মঠবাড়িয়ায় আসামীদের হুমকিতে গ্রামছাড়া ‘ধর্ষণচেষ্টার শিকার’ গৃহবধূ


ধর্ষণচেষ্টা ও মারধরের শিকার হয়ে মামলা দায়ের করায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এক গৃহবধূ। এ ঘটনায় থানায় নিরাপত্তার আবেদন করেও আইনি কোন সহায়তা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। যদিও পুলিশ বলছে, ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে যৌন হয়রানির শিকার নারী হামলাকারীদের হুমকি ও মারধরের আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া থানার সাপলেজা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তুলাতলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
ওই গৃহবধূ জানিয়েছেন, প্রতিবেশী মৃত ইউসুফ আলীর তিন সন্তানের সাথে তার স্বামীর দীর্ঘদিনের জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে এর আগে মারামারি ও মামলার ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনায় তাঁর স্বামীও জেল খেটেছেন।
সেই বিরোধের জের ধরে একটি মামলায় ৯ অক্টোবর রাতে তার স্বামী ও দেবরকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পুলিশ। এতে সে একা হয়ে পরে বাসায়।
ওই নারী বলেন, স্বামীকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার আতঙ্কে সারারাত আমার ঘুম হয়নি। ভোরে ফজরের নামাজের ওয়াক্তে পুকুর ঘাটে হাতমুখ ধুয়ে ঘরে ফেরার সময়ে উঠানের পাশের গাছের তলায় আমাকে পথ আটকায় মৃত ইউসুফ আলীর বড় ছেলে আবুল কালাম। সঙ্গে তার ছোট ভাই জসিম ছিল। আমি কিছু বলার আগেই আবুল কালাম আমার হাত ধরে এবং আমাকে বিবস্ত্র করতে চেষ্টা করে।
এসময়ে সে বিভিন্ন ধরণের হুমকি দেয়। সে বলে, তোর স্বামীকে জেল খাটাইছ। এখনো তুই বাড়িতে কেন। তুই বাড়ি ছেড়ে না গেলে ইজ্জত নিয়ে থাকতে পারবি না। অনেক গালাগালিও করেন বলে জানান ওই গৃহবধূ।
তখন তিনি চিৎকার দিলে, আবুল কালাম ও তার সৎ ভাই জসিম মারধর শুরু করে। তারা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মাথায়, হাতে কুপিয়ে জখম করে। এ ঘটনায় দীর্ঘদিন মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পরে থানায় মামলা করতে গেলেও মামলা নেয়নি।
ভ‚ক্তভোগী নারীর দাবী, হামলাকারীরা স্থানীয় সংসদ সদস্যের আত্মীয় পরিচয় দেয় এবং সেই প্রভাবে তারা এলাকার মানুষের সাথে যা খুশি তাই আচরণ করেন। এমনকি থানা পুলিশ তাদের কথায় ওঠে-বসে। এর আগেও কোন তদন্ত ছাড়াই মিথ্যা অভিযোগে একাধিক মামলা নিয়ে থানার ওসি তাদের হয়রানি করেছে।
থানায় মামলা দিতে না পেরে শেষে পিরোজপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দিলে তা আমলে নিয়ে জেলা অপরাধ তদন্ত বিভাগকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। এই ঘটনা জানতে পেরে, ২১ অক্টোবর সন্ধ্যায় মামলায় অভিযুক্ত দুই আসামী ও তাদের আরেক ভাই মনির হোসেন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এসে গৃহবধূর বাড়ির উঠানে এসে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দেয়। যদি মামলা তুলে না নেয় তাহলে খুন করে ফেলার কথা বলে যায়। এ ঘটনায় ২৩ অক্টোবর মঠবাড়িয়া থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন ধর্ষণচেষ্টার শিকার ওই গৃহবধূ। জিডি নং ১১২৪।
হুমকির ঘটনার পরপরই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন গৃহবধূ ও তার পরিবার।
তবে ধর্ষণচেষ্টা মামলার আসামী আবুল কালাম অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, ঘটনার আগের দিন তাদের সাথে আমাদের মারামারির ঘটনা ঘটেছে। মারামারিতে আমি ছিলামও না। মূলত মিথ্যা অভিযোগে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।
সাপলেজা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিরাজ মিয়া বলেন, যাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার মামলা হয়েছে তারা স্থানীয় সংসদ সদস্যের পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটায়। বিভিন্নজনের সাথে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে মানুষকে হয়রানি করে। ওদের বিরুদ্ধে মামলা করে এলাকাছাড়া গৃহবধূ—এমন তথ্য আমি আজই শুনেছি। বিষয়টির খোঁজ নিচ্ছি। এমনটা হলে আমরা সকলে নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর পাশে থাকবো।
মঠবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহা. নূরুল ইসলাম বাদল বলেন, ধর্ষণচেষ্টার মামলা করার পরে আসামীরা হুমকি দিয়েছে এমন অভিযোগে একটি সাধারণ ডায়েরী হয়েছে। ডায়েরিটি অগ্রবর্তী করা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এসএমএইচ
