স্বরূপকাঠিতে ২৫ বছর পর আ. লীগের সম্মেলন শনিবার

২৫ বছর পর আগামীকাল ১৮ জুন শনিবার অনুষ্ঠিত হবে স্বরূপকাঠি উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
দুই যুগ পর অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলন ঘিরে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন নেতাকর্মীরা। তবে গত ২৩ মের বর্ধিত সভাকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা মাথায় রেখে নেতাকর্মীদের মাঝে এক ধরনের অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। গেল ২৩ মের বর্ধিত সভায় শিল্পপতি সৈয়দ শহিদুল আহসানকে আহ্বায়ক ও পৌর মেয়র গোলাম কবিরসহ তিনজনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৩১ সদস্যের উপজেলা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি অনুমোদন দেন জেলা কমিটির নেতারা। ওই কমিটিতে একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য একেএমএ আউয়াল অনুসারীদের।
উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিকে বহাল রেখে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করায় কোণঠাসা হয়ে পড়েন বর্তমান সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের সমর্থকরা। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিতে ৩-৪ জন নব্য আওয়ামী লীগারকে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও জায়গা হয়নি মুক্তিযোদ্ধা কাজী সাখাওয়াত হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম, কৃষক লীগের সভাপতি শশাংক রঞ্জন সমদ্দারসহ বেশ কজন পরীক্ষিত নেতার। এ নিয়ে কর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হলেও প্রভাবশালী নেতাদের সামনে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি।
স্থানীয়ভাবে রেজাউল করিম সমর্থক হিসেবে পরিচিত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এসএম মুইদুল ইসলামের নেতৃত্বে তৃণমূলে একটি বিশাল কর্মী বাহিনী থাকলেও মূল সম্মেলনের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে আউয়াল অনুসারীদের হাতে। এসব কারণে যোগ্য ও পরীক্ষিত নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়েও রয়েছে শঙ্কা।
জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের এপ্রিল মাসে স্বরূপকাঠি উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার নুর মোহাম্মদ হাওলাদারকে সভাপতি এবং এসএম ফুয়াদকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সভাপতি মারা গেলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন আব্দুল হামিদ। আব্দুল হামিদ ও সম্পাদক ফুয়াদের নেতৃত্বে দলটি গত ২৫ বছরের মধ্যে বেশ কয়েকবার সম্মেলনের তারিখ দিলেও নানা জটিলতায় তা বন্ধ হয়ে যায়। এমতাবস্থায় দলের মধ্যে নানা উপদলের সৃষ্টি হয়। সর্বশেষ গ্রুপ রাজনীতিতে মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের সমর্থক ও জেলা সভাপতি একেএমএ আউয়াল অনুসারীদের নামে দুইটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে।
১৮ জুনের সম্মেলনে সভাপতি পদের প্রত্যাশী হিসেবে সৈয়দ শহীদুল আহসান ও অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে পৌর মেয়র মো. গোলাম কবির ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার ঠাকুর আউয়াল গ্রুপের হয়ে কাউন্সিলরদের সংগঠিত করছেন। এ গ্রুপের সঙ্গে জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট কানাই লাল বিশ্বাসসহ ২-৩ জন ইউপি চেয়ারম্যান সংগঠকের ভূমিকা পালন করছেন।
অপরদিকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুইদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম সিকদার ও যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সালাম রেজাসহ কোণঠাসা হয়ে থাকা গ্রুপটিকে নেপথ্যে সমর্থন দিচ্ছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মো. শাহ আলম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার কাজী সাখাওয়াত হোসেনসহ ৬-৭ জন ইউপি চেয়ারম্যান। দুই পক্ষই ব্যাপক কর্মী সমাবেশ করে জোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সম্মেলন শান্তিপূর্ণ হবে কিনা এবং নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম ফুয়াদ বলেন, আশা করি শান্তিপূর্ণভাবে সম্মেলন সমাপ্ত হবে। বড় দল হিসেবে আওয়ামী লীগে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে কিন্তু সেটাকে শত্রুতা বা বিরোধ বলা যাবে না।
পটুয়াখালীতে মাদক সেবনে বাধা দেওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বে পুলিশ সদস্য ক্লোজড
পটুয়াখালীতে মাদক সেবনে বাধা দেওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ানোর ঘটনায় মেজবাহ উদ্দিন নামে এক পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করা হয়েছে। বিধিবহির্ভূতভাবে পুলিশ লাইন থেকে লোকালয়ে বের হওয়ার অপরাধে ওই পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করা হয়।
বৃহস্পতিবার বিকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন পটুয়াখালী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) আহমাদ মাঈনুল হাসান।
এদিকে ঘটনার দিনে মাদকের আসর বসাতে বাধা দিতে গিয়ে নাটকীয় মামলার শিকার হয়ে জেলে আছেন বৃদ্ধ মামা, দুই ভাগ্নে ও এক ভাড়াটিয়া। প্রকৃত ঘটনা যাচাই-বাছাই না করে ওই দিনের প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষীদের বদলে দ্রুতবিচার আইনের মামলায় আসামি করে তড়িঘড়ি করে জেলে পাঠানো হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারের এমন অভিযোগ।
ভুক্তভোগীদের ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ১২ জুন পটুয়াখালী পৌর এলাকার লতিফ স্কুল সড়কের পান্থলেনের কামাল ভবনের গোলাম সরোয়ারের ছোট ভাই ও পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদকসেবী গোলাম হায়দার টিটু, পটুয়াখালী পুলিশ লাইনে কর্মরত এসএএফ পুলিশ সদস্য মেজবাহ উদ্দিনসহ তাদের অপর সঙ্গীরা তাদের বাসার একটি পরিত্যক্ত কক্ষে আসর বসায়। এ সময় গোলাম সরোয়ারের ভাগ্নে স্মরণ আহম্মেদ ও সাব্বির হোসেন ওই কক্ষে মাদকের আসর বসাতে বাধা দিলে হাতাহাতিতে লিপ্ত হয় পুলিশ সদস্য মেজবাহ উদ্দিন।
ঘটনার বরাত দিয়ে ভুক্তভোগীরা বলেন, গত ৩০ জুন স্মরণ আহম্মেদ ও সাব্বির হোসেনের অর্থাৎ গোলাম সরোয়ারের ছোট বোন মুক্তি আরা হ্যাপি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলে গোসলসহ যাবতীয় কার্যাদি সম্পন্ন করেন ওই কক্ষে। তাই ওই কক্ষে মাদকের আসর বসাতে বিরত থাকতে বলেন বাসার সদস্যরা।
তাদের আপত্তি না শুনে সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্য মেজবাহ তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে হাতাহাতি হলে তাদের ভাড়াটিয়া মীর নোমান এগিয়ে এসে ঘটনার প্রতিবাদ করে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। পরে পুলিশ সদস্য মেজবাহের দেওয়া সংবাদে ডিবি পুলিশের সদস্য ও থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে গোলাম সরোয়ার, তাদের ভাগ্নে স্মরণ আহম্মেদ, সাব্বির ও তাদের ভাড়াটিয়া মীর নোমানকে তুলে ডিবির কার্যালয়ে নিয়ে যায়। এ সময় মাদক আসরের অপর সঙ্গী গোলাম হায়দার টিটু, সাবেক কাউন্সিল লাবু, উজ্জ্বল শীল কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কোনো কিছু যাচাই না করে পুলিশ চারজনকে তুলে নিয়ে যায়। অথচ পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ আগে আসরের নামাজ আদায় করে বাসায় ফেরেন বৃদ্ধ গোলাম সরোয়ার। সুস্থ-সবল চারজনকে বাসা থেকে তুলে নেওয়ার পর পুলিশ মীর নোমানের হাত-পা পিটিয়ে ভেঙে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন মীর নোমানের স্ত্রী আফরোজা বেগম ও ওই বাসায় অন্যরা। পরে অভিযুক্ত ওই পুলিশ সদস্যের স্ত্রী মোসা. মরিয়ম আক্তার জেরিনকে বাদী বানিয়ে দ্রুতবিচার আইনে মামলা দিয়ে ১৩ জুন তাদের জেলে পাঠানো হয়েছে।
এইচকেআর