মেয়াদ শেষ, কাজ শুরু হয়নি


খালের ওপর সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে গত বছরের জুলাইয়ে। এক বছরের ওই প্রকল্পের মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। তবে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়নি।
সেতুটি নির্মাণ হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন এলাকাবাসী। পিরোজপুর সদর উপজেলার টোনা খালের ঋষিবাড়ি এলাকার গার্ডার সেতু নির্মাণ করার কথা। এই প্রকল্পে কার্যাদেশ দেওয়া হয় গত বছরের ২৩ জুলাই। ২০২২ সালের ২৩ মে কার্যাদেশের মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই মাস আগে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। কাজ শুরুর জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে তিন দফা চিঠি দিয়েও কাজ হয়নি।
উপজেলার উত্তর টোনা গ্রামের বাসিন্দা পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সাইফুল খান (২১) বলেন, পাঁচ বছর আগে টোনা খালের লোহার তৈরি সেতুটি ভেঙে যায়। এর পর থেকে স্থানীয় গ্রামবাসী ও শিক্ষার্থীরা নৌকায় পারাপার হয়ে আসছেন। সেতুটি নির্মিত হলে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় ও কলেজে যাওয়া-আসা এবং হাটবাজারে যাতায়াত সহজ হতো। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার ছয় মাস পরও সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। সেতু নির্মাণ আদৌ হবে কি না, সন্দেহ রয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) পিরোজপুর সদর উপজেলার প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এক যুগ আগে সদর উপজেলার টোনা খালের ঋষিবাড়ি এলাকার ৫১ মিটার দৈর্ঘ্যের লোহার সেতুটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের কয়েক বছর পর সেতুটি বালুবাহী কার্গোর ধাক্কায় নড়বড়ে হয়ে পড়ে। ২০১৭ সালের শেষ দিকে সেতুটি ভেঙে খালের মধ্যে পড়ে যায়।
২০২১ সালের ২৩ জুলাই পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে টোনা খালে গার্ডার সেতু নির্মাণের জন্য মেসার্স ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্সকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশ অনুয়ায়ী এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করে। সম্প্রতি দেখা যায়, টোনা খালের সেতুটি ভেঙে পড়ে আছে। সেতুর পশ্চিম প্রান্তে উত্তর-পূর্ব টোনা গ্রাম। পূর্ব প্রান্তে দাউদপুর বাজার।
খালের দুই পাড়ের মানুষ ও শিক্ষার্থীরা ভেঙে যাওয়া সেতু এলাকায় একটি নৌকায় করে পারাপার হচ্ছে। উত্তর-পূর্ব টোনা গ্রামের চারজন বাসিন্দা বলেন, টোনা ইউনিয়নের উত্তর-পূর্ব টোনা, চল্লিশা ও লখাকাটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ নৌকা দিয়ে খাল পার হয়ে দাউদপুর বাজারে যাতায়াত করে।
এ ছাড়া দাউদপুর পল্লী মিলন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পুখুরিয়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পুখুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চলপুখুরিয়া টেকনিক্যাল কলেজ ও পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের কয়েক শ শিক্ষার্থী নৌকায় পারাপার হয়। অপর দিকে কলাখালী ইউনিয়নের কলাখালী, চরপুখুরিয়া ও দাউদপুর গ্রামের বাসিন্দাদের উত্তর-পূর্ব টোনা গ্রামে জমিজমা রয়েছে। এসব জমির মালিকেরা নৌকায় পার হয়ে যাওয়া-আসা করেন।
পুখুরিয়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী রিতু আক্তার বলেন, ‘সেতুটি ভেঙে যাওয়ার পর খেয়া পারাপার হয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করছি। ভেবেছিলাম, সেতুটি নির্মাণ হলে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি দূর হবে। কিন্তু সেতুটি এত দিনেও নির্মিত হলো না।’ নৌকার মাঝি মেহেদী হাসান বলেন, প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ মানুষ পারাপার হয়। শিশুরা নৌকায় উঠতে গিয়ে মাঝেমধ্যে খালে পড়ে যায়।
টোনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইমরান আলম খান বলেন, এটি এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সেতু। এর কাজ দ্রুত শুরু করার দাবি জানান তিনি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স কর্তৃপক্ষের পিরোজপুরের প্রতিনিধি ও সাব ঠিকাদার হিসেবে রয়েছেন বায়েজিদ হোসেন।
তিনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান। রোববার বায়েজিদ হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠিয়েও তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি। উপজেলা প্রকৌশলী হরষিত সরকার বলেন, যথাসময়ে কাজ শুরু না করায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ শুরু করার জন্য তিন দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে। চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু না করা হলে কার্যাদেশ বাতিলের সুপারিশ করা হবে।
এইচকেআর

 
                 
                                 
                                             
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                     
                                     
                                    