ঢাকা বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫

Motobad news

বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে এই দেশ স্বাধীন হতো না:মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী

বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে এই দেশ স্বাধীন হতো না:মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, বাংলার মাটিতে বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে এই দেশ স্বাধীন হতো না। বঙ্গবন্ধুর আহবানে মুক্তিযোদ্ধারা ৭১ সালে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে জীবন বাজী রেখে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে অসম সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশেরই নেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন বিশ্বের নেতা।

সোমবার তিনি পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সুধীজনদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশের সকল ক্ষেত্রে সার্বিক উন্নয়ন ঘটে চলছে। যে উন্নয়ন বিশ্ববাসীর কাছে একটি রোল মডেল হিসাবে আজ স্বীকৃত। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের উন্নয়নেও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে ৭১’র বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্র, বধ্যভূমি, ঐতিহাসিক স্থান ইত্যাদি নির্দশনকে স্মৃতিবহ করতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু’র ৭ মার্চের ভাষণের ঐতিহাসিক স্থান, ইন্দিরা মঞ্চ, মেহেরপুরের মুজিব নগরে দেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণের স্থান সমূহ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করে গড়ে তোলা হচ্ছে। আজ মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা ২০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। যা আমি এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের সময় ছিলো ৩ হাজার টাকা। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী ‘মুজিববর্ষে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার গৃহহীন মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর তৈরীর যে উদ্যোগ নিয়েছে তার অংশ হিসাবে ভা-ারিয়ায় আরও ৬৫টি ঘর তৈরী করে দেয়া হবে। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের দেশের সকল হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং আগামী ২৬ মার্চের পূর্বে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয়পত্র ও সনদপত্র প্রদান করা হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্য, বীরত্বৎগাঁথা  ইত্যাদি জানাতে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের গৌরবজনক ভূমিকাসহ  বঙ্গবন্ধুর অবদান সম্পর্কে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনাবেন। প্রায়ত মুক্তিযোদ্ধাদের কবর ও সমাধি একই ডিজাইনে নির্মাণ করে তাদের স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের বিশেষ কর্মসূচিও হাতে নেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন,  ভান্ডারিয়া হচ্ছে আমাদের জন্য তীর্থস্থান। ভান্ডারিয়ার ভূমি তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার জন্মস্থান। মানিক মিয়া সোহরাওয়ার্দীর ভাবশিষ্য ছিলেন। তিনিও বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন করেছেন। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান আন্দোলন, তৎকালীন মুসলিমলীগ সরকার বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনসহ ছয় দফা দাবী আদায়ের সংগ্রাম গড়ে তুলে ছিলেন। মানিক মিয়া ছিলেন তাঁর সহচর। জেল-জুলুম মোকাবেলা করে বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক অঙ্গণে এবং মানিক মিয়া সংবাদপত্রের মাধ্যমে দুই ফ্রন্টে বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনে জনমত গঠন করেছিলেন। মানিক মিয়ার ইত্তেফাক পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার অবিচার-বৈষম্য, অর্থনৈতিক শোষণের কথা সংবাদপত্রের পাতায় তুলে ধরে বাঙ্গালীকে সচেতন করার জন্য নির্ভিক ভূমিকা রেখেছিলো। যার ফলশ্রুতিতে ৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পারিষদে বঙ্গবন্ধু’র নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্টতা অর্জন করে কিন্তু বাঙ্গালীর এই অধিকারকে অস্বীকার করে ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডেকেও তা বাতিল করে। বঙ্গবন্ধু ৭মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ও ২৬ মার্চের ঘোষণার মধ্যদিয়ে বাঙ্গালীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলে মুক্তিযুদ্ধের  যে আহ্বান জানিয়েছিলেন তার পরিণতি হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা।  

আ. ক. ম মোজাম্মেল হক আরও বলেন, ভান্ডারিয়া সন্তান এবং আজকের এ অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি মানিক মিয়ার সুযোগ্য পুত্র আনোয়ার হোসেন মঞ্জু’র আহ্বানে আমি ভান্ডারিয়ায় আসতে পেরে খুবই আনন্দিত ও কৃতার্থ। আইয়ূব বিরোধী আন্দোলন তথা বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনে আমরা দু’জন একই সাথে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কর্মী হিসাবে কাজ করেছি। আমি ছিলাম এ সংগঠনের সহ সাধারণ সম্পাদক এবং আমার রাজনৈতিক গুরু আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ছিলেন সহ সভাপতি। এ ছাড়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রনেতা হিসাবে ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের সহ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আমরা একই সাথে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে রাজপথে সংগ্রাম করেছি। তিনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী হিসাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশে সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নের তিনি হচ্ছেন পথিকৃত।


অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি জাতীয় পার্টি-জেপি’র চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে শিখিয়েছেন। তিনি স্বাধীনতার পর সকলকে নিয়ে দেশ পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তাঁর সে উদ্দেশ্য সফল হয়নি। তিনি ধাপে ধাপে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলে দেশকে স্বাধীন করেন। তিনি শোষণ-বৈষম্যের বিরুদ্ধে মানুষের অধিকার আদায়ে যে স্বপ্ন দেখিয়ে ছিলেন তা আমাদের সম্পন্ন করতে হবে। আমরা পাকিস্তান আমলে রাস্তায় লড়াই করেছি রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য স্বাধীন বাংলাদেশেও আমাদের রাস্তায় নামতে হয়েছে এমনকি জেলও খাটতে হয়েছে, যা ছিলো অনভিপ্রেৎ। আমরা নতুন প্রজন্মকে আগামী দিনের নেতৃত্বদানের উপযোগী করে গড়ে তুলতে চাই। এ ক্ষেত্রে আমরা ৩৮ বছর ধরে যে কথা বলে এসেছি তা হলো ঐক্য হচ্ছে মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের চালিকা শক্তি। ১৮ বছর সরকারে থেকে মানুষের জন্য যা করতে সক্ষম হয়েছি তা হলো উন্নয়নের প্রাথমিক ধাপ প্রস্তুত করা। এই জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। বঙ্গবন্ধুর একজন কর্মী হিসাবে কাজ করার যে সুযোগ পেয়েছিলাম তার শিক্ষা ছিলো ধাপে ধাপে উদ্দেশ্য সাধন করা। এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলার সাথে মানুষকে বসবাস করার ব্যবস্থায় আমরা অনেকটা সফল হয়েছি। ভান্ডারিয়াসহ এসব এলাকায় মানুষের মধ্যে হানাহানি-ঝগড়া-কাইজ্যা-ফ্যাসাদ হয় না। ব্যক্তি পর্যায়ে বা পারিবারিক পর্যায়ে দ্বন্দ্ব-কলহ সৃষ্টি হলে তা স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ যেমন নিরসন করেন আবার আইন শৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষ তা সমাধান করে দেন। তাই এলাকায় মামলা-মোকদ্দমা কম। এলাকার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ রাখা এবং মানুষের কাছে ঐক্যের কথা বলায় সমাজে এই সুখ ও শান্তির পরিবেশ বিরাজ করছে।


তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর কর্মী হিসাবে এক সময় ছাত্রলীগের আমার ঘনিষ্ঠ সহচর আজকের এ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হকের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তিনি ভান্ডারিয়ায় এসে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন শুভ উদ্বোধন করেছেন। এই ভবনটি নির্মাণের সুচনা লগ্নে আমাদের ভূমি সংক্রান্ত কিছুটা জটিলতা মোকাবেলা করতে হয়েছিলো। ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সে সমস্যা দূর করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা অপেক্ষা করছিলাম মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আমাদের এ ভবনটির উদ্বোধন করবেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের আশা পূরণ হয়েছে।      


ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে মতবিনিময় ও শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন, পুলিশ সুপার মো. সাঈদুর রহমান, পিরোজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজ, ভান্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের উপজেলা সভাপতি ফায়জুর রশীদ খসরু, উপজেলা জেপি’র সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম সরওয়ার জোমাদ্দার, বীর মুক্তিযোদ্ধা খান এনায়েত করিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজামুল হক নান্না ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এহসাম হাওলাদার।

ভান্ডারিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার সীমা রানী ধরের সভাপতিত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সুধীজনদের সাথে মতবিনিময় সভায় উপস্থাপনা করেন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজুর রশীদ তারেক।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে মঞ্চে ছিলেন উপজেলা জেপি’র আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল হক মনি জোমাদ্দার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ সিকদার, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মৃধা, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আসমা আক্তারসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ। এছাড়া এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এর আগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক ভা-ারিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন উদ্বোধন করেন।

 

 

 

শঙ্কর জীৎ সমাদ্দার/এইচকেআর


গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন