গৌরনদীতে সূর্যাস্তের পরে জমে ওঠে পানের পাইকারি হাট


বেলা গড়াতে গড়াতে যখন সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ে, নিভে যায় দিনের আলো, চারপাশে নেমে আসে কালো অন্ধকার ঠিক তখনই জমে ওঠে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার একটি ব্যতিক্রমধর্মী হাট। সাধারণ হাটবাজার যেখানে দিনের আলোতেই জমে ওঠে, সেখানে এই পানের হাট শুরু হয় সন্ধ্যার পর।
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার গৌরনদী উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে টরকী, নীলখোলা ও কসবা এলাকায় প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এ পানহাট। বৃহস্পতিবার ও সোমবার বাদে প্রতিদিন এখানে হাজার হাজার ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম ঘটে। চলে কোটি টাকার বেচাকেনা।
পানের পাশাপাশি এখানে গড়ে উঠেছে নানা কৃষিপণ্য ও স্থানীয় প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার। এই হাট গৌরনদীসহ আশপাশের অঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। একটি পানের আড়তে প্রতিদিন কাজ করেন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন শ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করছেন।
হযরত শাহজালাল পান আড়ৎ এর মালিক মিঠুন মিত্র জানান, সপ্তাহে পাঁচ দিন এখানে হাট বসে। টরকী বাসস্ট্যান্ডের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে নীলখোলা ও কসবা এলাকায় সোম ও বৃহস্পতিবার হাট বন্ধ থাকে, এছাড়া সপ্তাহে ৫ দিন হাট বসে। এখানে যে সব আড়ৎ রয়েছে এর মধ্যে গাউছিয়া, মোহাম্মাদী, সোনার মদিনা, এলাহী, নিউ সোনার বাংলা, হযরত শাহজালাল , টরকী পান ভাণ্ডার এবং নূর ও নূরানী পান আড়ৎ। প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার পান কেনাবেচা হয় এ হাটে।
পার্শ্ববর্তী উজিরপুর উপজেলা থেকে পান ক্রয় করতে আসা পাইকার শাহজামান তালুকদার বলেন, ‘আমরা এখান থেকে পান কিনে ঢাকা, সিলেট, ফেনী, চৌমুহনীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করি। হাটের মূল আকর্ষণই হচ্ছে পান। আমি নিজেই প্রতিদিন ১০-১২ লাখ টাকার পান কিনি’।
পানচাষি গোরক্ষডোবা গ্রামের জুয়েল মাঝি জানান, গৌরনদী ছাড়াও কালকিনি, মাদারীপুর, ডাসার, আগৈলঝাড়া, মুলাদী, উজিরপুরসহ অন্তত ১০ থেকে ১২ জেলা ও উপজেলা থেকে এ হাটে পান নিয়ে আসেন চাষিরা। বর্তমানে পান আমদানি বেশি হওয়ায় প্রতি বিড়া পানের দাম থাকে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। তবে শীতকালে দাম বেশি থাকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। তিনি বলেন, ‘পান চাষে যে খরচ হয়, উৎপাদনের পর বিক্রি করে তেমন লাভ হয় না’।
শ্রমিক শাকিল হোসেন বলেন, ‘আমি সহ অর্ধ শতাধিক শ্রমিক দিনের বেলা অন্য কাজ করে সন্ধ্যার পর এ পানের হাটে কাজ করে ভালো মজুরি পাই’।
কৃষি উদ্যোক্তা ও ছাত্রনেতা মো. নুরুদ্দিন বুদ্ধি জানান, পানচাষের সঙ্গে জড়িত প্রায় ১ হাজার শ্রমিক রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী তারা দৈনিক ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা মজুরি পান। এ দিয়ে তাদের সংসার ভালো ভাবে চলে।
গৌরনদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সেকেন্দার শেখ জানান, ‘উপজেলায় প্রায় ৬৮০ হেক্টর কৃষিজমিতে পান চাষ হচ্ছে। আমরা পানচাষীদের সব ধরনের প্রযুক্তি ও পরামর্শ সেবা দিয়ে থাকি। অন্য বছরের তুলনায় এবার পানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে’।
এইচকেআর
