কঁচা নদীর ডুবোচর খননে মিলছে স্বস্তি

দীর্ঘ দিন ধরে পিরোজপুরের -ভান্ডারিয়া ও ইন্দুরকানীর মধ্যবর্তী কঁচা নদীতে ডুবোচরে আটকে নৌযান চলাচল মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছিলো। চরখালী-টগড়া ফেরি চলাচলে ভোগান্তির যেন কোন শেষ ছিল না। এখানে নাব্যতা সংকটের কারণে আন্তর্জাতিক নৌ-পথ থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ নৌ-যোগাযোগ অনেক সময় পড়েছে হুমকির মুখে।
কঁচা নদী পারাপারে ডুবোচরে আটকে চরখালী-টগড়া ফেরি চলাচল ব্যহত হয়ে জনদূর্ভোগের যেন শেষ ছিল না এ পথের যাত্রী সাধারণের। এই রুটে বাংলাদেশ-ভারত (অভ্যন্তরীণ) এবং খুলনা ও মংলা বন্দরের সঙ্গে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের নৌ যোগাযোগ রয়েছে। ডুবোচরের কারণে এ পথে চলাচলকারী ঢাকাগামী লঞ্চ, বি আই ডব্লিউ টিসির রকেট-স্টিমার, সরকারি ও বেসরকারি অয়েল ট্যাংকার, কোস্টার, কার্গো, নৌবাহিনীর জাহাজ ইত্যাদি চলাচলে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। তবে বলেশ্বর নদের বড় একটি অংশ নাব্যতা হারিয়েছে। ফলে কঁচা ও বলেশ্বরের মোহনায় এই ডুবোচর জেগে উঠছে। যা নিয়মিত খনন করা প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেন ১২৮,পিরোজপুর-২ আসনের (কাউখালী-ভান্ডারিয়া-ইন্দুরকানী) সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কঁচা নদীর ডুবোচর খননের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এর আগেও ২০১৯ সালে তিনি নদী খননের ব্যবস্থা করে ছিলেন।
বর্তমানে বরিশাল-ঝালকাঠি-ভান্ডারিয়া-পিরোজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ৫৩ কিলোমিটারে কঁচা নদীর চরখালী-চরখালী-টগড়া ফেরি ঘাটের টগড়া (ইন্দুরকানী) প্রান্তে অবস্থিত ডুবোচর খননের (ড্রেজিং) কাজ বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং ডিপার্টমেন্ট থেকে সম্পন্ন করা হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র টেকনিক্যাল এসিস্ট্যান্ট (সিভিল) মিরাজুর রহমান সোহেল জানান, 'কঁচা নদীর ১৭০০ ফুট দীর্ঘ ও ২৪০ ফুট চওড়া এলাকায় এই খনন কাজ চলমান রয়েছে। এখানে প্রায় এক লক্ষ ঘনমিটার মাটি উত্তোলন করা হবে। যার ফলে টগড়া-চরখালী ফেরিসহ যাবতীয় নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে।
পিরোজপুর-মঠবাড়িয়া রুটের বাস চালক ইব্রাহিম হাওলাদার জানান, কয়েক দিন আগেও চরখালী-টগড়া ফেরি কঁচা নদীতে ডুবোচরে আটকে গিয়ে আমাদের ভোগান্তির কোন শেষ ছিল না। ঘন্টার পর ঘন্টা ফেরিতেই কাটাতে হয়েছে অনেক সময়। প্রায়ই বাস চালক ও যাত্রীদের সাথে হাতাহাতি পর্যন্ত হয়েছে। এখন আর সে সমস্যা হচ্ছে না। নদী খনন করায় আমরা দ্রুত সময় গন্তব্যে যেতে পারছি।
চরখালী-টগড়া ফেরির ইজারা (আদায় কর্মী) হায়দার আলী জানান, 'ডুবোচরের কারণে প্রায়ই ফেরি চলাচল ব্যাহত হয়েছে এখানে। বিভিন্ন যাবাহন ও পণ্য পরিবহনেও সমস্যার শেষ ছিল না। অনেক সময় গাড়িসহ ফেরিগুলো ডুবোচরে দীর্ঘসময় ধরে আটকে থাকতো। এমনকি অ্যাম্বুলেন্সে রোগীসহ ফেরি মাঝ নদীতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডুবোচরে আটকে থাকায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। দীর্ঘ সময় নদীর উভয় প্রান্তে যানবাহনের লম্বা লাইন চোখে পড়াটাও ছিল স্বাভাবিক।'
বর্তমানে সে চিত্র আর নেই। দুরন্ত গতিতে নিয়মিত ভাবে ফেরি চলাচল করছে। নির্বিঘ্নে যাত্রী সাধারণ পৌঁছে যাচ্ছে তাদের গন্তব্যে। সবার মাঝে এখন স্বস্তির নিশ্বাস।
এ বিষয়ে পিরোজপুর জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক খোকন জানান, 'চরখালী-টগড়া ফেরিটি দক্ষিণাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। কিন্তু কঁচা নদীতে ডুবোচরের কারণে দীর্ঘ দিন ধরে বেশ কয়েকটি রুটের যানবাহন চলাচলে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। বর্তমানে ভাবে খনন কাজ শুরু করা হয়েছে তাতে চরখালী-টগড়া ফেরিঘাট ব্যবহারকারী দক্ষিণাঞ্চলের বরগুনা, পাথরঘাটা, মঠবাড়িয়া, ভান্ডারিয়া, কাঠালিয়া, পিরোজপুর রুটের যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে আর সমস্যা থাকবে না।'
চরখালী-টগড়া ফেরির চালক শাহিন মুন্সী জানান, 'কিছু দিন আগেও ভাটির সময় ফেরি বন্ধ করে রাখতে হয়েছে। প্রায়ই ফেরি আটকে যেত মাঝ নদীতে। ডুবোচরের কারণে ফেরি চালাতেই পারতাম না। নদী খননের ফলে এখন আর সমস্যা হচ্ছে না।'
জাতীয় পার্টি জেপির ইন্দুরকানী উপজেলা আহবায়ক ও ঐ উপজেলার পত্তাশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদার জানান, কঁচা নদীতে ডুবোচর খননের ব্যবস্থা করায় এই রুট ব্যবহারকারী যাত্রী সাধারন জাতীয় পার্টি জেপির চেয়ারম্যান ও ১২৮,পিরোজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি’র প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
এস. সমদ্দার/ভান্ডারিয়া
এইচকেআর