ঢাকা মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫

Motobad news

মঠবাড়িয়ায় জাপা নেতাকে কুপিয়ে পা বিচ্ছিন্নের ঘটনায় আসামির জামিন নামঞ্জুর

মঠবাড়িয়ায় জাপা নেতাকে কুপিয়ে পা বিচ্ছিন্নের ঘটনায় আসামির জামিন নামঞ্জুর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় চাঞ্চল্যকর জাতীয় পার্টি নেতা শফিকুল ইসলামকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে পা বিচ্ছিন্ন করার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামি নাসির হাওলাদারের জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। 

সোমবার (৩ অক্টোবর) গ্রেপ্তারকৃত মামলার ১ নং আসামি নাসির হাওলাদারের পক্ষে জামিনের আবেদন করেন। একই সাথে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা মঠবাড়িয়া থানার ওসি (তদন্ত) আবুল কালামের ৫ দিনের আবেদন করা রিমান্ড শুনানী হয়। মঠবাড়িয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. কামরুল আজাদ শুনানী শেষে জামিন নামঞ্জুর এবং রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। গত  ৩০ সেপ্টেম্বর সকালে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে গ্রেপ্তারকৃত নাসির হাওলাদারকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত নাসির হাওলাদার তুষখালী ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান হাওলাদারের ছোট ভাই ও তুষখালী গ্রামের মৃত. হোচেন আলী হাওলাদারের ছেলে। নৃশংস হামলায় গুরুতর আহত শফিকুল ইসলাম তুষখালী ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও তুষখালী গ্রামের মো.আইয়ূব আলীর ছেলে।

জানা গেছে, জমি, ব্যবসা সংক্রান্ত ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান হাওলাদার, তার ছোট ভাই নাসির হাওলাদার, ছেলে শামীম হাওলাদার, সাবেক ইউপি সদস্য সগীর হোসেন হাওলাদার, মুছা শরীফও হাবিব আকনসহ বিভিন্ন জনের সাথে শফিকুলের বিরোধ চলে আসছিলো। মুসা শরীফের সাথে চলমান একটি মামলায় শফিকুল আদালতে হাজিরা দিতে বৃহস্পতিবার সকালে মোটর সাইকেল যোগে তুষখালী থেকে মঠবাড়িয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। মাঝের পুলের সন্নিকটে ফরাজি বাড়ির সামনে কালভার্ট এর উপওে আসা মাত্রই একটি মহেন্দ্র গাড়ি শফিকুলের গতিরোধ করে। এ সময় শফিকুল মোটর সাইকেল থেকে নেমে পিছনের দিকে দৌড় দিলে হামলাকারীরা মাহেন্দ্র থেকে নেমে তাকে ধাওয়া করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে বাম পা বিচ্ছিন্ন করে। এ সময় এলোপাতাড়ি কোপানোর কারণে শফিকুলের পেটের ভুড়ি বেড়িয়ে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জখম হয়। স্থানীয়রা আহত শফিকুলকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে  নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পরে বরিশাল থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

এ ঘটনায় গুরুতর জখম শফিকুল ইসলামের মা মোছা. মমতাজ বেগম (৬৫) বাদি হয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে মঠবাড়িয়া থানায় ৭ জন নামীয় ও অজ্ঞাত ৩ জনের বিরুদ্ধে এ মামলাটি দায়ের করেন। আসামিরা হলো তুষখালী ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান হাওলাদারের ছোট ভাই মো. নাসির হাওলাদার (৫০), ছেলে শামীম হাওলাদার (৪২), ছোট মাছুয়া গ্রামের মৃত. ছালাম হাওলাদারের ছেলে ছগির হাওলাদার (৪৫), মধ্য তুষখালী গ্রামের মৃত গণি আকনের ছেলে হাবিব আকন (৫৫), হাবিব আকনের ছেলে হুমায়ূন (২৫), তুষখালী গ্রামের জুলফিকার আলী শরীফের ছেলে খায়রুর ইসলাম মুছা শরীফ (৫০), ছোট মাছুয়া গ্রামের মৃত. আলী হোসেন পঞ্চায়েতের ছেলে বশির পঞ্চায়েত (৪২)।

ঘটনার দিন ২৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে থানা ও ডিবি পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে তুষখালী ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান হাওলাদারের ছোট ভাই নাসির হাওলাদারকে আটক করেন। পরে তাকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়। শফিকুলের ওপর হামলায় হামলায় ব্যবহৃত মাহেন্দ্র গাড়িটি শুক্রবার গভীর রাতে পাশর্^বর্তী ভান্ডারিয়া উপজেলার ইকড়ি ইউনিয়নের শিংখালী গ্রাম থেকে পরিত্যাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

এদিকে জাপা নেতা শফিকুল ইসলামের ওপর নৃশংস হামলার ঘটনায় জড়িতদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতারের দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (২ অক্টোবর) সকালে মঠবাড়িয়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সম্মূখ সড়কে উপজেলা জাতীয় পার্টি (এরশাদ) এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন। ঘন্টা ব্যাপী এ মানববন্ধনে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংবাদিক, সুশিল সমাজ ও স্থানীয় নারী-পুরুষসহ সহ¯্রদিক লোক অংশ গ্রহন করেন।

বিক্ষোভ সমাবেশে উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি নুরুজ্জামান লিটনের সভাপতিত্বে ও সংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক এর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, উপজেলা জাতীয় পার্টিও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম টুকু, প্রভাষক মোতালেব হোসেন, ফারুক হোসেন, জাপা নেতা হিরু শরীফ, যুব সংহতির সভাপতি মিজানুর রহমান দুলাল, স্বেচ্ছা সেবক পার্টিও আহবায়ক রহমান আল নোমান, এমপির গনসংযোগ কর্মকর্তা আলী রেজা রঞ্জু, পা বিচ্ছিন্ন হওয়া শফিকুলের বাবা আইয়ূব আলীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যাক্তি বর্গ। এছাড়াও উপজেলা জাতীয় পার্টি ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে পৌর শহরে বিচারের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন।

বক্তারা বলেন, জাপা নেতা শফিকুল ইসলামের ওপর নৃশংস হামলা মধ্যযূগীয় বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। এ নৃশংসহামলায়জড়িতদের ২৪ ঘন্টারমধ্যে গ্রেফতারের দাবী জানান। গ্রেফতার করতে ব্যার্থ হলে সারাদেশ ব্যাপি জাতীয় পার্টি বৃহত্তর আন্দোলন করবে বলে হুমকি দেন। 

মঠবাড়িয়া থানার ওসি মুহা. নূরুল ইসলাম বাদল বলেন, মামলার এজাহার নামীয় ১ নং আসামি তুষখালী ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান হাওলাদারের ছোট ভাই নাসির হাওলাদারকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। হামলায় ব্যবহৃত মাহেন্দ্র গাড়িটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

অপরদিকে গুরুতর আহত জাপা নেতা শফিকুল ইসলামকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে দেখতে ছুটে যান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম কাদের এমপি, ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ডাঃ মো. রুস্তম আলী ফরাজী। এ সময় তাঁরা শফিকুলের সার্বিক খোঁজ খবর নেন। 


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন