‘মোবাইল এডিকটেড হয়ে পড়েছিলাম’

করোনার কারনে যখন প্রথম স্কুল বন্ধ দিয়েছিল তখন ভালো লাগতো। কিন্তু দিন যত গেলো ততই বোর (বিরক্ত) হচ্ছিলাম। সময় কিছুতেই কাটছিল না। দিনে দিনে মোবাইল এডিক্টেড হয়ে উঠি। স্কুল বন্ধের ওই জীবনটা আসলে আমাদের জন্য কোন জীবন না। কথাগুলো বলছিলো বরিশাল কলেজিয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের দশম শ্রেণীর ছাত্র সিফাত উল্লাহ। তিনি বলেন, আসক্তির সেই সময়টা হয়তো এখন কেটে যাবে। আমরা একটি সুন্দর জীবনে ঢুকতে পারবো। আজকে স্কুলে এসেছি ঠিক সময়েই। স্যারেরা বলেছেন, প্রথম দিন ভারী কোন লেখাপড়া হবে না। গান-কবিতা-কৌতুক বলার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে।
শুধু সিফাত উল্লাহ নয় আলেকান্দা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মহুয়া আক্তার রিমাও জানালেন কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় একটি বাজে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে সময় কেটেছে। ঘর থেকে বের হতে না পারা, বন্ধুদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ বন্ধ। বন্ধের দেড় বছর ছিল অসহ্য। রিমা বলেন, গত এক মাসে আগে এ্যাসাইনমেন্ট শুরু হয়। তখন তা নিয়ে কিছুটা সময় ব্যয় হয়েছে। অথচ তার আগে আমরা বই স্পর্শ করিনি। সারাক্ষণ মোবাইলে ফ্রি-ফায়ার গেইম খেলতাম। বাসায় একটি বন্দী দশার মধ্যে থাকতাম।
সিফাত উল্লাহর বন্ধু লাবিদ হাসান জয় বলেন, এতদিন লেখাপড়া না করায় নিজেদের মধ্যে একধরণের জড়তা সৃষ্টি হয়েছে। বই ধরার পর মনে হচ্ছে অচেনা কিছু। পরিচিত বই এখন একেবারে নতুন নতুন মনে হচ্ছে। এই শিক্ষার্থী বলেন, দেড় বছরের শিক্ষার ক্ষতি একদিনেতো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব না; তবে আমরা যদি চাই তাহলে সম্ভব।
সরকারি ব্রজমোহন কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র শাহেদ রহমান শাফি বলেন, স্কুল পাস করার দেড় বছর পর আজ কলেজে আসলাম। যখন স্কুল বন্ধ হয়ে যায়, তখন মনে মনে অনেক চাইতাম যেন কলেজ চালু হয়। সেই চাওয়াটা আজ পূরণ হলো। আজকে কলেজে নবীন বরণ ছিল। আমাদের বরণ করে নিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। ভালো লাগছে, দেড় বছর পর অনেকের সাথে পরিচিত হতে পেরে।
মথুরানাথ পাবলিক স্কুলের নবম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক নুসরাত জাহান বলেন, করোনার এই ১৭/১৮ মাস একটি অন্ধকার সময় আমাদের সন্তানদের জীবনে। আমার ছেলেটা মোবাইলের ওপর এতবেশি আসক্ত হয়ে পড়েছিল যে মোবাইলের ইন্টারনেট মেগাবাইট কিনতে কিনতে আমি পাগল হয়ে যেতাম। কিন্তু উপায়ও ছিল না কিছুই। ছেলেকে ঘরে রাখতে, করোনা থেকে বাঁচাতে সন্তানের ক্ষতি হলেও তার মোবাইল এডিকশনকে সমর্থন করতে হয়েছে।
অমৃত লাল দে কলেজের এক অভিভাবক বলেন, আর কখনো যেন এমন সময় আমাদের জীবনে না আসে। করোনার চেয়ে বড় ভয়াবহ ছিল আমার একাদশ শ্রেণীতে পড়–য়া মেয়েটাকে সামলে রাখতে। ওদের দোষ দিয়েও লাভ নেই, করারতো কিছুই ছিল না। একজন মানুষ কতক্ষণ পারে এক ঘরে থাকতে। তিনি জানান, মোবাইল এডিকশন থেকে দুইবার আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল আমার মেয়ে। এখন কলেজ খুলেছে। আল্লাহ আমাকে সেই ভয়ংকর অভিজ্ঞতা থেকে বের করে আনবেন সেই দোয়া করি। এই অভিভাবক বলেন, মোবাইল এডিকশন করোনার চেয়েও ভয়াবহ। করোনা হলে হয়তো আক্রান্ত ব্যক্তিতে মেরে ফেলে। কিন্তু মোবাইল এডিকশন পুরো পরিবারকে মেরে ফেলে। লকডাউনে সেই এডিকশন সহ্য করতে হয়েছে।
এমবি