ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

Motobad news
শিরোনাম

হঠাৎ শেবাচিম হাসপাতাল থেকে উধাও করোনার ইনজেকশন

হঠাৎ শেবাচিম হাসপাতাল থেকে উধাও করোনার ইনজেকশন
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার প্রধান ওষুধ এন্টিভাইরাল ইনজেকশন রেমডেসিভার ও এন্টিবায়োটিক মেরোপেন। এর একটি দৈনিক তিনবার এবং অপরটি একবার করে করোনা আক্রান্ত রোগীদের শরীরে পুশ করতে হচ্ছে।
তবে হঠাৎ করেই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল থেকে উধাও হয়ে গেছে গরীবের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে থাকা এই ইনজেকশন দুটি। ফলে গত এক সপ্তাহ পূর্বে থেকে করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীদের মাঝে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না ইনজেকশন দুটি।
সেই সুযোগে দুটি ইনজেকশনের কৃত্তিম সংকট দেখিয়ে মূল্য বাড়িয়ে ফেলেছে কয়েকগুন। ফলে ইতিপূর্বে বিনামূল্যে পাওয়া ইনজেকশন দুটির এটি সর্বনি¤œ সাড়ে চার থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার এবং অপরটি ১৩শ থেকে ১৫শত টাকায় কিনতে হচ্ছে।
অভিযোগ উঠেছে সরকারি হাসপাতালে ইনজেকশন সরবরাহ না থাকার খবরে অসাধু ব্যবসায়ীরা করোনা রোগীদের জন্য বাধ্যতামূলক এদুটি ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। ফলে ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি ইনজেকশন। তবে সরকারিভাবে এ এন্টিভাইরাল ইনজেকশন সরবরাহের তেমন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
 আবার ইনজেকশন না থাকার বিষয়টি রহস্যজনক কারণেই এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করছেন হাসপাতালের ওষুধ স্টোর সংশ্লিষ্টরা। তবে হাসপাতাল পরিচালক বলছেন, ‘ফুড়িয়ে যাওয়া ওই দুটি ইনজেকশন সরবরাহের জন্য ঢাকায় চাহিদা পাঠানো হয়েছে। তবে কবেনাগাদ এ ইনজেকশন পাওয়া যাবে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিদিনই হু হু করে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এর মধ্যে শুধুমাত্র গত ২৪ ঘন্টায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের আরটি-পিসিআর ল্যাবে ১৭৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১০৪ জন করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে।
 এদিকে, ‘আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগ রোগীই চিকিৎসা নিচ্ছেন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত এ ইউনিটে ১৫০ জন রোগীর মধ্যে ৫৩ জন করোনা পজেটিভ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন করোনা ওয়ার্ডে।
করোনা ওয়ার্ড থেকে জানানো হয়েছে, ‘হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীদের প্রধান চিকিৎসা হিসেবে এন্টিভাইরাল ইনজেকশন রেমডেসিভার ও ইন্টিবায়োটিক মেরোপেন ইনজেকশন বাধ্যতামূলকভাবে দেয়া হচ্ছে। ব্যায়বহুল এই ইনজেকশন দুটি ইতিপূর্বে হাসপাতালের কেন্দ্রীয় ওষুধ স্টোর থেকেই সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু গত এক সপ্তাহ’র বেশি সময় ধরে হাসপাতালে এ দুটি ইনজেকশন সরবরাহ নেই। ফলে রোগীদের বারতি টাকায় বাহির থেকে কিনে আনতে হচ্ছে।
 করোনা আইসিইউতে চিকিৎসাধীন বরগুনার আমতলি উপজেলার বাসিন্দা শামীম তালুকদারের স্বজন লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত পাঁচ দিন পূর্বে করোনা পজেটিভ অবস্থায় তার বড় ভাইকে এ হাসপাতালে ভর্তি করান। চিকিৎসা হিসেবে প্রতি ২৪ ঘন্টায় তিনটি মেরোপেন এবং একটি রেমডেসিভার ইনজেকশন রোগীর শরীরে পুশ করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে এই ওষুধ দেয়া হচ্ছে না। প্রতিটি ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে। প্রতিটি রেমডেসিভার ইনজেকশন সাড়ে চার থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। পাশাপাশি এন্টিবায়োটিক মেরোপেন ইনজেকশন ১৩শ থেকে দেড় হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। গত পাঁচ দিন ধরে এক এক সময় এক এক দামে ওই ওষুধ কিনতে গিয়ে সর্বস্ব শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। শুধু লিয়াকত আলীই নন, হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড এবং আইসিইউতে চিকিৎসাধীন একাধিক রোগীই এমনটি দাবি করেছেন।
 করোনা ওয়ার্ডের একজন সেবিকা জানিয়েছেন, ‘ইতিপূর্বে এ ওষুধ দুটি হাসপাতাল থেকেই সরবরাহ দেয়া হতো। কিন্তু সরবরাহ না থাকায় কয়েক দিন ধরে রোগীদের ওই ইনজেকশন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমরা প্রতিদিনই হাসপাতালের কেন্দ্রীয় স্টোরে দুটি ইনজেকশনের চাহিদা দিচ্ছি। কিন্তু সরবরাহ না থাকায় ইনজেকশন পাচ্ছিনা বিধায় রোগীর স্বজনদের বাইরে থেকেই কিনতে হচ্ছে।
 
এদিকে, দুটি ইনজেকশন সংকটের বিষয় নিয়ে কথা হয় হাসপাতালের কেন্দ্রীয় স্টোরের ইনচার্জ এর সহকারী আকবর এর সাথে। ইনচার্জের অনুপস্থিতিতে তিনি এ বিষয়ে কোন তথ্য দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। তবে তিনি বলেন, ‘ইতিপূর্বে প্রয়োজন না হওয়ায় আমাদের স্টোরে এ ইনজেকশন দুটি মজুদ ছিলো। হঠাৎ করে করোনা আক্রান্ত রোগী বেড়ে যাওয়ায় মজুদ থাকা সব ওষুধ শেষ হয়ে গেছে।
 কি পরিমান এবং সবশেষ কবে এ ইনজেকশন দুটি ফুরিয়ে গেছে সে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘আমরা ইনজেকশন দুটির চাহিদাপত্র এরি মধ্যে ঢাকায় পাঠিয়েছি। এর বাইরে আর কোন তথ্য না দিয়ে স্টোর অফিসার এর সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি। তবে স্টোর অফিসার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।
 অপরদিকে, ‘অপরদিকে হাসপাতালের সামনে বিভিন্ন ফার্মেসিতে যোগাযোগ করে জানা গেছে, ‘বর্তমানে ইনসেপ্টা নামক একটি কোম্পানি করোনা ভাইরাসের এন্টিভাইরাল ওই ইনজেকশন সরবরাহ দিচ্ছে। সংকটের কারণে তারা ওষুধের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এ কারণে ফার্মেসিতে মজুদ থাকা ওষুধ চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
 হাসপাতালের সামনে খান মেডিকেল হলে আলাপকালে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার জানিয়েছেন, ‘ইতিপূর্বে ইন্টিভাইরাল ইনজেকশনটির দাম সাড়ে চার হাজার টাকা ছিলো। এখন তা কমিয়ে সাড়ে তিন হাজার করা হয়েছে। তবে পরিচিতজনদের কাছ থেকে আরও কমিয়ে ২৮শত টাকা পর্যন্ত রাখা যাবে বলে জানিয়েছেন ওই দোকানি।
 অপরদিকে, ‘ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যাল এর বরিশাল ডিপোর একটি দায়িত্বশীল সূত্র নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘হঠাৎ করে ইনজেকশনটির চাহিদা বেড়ে গেছে। ফলে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ওষুধটি মজুদ থাকলেও শুক্রবারের মধ্যে ডিপোতেও ইনজেকশনের সংকট সৃষ্টি হতে পারে জানিয়ে ওই বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, ‘ওষুধের গায়ে মূল্য একরকম লেখা থাকলেও কোম্পানি থেকে ফার্মেসিগুলোতে পাইকারী সর্বনি¤œ ১৮শ থেকে ২২ শত টাকায় এই এন্টিভাইরাল ইনজেকশনটি বিক্রি করা হচ্ছে। এখন ফার্মেসিতে কত টাকা বিক্রি করছে সেটা তাদের ব্যাপার।
 এ প্রসঙ্গে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার এন্টিভাইরাল ইনজেকশন এবং এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন দুটি শেষ হওয়ার বিষয়টি আমি অবগত। এরি মধ্যে ওষুধ সরবরাহের জন্য ঢাকায় চাহিদা পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে আমাদের যে পরিমান চাহিদা রয়েছে চাহিদাপত্রে তার থেকেও বেশি দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি যাতে দ্রæত এই ইনজেকশন সরবরাহ দেয়া হয় সে বিষয়ে আমরা নিয়মিত যোগাযোগও করছি।
 অপরদিকে, বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, ‘ইনজেকশন না থাকার বিষয়টি আমিও শুনেছি। এটি যাতে দ্রত সরবরাহ করা হয় সে বিষয়ে তদারকি করা হচ্ছে। তাছাড়া বাহিরের ফার্মেসিতে করোনা সংকটকে পুঁজি করে কেউ ওষুধের বারতি দাম রাখা হলে সে বিষয়টি আমরা তদারকি করে দেখবো। আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছেন। এ ধরনের কোন অভিযোগ থাকলে তাৎক্ষনিকভাবে তাদেরকে জানানোর জন্য পরামর্শ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
 


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

সর্বশেষ