স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরী রাস্তার কাজ দেখিয়ে ইউপি সদস্যের টাকা উত্তোলন

পিরোজপুরের নাজিরপুরে স্বেচ্ছাশ্রমে নিজেদের চলাচলের রাস্তা তৈরী করে এলাকাবাসী। আর সেই কাজ দেখিয়ে টাকা উত্তোলনের অভিযোগ শ্রীরামকাঠী ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, শ্রীরামকাঠী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পৃথক দু’টি রাস্তা স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরী হলেও স্থানীয় সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী ইউপি সদস্য শিলা শিকদার ওই কাজটি টিআর প্রকল্পের চেয়ারম্যান হিসাবে প্রায় ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা উত্তোলন করে নেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ওই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিন শ্রীরামকাঠী গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেন শেখের বাড়ির পাশের একটি সুপারি গাছে দুর্যোগ ববস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষন (টিআর) এর ওই কাজের সাইনবোর্ড সাটানো রয়েছে। এতে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের সাধারন টিআর দ্বিতীয় পর্যায়ের বরাদ্দ বাবদ ‘২৯/২১-২২’ এর জীব গ্রাম সুখরঞ্জন এদবরের বাড়ী হতে উত্তম মিস্ত্রীর বাড়ী পর্যন্ত এবং দক্ষিন শ্রীরামকাঠী তোফাজ্জেল শেখ এর বাড়ী হতে সুদেব ঢালীর বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা মেরামত বাবদ ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৯৮ টাকা বরাদ্দ দেখানো হয়।
ওই ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিন শ্রীরামকাঠী গ্রামের সুশীল ঢালী জানান, আমাদের বাড়ির সামনের মাটির সরু রাস্তাটি ভাঙ্গা ছিলো। তা দিয়ে চলাচলে দীর্ঘ দিন ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছিলো। তাই গত বছরের নভেম্বর মাসে (তৃতীয় ধাপ) অনুষ্ঠিত ইউপির নির্বাচনের আগে ওই ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী লিটন হাওলাদার এলাকায় ভোট চাইতে আসেন। তখন এলাকার সবাই তাকে ভোট দিবে শর্তে আমাদের বাড়ির সামনের ওই রাস্তাটি সংস্কারের দাবী জানাই । এ বাবাদ তখন তিনি আমাদের ১২ হাজার টাকা দেন। ওই টাকা দিয়ে বালু ক্রয় এবং আমরা স্থানীয় প্রায় ২৫ জন নারী-পুরুষ মিলে ৪০দিন ওই রাস্তা মেরামতের কাজ করি। কিন্তু গত প্রায় দেড় মাস আগে স্থানীয় সংরক্ষিত (৭,৮ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড ) নারী ইউপি সদস্য শিলা শিকদার প্রকল্পের চেয়ারম্যান দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করা হয়।
ওই ওয়ার্ডের জীব গ্রামের নারায়ন হালদার জানান, নিরাপদ হালদারের বাড়ীর পিছনের রাস্তাটি ভাঙ্গাচুরা ও বর্ষাকালে কাঁদা হয়ে যায়। তাই নির্বাচনের আগে আমরা গ্রামবাসী মিলে ৭-৮ দিন স্বেচ্ছা শ্রমে কাজ করে রাস্তার পাশ থেকে মাটিকেটে রাস্তার দু’পাশ উঁচু করি। পরে স্থানীয় মেম্বার প্রার্থী হাসান তাতে ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাট করে দেন।
মেম্বার প্রার্থী মো. হাসান মোল্লা জানান, নির্বাচনের আগে ভোট চাইতে গেলে গ্রামবাসী আমাকে ভোট দিবেন শর্তে তাদের ওই রাস্তাটিতে বিনামূল্যে প্রায় ৭৪ হাজার টাকার বালু ভরাট করে দেই। এর আগে গ্রামবাসী মিলে রাস্তাটির দু’পাশ মাটি দিয়ে উঁচু করেছেন।
এ ব্যাপারে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যন (সিপিসি) স্থানীয় সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য শিলা শিকদার মুঠোফোনে জানান, তিনি ওই ওয়ার্ডের নতুন মেম্বার। স্থানীয় সাধারণ সদস্য লিটন হালদার (লিটু) তাকে ওই কাজের সিপিসি করেছেন মাত্র।
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য লিটন হালদারের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, আমাদের তেমন কোন আয় নাই। তাই ওই প্রকল্পটি দেখিয়ে উত্তোলন করা টাকা ইউনিয়নের মেম্বাররা খরচ হিসাবে ভাগ করে নিয়েছি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলতাফ হোসেন বেপারী জানান, ওই ওয়ার্ডের নারী মেম্বার ও সাধারন মেম্বার মিলে রাস্তাটি ‘টিআর’ এর আওতায় প্রকল্প দিতে অনুরোধ করেন। সে অনুযায়ী তার প্রকল্প দেয়া হয়েছে। ২-৪ দিন ধরে শুনতেছি ওই রাস্তাদু’টি এলাকাবাসী স্বেচ্ছা শ্রমে করেছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. এস্রাফিল হোসেন জানান, বিষয়টি মৌখিক ভাবে শুনেছি। খোঁজ নিয়ে সত্যতা মিললে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমইউআর