ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

Motobad news
শিরোনাম

ইটভাটা মালিকদের থাবায় বন‍্যানিয়ন্ত্রন বাঁধ বিলীনের আশঙ্কা!

ইটভাটা মালিকদের থাবায় বন‍্যানিয়ন্ত্রন বাঁধ বিলীনের আশঙ্কা!
ইটভাটা মালিকদের থাবায় বন‍্যানিয়ন্ত্রন বাঁধ বিলীনের আশঙ্কা
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

ইট তৈরির মৌসুম শুরুর আগেই বরগুনায় ইটভাটা মালিকরা ইট তৈরির জন্য নদীর তীরের মাটি কেটে নিচ্ছেন।বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের খুব কাছ থেকে মাটি কেটে নেয়ার  কারণে হুমকি মুখে পরেছে বাধঁ।একই সাথে নদীর চরাঞ্চলের কৃষি জমি হারিয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতিবছর ইট তৈরি মৌসুম শুরু হলে ভাটা মালিক নদীর চর-তীর থেকে মাটি কেটে নিয়ে যায়।কিন্তু এর বছর মৌসুম শুরুর আগেই ভাটা মালিকরা নদীর তীর থেকে মাটি  কাটছেন।বাঁধের সংলগ্ন নদীর তীর থেকে মাটি কেটে নেয়ার কারণে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে পরেছে।সিডরের পর থেকেই আমাদের এসব এলাকায় প্রতি মাসে দুর্যোগ হানা দেয়।এভাবে নদীর চর থেকে মাটি কাটলে ২-১ বছরের মধ্যে বেড়িবাঁধ নদীতে বিলীন হয়ে যাবে আশঙ্কা করছে এই বাসিন্দারা ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা কাযালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী কাইছার আলম বলেন, নদীর  থেকে মাটি কাটা যাবেন।বাঁধ ঝুকিতে রেখে নদীর তীর থেকে মাটি কাটলে আইনত অপরাধ। একই কথা  জানান পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল আঞ্চলিক কাযালয়ের কর্মকর্তারা ।  

জেলা ইটভাটা মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রায় ৫০টির মতো ইটভাটা রয়েছে।এসব ভাটার মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ ইটভাটার উৎপাদনের অনুমতি পত্র নেই বলে জানিয়েছেন ভাটা মালিকরা।সরকারি নিয়ম নীতি অনুযায়ী এবং সরকারি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এসব ইটভাটায় ইট তৈরি করা হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের বাইনটকি এলাকায় প্রমত্তা বিষখালী নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা ছয়টি ইটভাটায় মৌসুম শুরুর আগেই ইট তৈরীর জন্য ভাটা মালিকরা নদী চরে-তীর থেকে মাটি কাটে ভাটা অব্যাহত রেখেছেন।নদীর তীর থেকে মাটি কাটার কারণে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নদীতে ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে।

হরিদ্রবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা মো.শাহীন বলেন, আমাদের এই এলাকা ভাঙন কবলীত এলাকা, তার উপর ইটভাটা মালিক গোলাম মোস্তাফা ও শাহাদাত হোসেনসহ  অন্য ভাটা মালিকরা যে ভাবে নদীর তীর থেকে মাটি কেটে নিচ্ছেন এতে নদীর ভাঙনের তীব্রতা আরো বেড়ে যাবে।যেভাবে ইট তৈরির জন্য চর মাটি কাটা হচ্ছে তাতে দুই-এক বছরে মধ্যে এই এলাকার নদীর চর শেষ হয়ে যাবে,এর ফলে বাঁধ নদীতে ভেঙে বিলীন হয়ে যাবে।

আরএসবি ইটভাটার শ্রমিক আল আমিন বলেন, আমি এই ভাটায় দশ বছরের বেশি সময় ধরে শ্রমিকের কাজ করছি।ভাটাসংলগ্ন নদীতে জেগে ওঠা চরে ইট–সুরকি পেলে ভাটায় আয়তন বাড়ানো হচ্ছে।এক দিকে ইট  তৈরির জন্য নদীর তীরের মাটি কাটা হচ্ছে,অন্য দিকে নদীতে  জেগে  ওঠা  চরদখল করছেন।

জানতে চাইলে আরএসবি ব্রিকসের মালিক গোলাম মোস্তফা কিসলু বলেন, যে জায়গা দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে সেই জায়গা আমার রেকর্ড করা সম্পত্তি।এখানে নদীর কোনো জমি নাই,নদীর তীরের মাটি কাটার তথ্য সত্য না।

আল মামুন এন্টারপ্রাইজ  ব্রিকসের মালিক বরগুনা পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, আমি কোনো নদীর চর-তীর থেকে মাটি কাটিনি। যেকান থেকে মাটি কাটা হয়েছে তা আমার জমি । নদী বা সরকারি কোনো  জমি  নেই  এখানে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিএ) বরগুনা নদীবন্দরের কর্মকর্তা মামুন অর রশিদ বলেন, বাইনচটকি এলাকার  কালির চর পযন্ত ছয়টি  ইটভাটা রয়েছে।ইটপ্রস্তুত  মৌসুম  শুরুর আগেই  ভাটা মালিকরা নদীর চর এর মাটি কেটে নিচ্ছেন।ভাটা সম্প্রসারণের জন্য নদীতে জেগে ওঠা চর দখল করার পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে।

বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, নদীর চর থেকে যদি ইটভাটা মালিক  ইট  তৈরীর জন্য মাটিতে কেটে থাকে এবং চর দখল করে ইটভাটা  গড়ে তোলার কারণে যদি নদীর গতিপথ পরিবর্তন  হয় তা হলে এসব ইটভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

সর্বশেষ