাকে আশ্বস্ত করার পরিবর্তে আমার সন্তান (রোগী) মারা যাওয়ার ভয় দেখানো ও বেসরকারি হাসপাতালের নাম উল্লেখ করে পরীক্ষা-নীরিক্ষার জন্য পাঠানো কতটা যৌক্তিক? আমার প্রশ্ন এই- হাসপাতালে কি এমন রোগীর অপারেশন সম্ভব নয়? "
অভিযোগের ব্যাপারে চিকিৎসক এ. কে. এম মিজানুর রহমান মতবাদকে জানান, আবিদ ইসলামিয়া ডায়াগনস্টিক ল্যাবের রিপোর্ট ভালো তাই সেখানে টেস্ট করাতে বলেছিলাম। আমি নিজেও সেখানে টেস্ট করাই। এমারজেন্সি রোগীর অপারেশন দরকার হলে অনেক সময় সিডিউল না থাকায় শেবাচিমে অপারেশন করা সম্ভব হয় না। তাই হেমায়েত উদ্দিন ডায়াবেটিক হাসপাতালে অপারেশন করার জন্য বলেছি। সেখানে আমি নিজেই অপারেশন করি। মেডিকেলে শিশু সার্জারির জন্য সপ্তাহে একদিন শনিবার রুটিন ওটি (অপারেশন)। আবার সকাল ৮ টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত সিনিয়র চিকিৎসকরা থাকেন। এরপর যারা থাকেন তারা ইন্টার্ন চিকিৎসক। তখন তো অপারেশন বন্ধ থাকে। আবার বিকালে অজ্ঞান (অ্যানেসথেসিয়া) করার ডাক্তার থাকেন মাত্র একজন। সেই একজনকেই গাইনি, অর্থোপেডিক, সার্জারি সব বিভাগ দেখতে হয়। তাই রুটিন ওটির বাইরে অপারেশন করার সুযোগ নেই। এজন্য প্রাইভেটে অপারেশন করার জন্য বলেছি।
শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ এইচ এম সাইফুল ইসলাম মতবাদকে জানান, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত হয়েছি। সার্জারি বিভাগের প্রধান ডাঃ নাজমুল হককে নিয়ে একটি তদন্ত বোর্ড গঠন করা।
এমবি