ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

Motobad news

মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ায় বাড়ছে কুকুরের মাংসের ব্যবসা

মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ায় বাড়ছে কুকুরের মাংসের ব্যবসা
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

ইন্দোনেশিয়ার ২০ কোটি ৭০ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় ৭ শতাংশ মানুষ কুকুরের মাংস খায় অনুমান করা হয়। বেসামরিক চাকরিজীবী সিলাস সিহোম্বিং-এর জন্য কুকুরের মাংস খাওয়ার কারণ খুবই সহজ। কুকুরের মাংস মুখে নিয়ে বার্তা সংস্থা আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘আজ আমি কুকুর খাচ্ছি কারণ আমি ক্ষুধার্ত। ইন্দোনেশিয়ার উত্তর সুমাত্রার মেদানের লাউ ডিম্বো সিমালেম রেস্তোরাঁয় গ্রিলড করা কুকুর খাচ্ছিলেন সিহোম্বিং। 

“দেখ, এটা আমাকে ঘামাচ্ছে। কুকুরের মাংস আপনাকে শরীর গরম করে ফেলবে।” পুরো মেদান শহরজুড়ে কুকুরের মাংসের রেস্তোরাঁ পাওয়া যায়, যেখানে আদিবাসী বাটাক সম্প্রদায়ের মানুষ প্রোটিনের স্বাদ নিতে আসে। কুকুরের মাংসের ব্যবসার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো দল ‘ডগ মিট ফ্রি ইন্দোনেশিয়া’-এর মতে, প্রায় ৭ শতাংশ ইন্দোনেশিয়ান কুকুরের মাংস খায়। যদিও ইন্দোনেশিয়ার ২০ কোটি ৭০ লাখ লোকের ৮৭ শতাংশ মুসলিম এবং তারা শুকরের মাংসের মতো কুকুরের মাংসকেও হারাম বা নিষিদ্ধ হিসেবে দেখে।

 জনসংখ্যার প্রায় ৯ শতাংশ খ্রিস্টান। কুকুরের মাংস প্রায়শই দেশের খ্রিস্টান প্রধান অংশে খাওয়া হয়, যেমন উত্তর সুমাত্রা, উত্তর সুলাওয়েসি এবং পূর্ব নুসা টেঙ্গারা, যেখানে জনসংখ্যার মাত্র ৯ শতাংশ মুসলিম। যদিও পশু অধিকার গোষ্ঠীগুলি এই বাণিজ্যে আপত্তি জানায় যে এটি নিষ্ঠুরতার প্রচার করে এবং জলাতঙ্কের প্রাদুর্ভাবের মতো জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি করে। অনেক ইন্দোনেশিয়ান কুকুরের মাংস খাওয়াকে মুরগির মাংস বা গরুর মাংস খাওয়ার মতো মনে করে না এবং এটি নিষিদ্ধ করার পরামর্শ দিয়ে। 

ইস্ট নুসা টেঙ্গারার মোলোতে অবস্থিত লেখক এবং খাদ্যকর্মী ডিকি সেন্ডা আল-জাজিরাকে বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই প্রদেশে কুকুরের মাংসের ব্যবসা বেড়েছে। এর প্রমাণ এখানে কুকুরের মাংসের রেস্টুরেন্ট বৃদ্ধি। আমাদের গবেষণা অনুসারে, মোলো লোকেরা ঐতিহ্যগতভাবে কুকুর খায় না। মোলো সংস্কৃতিতে কুকুরগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী যেগুলো বন্ধু এবং আত্মীয় হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এই কারণেই কুকুরের ছবি মানুষের জামায় প্রিন্ট করা একটি স্বাভাবিক বিষয়।

 

 কৃষি এবং শিকারী সম্প্রদায়ে কুকুরকে সহায়ক প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেন্ডা বলেন, আমি জানি না এটি ঠিক কখন শুরু হয়েছিল, তবে এখন কুকুর খাওয়া আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পূর্ব নুসা টেংগারায় কুকুরের রেস্তোরাঁর জনপ্রিয়তা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে কুকুরের মাংস ব্যবসায়ীরা চাহিদা ও সরবরাহের কারণে লড়াই পর্যন্ত করেছে। এর ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা রাস্তার কুকুরকে পটাসিয়ামযুক্ত খাবার দিয়ে অচেতন করে নিয়ে যায়, তবে এটা মাংসকে প্রভাবিত করে না। আমি গত কয়েক বছরে এইভাবে পাঁচ বা ছয়টি কুকুর হারিয়েছি। 

প্রাণী অধিকার রক্ষাকারীরা বলছেন ইন্দোনেশিয়ার কুকুরের মাংসের ব্যবসা অমানবিক। এই জাতীয় সংগঠনগুলো অনেক বছর ধরে কুকুরের মাংস নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারের কাছে তদবির করেছে। ফলে বেশ কয়েকটি রাজ্যে সরকার তাদের স্থানীয়ভাবে রাজ্যে কুকুরের মাংস বিক্রি করাকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। 

গত বছর, সেন্ট্রাল জাভাতে একজন কুকুরের মাংস ব্যবসায়ীকে প্রথমবারের মতো বিচার করা হয়েছিল। কুকুরের মাংস ক্যাফে এবং রেস্তোরাঁয় পরিবহনের জন্য একটি ট্রাকে ৭০ টিরও বেশি কুকুর বস্তাবন্দী অবস্থায় পাওয়া যাওয়ায় ব্যবসায়ীকে ১০ মাসের জেল এবং ১০ হাজার ডলার জরিমানা করা হয়। গত ৬ জুলাই মেদানের মেয়র ববি নাসুশন স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে কুকুরের মাংস বিক্রি বা ব্যবসা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। 

এরপর আন্দোলন জমে উঠলে মেয়রের অফিসের একজন মুখপাত্র স্পষ্ট করেছেন যে, চিঠিটি কুকুরের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করেনি তবে এটি কেবল একটি পরামর্শ ছিল। সিহম্বিং- যিনি ছোটবেলা থেকেই কুকুর খাচ্ছেন, তিনি মাংস নিষিদ্ধ করার কারণ দেখতে পাচ্ছেন না। আপনি বাঘ বা হাতিদের মারতে পারবেন না কারণ তারা বিপন্ন এবং তাদের প্রজনন করাও অনেক কঠিন। তবে এখানে প্রচুর কুকুর রয়েছে। যখন তারা বাচ্চা জন্ম দেয়, তখন তাদের সাধারণত বড় বড় আরও অনেক কুকুরছানা থাকে। আপনি যদি খাওয়ার জন্য অন্য কোনো প্রাণীকে মারতে পারেন পারেন তবে কুকুরকে হত্যা করে খাওয়ার অনুমতি দেয়া উচিত।

লাউ ডিম্বো সিমালেম রেস্টুরেন্টের মালিক মারিয়া তারিগান বলেন, যদিও বাটাকের সকল মানুষ কুকুর খায় না। তবে অনেকে এর মাংস ঔষধ হিসেবে খাওয়াকে সমর্থন করে। যদিও এটা অপ্রমাণিত দাবি যে, এটি বিভিন্ন রোগ নিরাময় করতে পারে। কুকুরের মাংস টাইফাস এবং ডেঙ্গু জ্বরের জন্য ভাল এবং আপনার করোনা থাকলে এটি আরও উপকারে আসতে পারে। আমি নিজেই এর প্রমাণ। 

আমি করোমায় অসুস্থ ছিলাম এবং তারপরে আমি কুকুরের স্যুপ পান করেছিলাম এবং এটি আমাকে আরও ভাল করে তুলেছে। করোনা মহামারীর প্রকোপের সময় রেস্তোরাঁটি কুকুরের স্যুপের ব্যাপক ব্যবসা করেছিল। তারিগান বলেছিলেন, গ্রাহকরা সেখানে ভিড় করেছিলেন এবং হাসপাতালে থাকা অসুস্থ আত্মীয়দের সুস্থ করে তুলতে কুকুরের স্যুপের অর্ডার করেছিলেন। কিন্তু কুকুরের মাংসের রেস্তোরাঁর মালিক হওয়ায় তারও নিজস্ব কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। 

তারিগান বলেন, জনপ্রিয় ইন্দোনেশিয়ান অনলাইন ফুড ডেলিভারি অ্যাপ গোফুড-এর সাথে ব্যবসার নিবন্ধন করলে তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়। তারিগান বলেছেন, তার ধারণা তিনি নিবন্ধন করতে সক্ষম হননি কারণ তার রেস্তোরাঁয় কেবল কুকুরের মাংস পরিবেশন করা হয়। আমাদের ২০ জন এজেন্ট আছে যাদের থেকে আমরা আমাদের কুকুরগুলো সংগ্রহ করি। তারা আমাকে ফোন করে এবং আমাকে জানায় কখন তাদের সংগ্রহে কুকুর আছে। আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের কুকুর এনেছি। 

যদি একটি কুকুরের কুকুরছানা থাকে তবে মালিকরা আমাদের কাছে কুকুরছানাগুলো দিতে চায় না যেন সেগুলো অন্য কোথাও বিক্রি করতে পারে। তারিগান বলেন, তার রেস্তোরাঁ সাধারণত চাহিদা বজায় রাখতে প্রতিদিন তিন বা চারটি কুকুর জবাই দেয়া হয়। প্রতি সপ্তাহে ২১টি কুকুর জবাই হয়। যদি আমার একটি কুকুর থাকত এবং তার সাথে কিছু ঘটতো তবে অবশ্যই আমি কাঁদতাম। বিশেষ করে যদি এটি প্রতিদিন আমার সাথে থাকত এবং যখন আমি বাড়িতে আসি তখন তার লেজ নাড়ত। 

যদি এটি সারাদিন আমার পাশে থাকত, অবশ্যই আমি এটির সাথে মানসিকভাবে সংযুক্ত থাকতাম। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, অন্য প্রাণী খাওয়ার সাথে এর পার্থক্য কী? 

সূত্র: আল-জাজিরা


এসএমএইচ
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন