ঢাকা রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫

Motobad news

পিরোজপুরে পরীক্ষামূলক আপেল চাষে সফল প্রণব

পিরোজপুরে পরীক্ষামূলক আপেল চাষে সফল প্রণব
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

পিরোজপুর জেলায় ১ম বার পরীক্ষামূলক আপেল চাষে সফল প্রণব হালদার। ২ বছর আগে ৩টি জাতের ৬০ টি চারা দিয়ে পরীক্ষামূলক আপেলের চাষ শুরু করেন প্রণব। আর তাতেই সফলতা ধরা দিয়েছে তার হাতে। প্রনবের বাড়ি পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মধুভাঙ্গা গ্রামে। মেডিকেল টেকনোলজিতে পড়াশোনা শেষ করে বাড়িতে বসে শুরু করেন আপেলের চাষ। ভবিষ্যতে বাগান বড় করে বাণিজ্যিকভিত্তিতে আপেল চাষের স্বপ্ন দেখছেন প্রবণ। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে জেলায় এটিই প্রথম আপেলের বাগান।

প্রণবের আপেল বাগানে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে ৫৫ শতাংশ জমিতে তিনটি জাতের আপেলসহ মিশ্র ফলের বাগান করেছেন। তার বাগানে ৬০টি আপেল গাছ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে অসংখ্য ছোট ছোট আপেলের চারা। এসব গাছে ফুল ধরেছে। অনেক গাছে ফুল থেকে ফলও এসেছে। আপেলের পাশাপাশি বাগানে বেদানা, আলুবোখারা ও আমের চাষ করা হয়েছে। বাগানে ফুলের পরাগায়নের জন্য বাড়িতে মৌমাছির চাষও করা হচ্ছে।

প্রণব হালদার জানান, কয়েক বছর আগে সবুজ বাগান সোসাইটি নামে একটি বাগান সম্পর্কিত ফেসবুক গ্রæপ থেকে ১ম জানতে পারেন বাংলাদেশেও আপেল চাষ করা সম্ভব। দেশে ফলবে এমন কিছু আপেলের জাত এরই মধ্যে উদ্ভাবিত হয়েছে। এরমধ্যে ভারতের একটি জাত রয়েছে। যা আমাদের দেশে হরিমন ৯৯ আপেল নামে পরিচিত।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে হরিমন ৯৯ আপেল জাতের ৫০টি চারা সংগ্রহ করেন প্রণব। উদ্দেশ্য ছিল পরীক্ষামূলক আপেল চাষ করা। আপেলের চাষ সম্পর্কে কোনো জ্ঞান না থাকায় গরম এলাকার আপেল চাষে গবেষক ভারতের পারভেজ নওশাদ ও হরিমন শর্মার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের পরামর্শ নিয়ে চারাগুলোকে নার্সিং করে বড় করেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রণব ভারতের হিমাচল প্রদেশের বিলাসপুরে হরিমন শর্মার আপেল বাগানে প্রশিক্ষণের জন্য যান। প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশে ফলবে আরো দুইটি জাতের চারা ‘আনা (ইজরায়েল)’ ও ‘ডরসেট গোল্ডেন (বাহামাস)’ সংগ্রহ করেন। ২০২০ সালের এপ্রিলে তিনটি জাতের ৬০টি চারা বাড়ির পাশের জমিতে রোপণ করেন। ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে গাছে ফুল আসা শুরু করে। বর্তমানে গাছে ছোট আপেল ও ফুল আছে। ফল সংগ্রহ করা যাবে মে থেকে জুলাই পর্যন্ত।

আপেল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রণব বলেন, জমিতে আপেলের চারা রোপণের জন্য ২দ্ধ২দ্ধ২ ফুট গর্ত তৈরি করে জৈব সার মাটির সাথে মিশিয়ে গর্তে ১৫ দিন রেখে দিয়ে চারা গুলো রোপণ করা হয়। সঙ্গে অন্য কোনো রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হয় না। আপেল গাছ আলো, বাতাস এবং উঁচু জমিতে ভালো হয়। বেলে দো-আঁশ মাটি আদর্শ হলেও অন্য মাটিতে ও রোপণ করা যায়। তবে আপেল গাছ কোনোভাবেই জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না।

প্রণব হালদার আরও বলেন, যেহেতু আমার বাগানটি পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করা তাই আরো কয়েক বছর পর্যবেক্ষণ করব। এরপর যদি লাভজনকভাবে আপেল ফলাতে সক্ষম হই তাহলে বাগান সম্প্রসারণ করতে চাই। তবে শুরুতে বড় পরিসরে বাগান করা উচিত নয়। কয়েকটি চারা রোপণ করে সফল হলে বড় বাগান করা উচিত।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দ্বিগবিজয় হাজরা বলেন, পিরোজপুর জেলায় এটিই প্রথম আপেলের বাগান। সাধারণত আপেল শীত প্রধান দেশে চাষ করা হয়। তবে আমাদের দেশে এখন আপেল চাষ করা সম্ভব। প্রণবের আবাদ করা জাতের চারাগুলো বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। এখানে দুই বছর বয়সে গাছে ফুল ও ফল এসেছে। আশা করা যায় গাছগুলোর পরিণত বয়সে ফলন আরও বৃদ্ধি পাবে।


 


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন