সৌরবাতি বদলে দিয়েছে মঠবাড়িয়ার উপকূলের মানুষের জীবন-যাত্রা


তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া দুর্গম উপকূলে। প্রাচীন আমলের কেরোসিনের বাতি আর হারিকেনের পরিবর্তে ঘরে ঘরে এখন জ্বলছে সৌরবাতি। এই বাতির আলোয় আলোকিত হচ্ছে আধুনিক সুবিধাবঞ্চিত উপকূলের ঘর-বাড়ি। উপকূলীয় জনপদ মানেই ছিল সন্ধ্যার পর ঘুটঘুটে আঁধার। দুর্গম চর আর গ্রামের মেঠোপথ ছিল পথচারীদের কাছে ‘আতঙ্ক’। গ্রামের হাট থেকে বাড়ি ফিরতে হতো দলবেঁধে।
টর্চলাইট আর হারিকেনই ছিল যাত্রা পথের ভরসা। এখন টর্চলাইট-হারিকেন দেখাই যায় না। উপকূলীয় জনপদে এখন জ্বলছে স্ট্রিট লাইট। সৌর বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত প্রতিটি গ্রাম। সন্ধ্যা নামলেও আর কোন সমস্যা নেই। সড়ক, হাট-বাজার ও মেঠোপথ থাকে আলোয় আলোয় ভরা।
সরেজমিনে গেছে উপকূলীয় এলাকা সৌর বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় ভাবে জ্বলে উঠছে এসব বাতি। লোডশেডিংয়ের ঝামেলা না থাকায় এ সড়ক বাতিগুলো আলো দেয় সারা রাত। ছোট ছোট নৌকা, ট্রলার, বনের মধ্যে ছোট্ট কুঁড়ে কিংবা সাগর পাড়ের জেলেপল্লীর সারি সারি ঘর সৌর আলোয় ঝলমলে। কোথাও কোথাও রেডিও, টেলিভিশন বা মিউজিক প্লেয়ারে গান-বাজনার শব্দও শোনা যায়। রাতের আধাঁর দূর করতে জ্বালানি তেল কেরোসিন কেনা প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন লোকজন।
সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারকারীরা জানান, রাতে বাতি জ্বালানোসহ বৈদ্যুতিক পাখা ও টেলিভিশন চালানোর মতো সুবিধা পাওয়ায় সূর্যবাতি উপকূল অঞ্চলে খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বেশ কয়েকজন জেলে জানান, আর বাতাসে বাতি নিভে যাবার ভয় নেই। মাছ ধরি, আর ভালোভাবে জীবন কাটাই। এখন আর অন্ধকারের দুশ্চিন্তায় পড়ে থাকতে হয় না।
উপজেলার খেজুর বাড়িয়া গ্রামের বলেশ্বর নদীর তীরে বাসিন্দা জব্বার আলী ও রহিমা বেগম জানান, আগে কেরোসিন দিয়ে কুপি জ্বালিয়ে ছেলে-মেয়েরা লেখা-পড়া করতো। বেশিক্ষণ পড়া-লেখা করতে পারতো না। বর্তমানে সৌর বিদ্যুতের আলোয় রাত জেগে পড়া-লেখা করতে পারে তারা।
হোগলপাতি গ্রামের রাস্তার পাশে দোকানী ইউনুস হাওলাদার জানান, দোকানটিতে সৌরবিদ্যুৎ থাকায় অনেক রাত পর্যন্ত বেচা-কেনা চলে, ফলে বিক্রিও বেড়ে গেছে।
কৃষক ইউসুফ আলী জানান, সৌর বিদ্যুতের কারণে প্রয়োজনীয় কাজগুলো সহজে সেরে নেয়া যায়। সৌর বিদ্যুতের সোলার পাম্প দিয়ে সেচ কাজ চালিয়ে যেতে পারছেন। এতে খরচ অনেক কম পড়ে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নাসির হোসেন হাওলাদার বলেন, বিদ্যুতের পাশাপাশি সৌর বিদ্যুৎ এর কারনে মানুষের জীবন-যাত্রা অনেক সহজ হয়েছে। সৌর বিদ্যুতে লোডশেডিংয়ের কোন সুযোগ নেই। সন্ধ্যা খেকে সারা রাত জ্বলে। এতে বিভিন্ন ধরনের অপরাধও কমে গেছে।
এইচকেআর
