আন্দোলন নিয়ে মুখ খুললেন বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ অধ্যক্ষ


বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অপসারণের দাবিতে কিছু দিন ধরেই আন্দোলন চালিয়ে আসছেন সেখানকার শিক্ষক-কর্মচারীরা। দাবি করা হচ্ছে তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন সেখানকার কিছু শিক্ষার্থীও। তাদের দাবি একটাই অধ্যক্ষের অপসারণ।
তাদের এই কথিত আন্দোলন নিয়ে অবশেষে মুখ খুলেছেন সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিদায়ী অধ্যক্ষ মেজর সাহিদুর রহমান। তিনি এই আন্দোলনকে উদ্দেশ্যমূলক ষড়যন্ত্র বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন।
একান্ত আলাপে অধ্যক্ষ সাহিদুর রহমান জানিয়েছেন, ‘২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজটি ২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয়করণ করা হয়। এরপর প্রতিষ্ঠান ও তার শিক্ষক-কর্মচারীদের সরকারি আত্মীকরণ সম্পন্ন হয় ২০২০ সালের ২৬ জুলাই। পরবর্তী ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি সরকারের রাজস্ব খাত থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বরাদ্দ হয়।
সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে গত ফেব্রুয়ারি থেকে সরকারি বরাদ্দে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান শুরু হয়। জাতীয়করণের তারিখ ২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বেতন ধরে তাদের স্ব স্ব পদের প্রারম্ভিক বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে।
অধ্যক্ষ সাহিদুর রহমান বলেন, ২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয়করণের পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি নির্দেশের আলোকে পূর্বের মত শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে বেসরকারি হারে বেতন গ্রহণ অব্যাহত রাখা হয় এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের ও পূর্বের মত বেতন ভাতা কলেজ তহবিল থেকেই প্রদান করা হয়।
এভাবে ২০২০ সালের মে মাস পর্যন্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা মূল বেতনের ১৩টি ইনক্রিমেন্টসহ প্রদান করা হয়। বর্তমানে সরকারি নির্দেশে বরিশাল বিভাগীয় হিসাব রক্ষণ অফিস কর্তৃক নির্ধারিত বেতন স্কেল অনুযায়ী শিক্ষক-কর্মচারীদের ২০২০ সালের মে মাস মাত্র দুটি ইনক্রিমেন্ট নির্ধারিত হয়েছে।
তিনি উল্লেখ করে বলেন, ‘শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্মীকরণ ২০২০ সালের ২৬ জুলাই সম্পন্ন হলেও সরকারি হিসেবে তাদের এডহক যোগদান ২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে করা হয়েছে। এমনকি ওই দিন থেকেই তাদের প্রাপ্য বেতনও নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের বেসরকারি তহবিল থেকে সরকারিভাবে বেতন নির্ধারণের পূর্বে গৃহীত বেতন-ভাতাতে স্বপদের মূল বেতনের অতিরিক্ত ১১টি ইনক্রিমেন্ট সহকারে যাবতীয় বেতনাদি গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানের কাছে অতিরিক্ত অর্থ দেনা হয়েছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।
অধ্যক্ষ সাহেদুর রহমান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অর্থ আদায়ের ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানকেই উদ্যোগ নিতে হবে। বিধায় চলতি বছরের গত ২৭ মে শিক্ষক-কর্মচারীদের অতিরিক্ত বেতন কিভাবে প্রতিষ্ঠানে ফেরত দিবেন সে বিষয়ে তাদের কাছে নোটিশের মাধ্যমে জানতে চাওয়া হয়। এতেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।
প্রতিষ্ঠানের পাওনা পরিশোধ না করতেই কিছু উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষকের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানের অমঙ্গল কামনাকারী বহিরাগতসহ অন্যান্যদের উসকানীতে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তথা কথিত অসহযোগ ও তার অপসারণের দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলন সরকারি চাকুরিজীবীদের জন্য শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ বলেও মনে করেন তিনি।
অধ্যক্ষ অভিযোগ করেছেন, ‘শিক্ষক-কর্মচারীদের এ ধরনের ন্যাক্কারজনক কাজের আরও একটি কারণ রয়েছে। তা হল ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি রাজস্ব খাতে বরাদ্দ হওয়া সমুদয় বেতন-ভাতা পেতে চান তারা। ওই বরাদ্দে প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের তারিখ থেকে প্রত্যেকের পদের প্রারম্ভিব মূল বেতন ধরে বর্তমান অর্থ বছর পর্যন্ত অর্থের যোগান দেয়া হয়েছে।
শিক্ষক কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে ২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২০ সালের মে মাস পর্যন্ত মোট ২ বছর ৮ মাস ১৩ দিনের বেতন প্রাপ্যের চেয়ে বেশী মূল বেতনের ইনক্রিমেন্টসহ পেয়ে পুনরায় সরকারি বরাদ্দের ওই একই সময়ে বেতন ভাতা পাওয়ার দাবি জানান।
যেহেতু পুনরায় সরকারি বরাদ্দের ওই দুই বছর ৮ মাস ১৩ দিনের বেতন দিলে একই সময়ে একই ব্যক্তির দুটি বেতন হয়ে যায়, সেহেতু এই বেতন অধ্যক্ষ দিতে পারেননি। এক্ষত্রে অধ্যক্ষ ২০২১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা পরিচালক এবং ১৪ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা বরাবর পরামর্শের জন্য পত্র প্রেরণ করেন। কিন্তু অদ্যবধি ওই পত্রের জবাব আসেনি।
তবে মৌখিকভাবে দুটি দপ্তর থেকে সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তাগণ জানিয়েছেন, ‘বাজেট বরাদ্দ আসলেও অধ্যক্ষ আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা হিসেবে শুধুমাত্র প্রাপ্য বেতন প্রদান করবেন। অধ্যক্ষ কোন ক্রমেই প্রাপ্যের চেয়ে বেশী বেতন প্রদান করতে পারবেন না। এটি নিশ্চিত করা অধ্যক্ষের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।’
অধ্যক্ষ অভিযোগ করে বলেন, ‘দুইবার বেতন গ্রহণ রোধ করা এবং প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে প্রাপ্যের চেয়ে বেশী বেতন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ফেরতের উদ্যোগের কারণে শিক্ষক কর্মচারীরা সরকারি কর্মচারীদের আচরণ বিধির ন্যূনতম অনুসরণ না করে দায়িত্বজ্ঞান শূন্য হয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে। এতে শুধু অধ্যক্ষের একার নয়, বরং প্রতিষ্ঠানেরও মানক্ষুণœœ হচ্ছে বলেন তিনি।
এসময় তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিজের স্বার্থে কিছু করছি না। প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী হিসেবে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব বিধি অনুযায়ী পরিপালনের চেষ্টা করছি। প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিবেদনটি প্রকাশের মাধ্যমে অত্র কলেজের বর্তমান ও সাবেক সকল শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে প্রকৃত সত্য ঘটনা প্রকাশ পাবে বলেও আশাবাদী তিনি।
এমবি
