জাপা নেতাকে কুপিয়ে পা বিচ্ছিন্নের ঘটনার মামলায় ৪ আসামির জামিন না মঞ্জুর


পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় চাঞ্চল্যকর জাতীয় পার্টি নেতা শফিকুল ইসলামকে কুপিয়ে পা বিচ্ছিন্ন করে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় মামলায় উচ্চ আদালতে আগাম জামিনে থাকা এজাহার ভুক্ত ছয় আসামি আজ রোববার দুপুরে পিরোজপুর চীপ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করলে দুই জনের জামিন মঞ্জুর করে চার আসামিকে জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন বিজ্ঞ আদালত ।
জামিন না হওয়া আসামিরা হচ্ছেন সগির মিয়া (৪০), খাইরুল ইসলাম মুছা শরীফ (৬০), বশীর পঞ্চাইত (৩৫) ও হুমায়ূন (৩০)। এর আগে ২০ নভেম্বর মটর সাইকেল চালক বাবুকে গ্রেপ্তার করেছে মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা মঠবাড়িয়া থানার ওসি (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাবু এজাহারভুক্ত আসামি না হলেও তদন্তে তাঁর ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এর আগে মূল আসামি ইয়াসিনকে ঢাকা লালবাগ থানাধীন বেড়িবাধ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর তথ্য মতে হামলায় ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র পৌর শহরের বহেরাতলা এলকার খাল থেকে উদ্ধার করা হয়। ইয়াছিন বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে। সে তুষখালী গ্রামের মো. হাফেজ খানের ছেলে।
অপরদিকে হামলার দিন গত ২৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরেই শফিকুল ইসলামকে হত্যার পরিকল্পণাকারী তুষখালী ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান হাওলাদারের ভাই তুষখালী বাজারের মুদি দোকানী নাসির হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। নাসির হোসেনও বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে। আহত শফিকুল ইসলাম তুষখালী গ্রামের আইয়ূব আলী শিকদারের ছেলে ও তুষখালী ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক।
থানা সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব বিরোধের জেরে দুই বছর আগে আড়াই লাখ টাকায় জাতীয় পার্টির নেতা শফিকুল ইসলামকে হত্যার পরিকল্পণা করে তুষখালী ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান হাওলাদারের ভাই তুষখালী বাজারের মুদি দোকানী নাসির হোসেন। ভাড়াটে কিলার হিসেবে ইয়াছিনের সাথে চুক্তি হয় আড়াই লাখ টাকায়। বিভিন্ন সময় বিকাশের মাধ্যমে চুক্তির টাকা পরিশোধও করা হয়। শফিকুলকে হত্যার পরিকল্পণা অনুযায়ী ইয়াসিনসহ তাঁর ৫ সহযোগিদের নিয়ে ২৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার উপজেলা ঝাউতলার একটি বাসায় একত্রিত হয়। ২৮ সেপ্টেম্বর বুধবার বাজার থেকে ৯’শ টাকায় ৩টি দারালো ‘দা’ ক্রয় করে। ২৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে হত্যার পরিকল্পণাকারী তুষখালী ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান হাওলাদারের ভাই তুষখালী বাজারের মুদি দোকানী নাসির হোসেন জাপা নেতা শফিকুল ইসলামের অবস্থান ও তথ্য ওঁৎ পেতে থাকা ইয়াসিনকে মোবাইলের মাধ্যমে অবহিত করে।
স্থানীয় বাসিন্দা মুসা শরীফের সাথে চলমান একটি মামলায় শফিকুল আদালতে হাজিরা দিতে সকালে মোটর সাইকেল যোগে তুষখালী থেকে মঠবাড়িয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। মাঝের পুলের সন্নিকটে ফরাজি বাড়ির সামনে কালভার্ট এর উপরে আসা মাত্রই একটি মহেন্দ্র গাড়ি শফিকুলের মটর সাইকেলকে ধাক্কা দেয়। শফিকুল মোটর সাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে পিছনের দিকে দৌড় দিলে হামলাকারীরা মাহেন্দ্র থেকে নেমে তাকে ধাওয়া করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে বাম পা বিচ্ছিন্ন করে। এ সময় এলোপাতাড়ি কোপানোর কারণে শফিকুলের পেটের ভুড়ি বেড়িয়ে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জখম হয়। হামলাকারি ইয়াসিন ও তাঁর সহযোগিরা ৪ কিলোমিটার দূরে বহেরাতলা এলাকার খালে ধারালো অস্ত্রগুলো ফেলে দিয়ে মাহেন্দ্র যোগে পালিয়ে যায়। মাহেন্দ্র চালককে ৫ হাজার ও অপর ৩ সহযোগিকে ১৫ হাজার টাকা প্রদান করে ইয়াসিন।
স্থানীয়রা গুরুতর আহত শফিকুল ইসলামকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানেও তাঁর অবস্থার অবনতি হলে শেবাচিম হাসপাতালের চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাপলে প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় ওই দিন বিকেলে ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান হাওলাদারের ভাই নাসির হাওলাদারকে আটক করে। পরে নাসিরসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আহত শফিকুলের মা মমতাজ বেগম মামলা করেন। ১ অক্টোবর হামলায় ব্যবহৃত মাহেন্দ্র গাড়িটি পাশ্ববতী ভাণ্ডারিয়া উপজেলার ইকড়ি ইউনিয়নের শিংখালী গ্রাম থেকে পরিত্যাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তবে চালক পলাতক রয়েছে।
এইচকেআর
