ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫

Motobad news

ভারতে যাচ্ছে স্বরূপকাঠির সুপারি, মৌসুমে শতকোটির বাণিজ্য

ভারতে যাচ্ছে স্বরূপকাঠির সুপারি, মৌসুমে শতকোটির বাণিজ্য
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে উৎপাদিত সুপারি দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভারতেও রপ্তানি করা হচ্ছে। এখানকার সুপারি মানসম্পন্ন হওয়ায় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ভারতেও এর চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ভারতের হুগলি জেলার চুঁচুড়া ও চন্দননগর এলাকায় স্বরূপকাঠির সুপারির বেশ চাহিদা রয়েছে। তাই এখান থেকে শত শত মণ সুপারি ভারতে চালান দেওয়া হয়।


প্রতি মৌসুমে এই উপজেলায় প্রায় ১০০ কোটি টাকার সুপারি বেচাকেনা হয়।  

পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলা একটি বাণিজ্যিক এলাকা। এখানকার উৎপাদিত পেয়ারা, আমড়া, লেবু, নারকেল, পান, সুপারিসহ নানা ধরনের পণ্যের সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। এখানকার উৎপাদিত পণ্য দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে। বছরজুড়ে সুপারির ব্যবসা চলমান থাকলেও মূলত বছরের আশ্বিন ও কার্তিক মাস সুপারির ভরা মৌসুম। এ সময় উপজেলার সদরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের জগন্নাথকাঠি, ইদিলকাঠি, কুড়িয়ানা, সমুদয়কাঠি, করফা, কামারকাঠি, মাদ্রা, সোহাগদল, শশীদলসহ অন্তত ১৫টি হাটে সুপারি বেচাকেনা হয়।

সোমবার (৭ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে উপজেলার পৌর শহরের জগন্নাথকাঠি বন্দরের হাটে ঘুরে দেখা গেছে, সকাল ৮টার মধ্যেই হাট ক্রেতা-বিক্রেতায় মুখরিত হয়ে যায়। ওই বাজারে ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ১১টি আড়ত রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সুপারি নিয়ে বিক্রেতারা হাটে আসছেন। হাটে তিন ধরনের সুপারি আসে। এগুলো হলো কাঁচা-পাকা, শুকনো এবং খোসা ছাড়ানো। এর মধ্যে কাঁচা-পাকা সুপারি ‘কুড়ি’ হিসেবে বিক্রি করা হয়। ২১০টি সুপারিতে এক কুড়ি হয়, বর্তমান হাটে এর মূল্য ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এ ছাড়া শুকনা সুপারির প্রতিমণ ১৩ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকা এবং খোসা ছাড়ানো সুপারি প্রতি মণ ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় আড়তদাররা এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা এক শ্রেণির বেপারী এখান থেকে সুপারি ক্রয় করে বস্তায় ভরে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, গৌরনদী, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠিয়ে দেন। খুলনা ও বাগেরহাটসহ আশপাশের সীমান্তবর্তী অনেক ব্যবসায়ী এখান থেকে সুপারি ক্রয় করে ভারতের হুগলিসহ কয়েকটি এলাকায় চালান দেন।  

উপজেলার প্রায় এক হাজার ব্যবসায়ী এবং আরো অন্তত ৯ হাজার নারী-পুরুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই ব্যবসায় জড়িত থেকে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। এর মধ্যে আড়তে কর্মরত শ্রমিকের বেতন দিনে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়িতে বসে শত শত নারী সুপারির খোসা ছাড়ানোর কাজ করে থাকেন।  

উপজেলার জলাবাড়ী ইউনিয়নের কামারকাঠি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিভিন্ন বাড়িতে নারীরা সুপারির খোসা ছাড়ানোর কাজ করছেন। স্থানীয়ভাবে কুড়ি হিসেবে এক হাজার সুপারির (১০ হাজার ৫০০) খোসা ছাড়িয়ে তারা ৪০০ টাকা পান।  

জগন্নাথকাঠি বন্দরের মেসার্স শংকর লাল সাহার আড়তে কথা হয় আড়তদার কার্তিক সাহার সাথে। তিনি জানান, এ বছর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে বৃষ্টি কম হওয়ায় ফলন কম হয়েছে। এ ছাড়াও ঘূর্ণিঝড় বুলবুল, আইলা, আম্ফানসহ বিগত কয়েক বছরের ঘূর্ণিঝড়ে এই এলাকার বহু সুপারিগাছ নষ্ট হওয়ায় বাজারে সুপারি কম, কিন্তু দাম বেশি।  

ওই বন্দরের এস কে ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী কাজী শিমুল জানান, প্রতি সপ্তাহে হাটে অন্তত ৫০ লাখ টাকার সুপারি বেচাকেনা হয়। আর পুরো মৌসুমে এই উপজেলায় প্রায় ১০০ কোটি টাকার সুপারি বেচাকেনা হয়ে থাকে। তবে পরিবহনসহ লেবার ও শ্রমিকের বেতন বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বছর তাদের লাভ অনেকটা কম হচ্ছে বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মাহাবুব উল্লাহ মজুমদার জানান, এই উপজেলায় সুপারি ব্যবসার সাথে বিভিন্নভাবে জড়িত থেকে কয়েক হাজার মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। পাশাপাশি এখানকার সুপারি ব্যবসা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন