ঢাকা শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫

Motobad news

এবার পাঠ্যবই ৩০ কোটি, আন্তর্জাতিক টেন্ডার বাতিলে সিন্ডিকেটের শঙ্কা

এবার পাঠ্যবই ৩০ কোটি, আন্তর্জাতিক টেন্ডার বাতিলে সিন্ডিকেটের শঙ্কা
পাঠ্যবই (ফাইল ছবি)
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য ৩০ কোটিরও কিছু বেশি পাঠ্যবই ছাপা হবে, যা ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের তুলনায় প্রায় ১০ কোটি কম। সরকারের নীতিমালার আওতায় এবারও আন্তর্জাতিক টেন্ডার থেকে সরে এসেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।

এর ফলে দেশীয় মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই টেন্ডার সীমাবদ্ধ থাকায় ‘সিন্ডিকেট’ গঠনের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। তবে এনসিটিবি জানিয়েছে—পাঠ্যবই মুদ্রণ ও সরবরাহে কোনও চক্র যাতে সিন্ডিকেট গঠন করতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি থাকবে। সংশ্লিষ্টদের অভিমত, অসৎ মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঐক্য ভাঙতে না পারলে সরকারের পক্ষে সিন্ডিকেট ভাঙা কঠিন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষেও আন্তর্জাতিক টেন্ডার বাদ দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে রি-টেন্ডারসহ নানা জটিলতায় নির্ধারিত সময়ে বই ছাপানো সম্ভব হয়নি। কম সময়ে বই ছাপতে গিয়ে এনসিটিবিকে ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ বই নিম্নমানের হলেও গ্রহণ করতে হয়েছে। শুধু প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বই ছাপাতে অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকা।


২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকের প্রথম তিন শ্রেণি ও মাধ্যমিকের ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ১২ কোটি ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ১৩৫ কপি বই ছাপাতে হয়েছে প্রাক্কলিত দরের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি দামে। বই ছাপা, বাঁধাই ও সরবরাহে সরকারের ব্যয় দাঁড়ায় ৫৫৭ কোটি ৩০ লাখ ৮৬ হাজার ৭০৫ টাকা। এতে অতিরিক্ত গচ্চা গেছে প্রায় ১১১ কোটি টাকা।

গত বছর অভিযোগ উঠেছিল—কাগজ সরবরাহে অনিয়ম, নিম্নমানের কাগজে বই ছাপা এবং মান নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতা ছিল। একশ্রেণির মুদ্রণ মালিক লাভবান হলেও শিক্ষার্থীরা পেয়েছে নিম্নমানের বই।

বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির (বিএমপিএস) সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান গণমাধ্যমকে বলেন, আন্তর্জাতিক টেন্ডার বাদ দেওয়ায় প্রতিযোগিতা হয়নি, সিন্ডিকেট হয়েছে। এতে সরকারের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।

বিগত সময়ের টেন্ডারের যেসব শর্ত ছিল, তা এবারও আছে উল্লেখ করে তোফায়েল খান বলেন, শর্তের জালে নতুন কেউ টেন্ডারে অংশ নিতে পারছে না। এতে এ বছরও সিন্ডিকেট হয়ে গেছে। এখন শুধু নিম্নমানের কাগজ দিয়ে যাতে কেউ দুর্নীতি না করতে পারে সে জন্য এনসিটিবির যত ধাপে চেক করার সুযোগ রয়েছে, সবটা ঠিকঠাক করলে ভালো মানের পাঠ্যবই পাওয়া যাবে। কিন্তু পরিদর্শন টিমের বিরুদ্ধেই বারবার অভিযোগ ওঠে। প্রতিটি ক্ষেত্রে ম্যানেজ করার সুযোগ না দিলে ভালো বই পাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া লাভ হবে না।

টেন্ডার অগ্রগতি

এনসিটিবি জানায়, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের ৩০ কোটির বেশি পাঠ্যবই ছাপা কাজের টেন্ডার বেশিরভাগ উন্মুক্ত হয়েছে। তবে এখনও কিছু বাদ আছে। তবে ইতোমধ্যে সিন্ডিকেট করে কাজ পাওয়ার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করে ফেলেছেন একশ্রেণির মুদ্রণ মালিকরা।

এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক ড. রিয়াদ চৌধুরী জানান, প্রাথমিকের প্রি-প্রাইমারির একটি প্যাকেজ; প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির জন্য একটি প্যাকেজ এবং চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির জন্য আরেকটি প্যাকেজ রয়েছে। এছাড়া ফোর প্লাস শিক্ষার্থীদের আরেকটি প্যাকেজ রয়েছে। এই চার প্যাকেজের টেন্ডার উন্মুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রি-প্রাইমারি, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির রিপোর্ট তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির রিপোর্ট করে আগামী সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে দেবে এনসিটিবি।

মাধ্যমিকে ক্লাস ধরে ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম  ও নবম এই চার প্যাকেজ। আর মাদ্রাসার একটি প্যাকেজ ইবতেদায়ির প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণি এবং ব্রেইল, এই ছয়টি প্যাকেজ রয়েছে। মাধ্যমিকের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম টেন্ডার উন্মুক্ত হয়ে গেছে। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টমের রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। নবম ও ইবতেদায়ির কাজ চলছে, দ্রুত টেন্ডার উন্মুক্ত হবে।

ইবতেদায়ি ছাড়া প্রাথমিকের পাঠ্যবই ৮ কোটি ৫৯ লাখের বেশি। মাধ্যমিকে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি এবং দশম শ্রেণির কিছু এবং ইবতেদায়ির প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির মোট ২১ কোটি ৪৩ লাখের বেশি।  মোট ৩০ কোটির বেশি।

পাঠ্যবই কমছে ১০ কোটি

গত বছর পাঠ্যবই ছাপা হয়েছে প্রায় ৪০ কোটি। এবার পাঠ্যবই ছাপা হবে ৩০ কোটির কিছু বেশি। কেন ১০ কোটি কম পাঠ্য বই ছাপা হচ্ছে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, গত বছর দশম শ্রেণির পাঠ্যবই আলাদা ছাপতে হয়েছিল প্রায় ৫ কোটি। এবার আরও শারীরিক শিক্ষা, গার্হস্থ্য বিজ্ঞানসহ কয়েকটি বই কম্পোলসারি (আবশ্যিক) ছিল, এবার অপশনাল (ঐচ্ছিক) যার যতটা প্রয়োজন, ততটাই ছাপানো হবে। এছাড়া চাহিদা বারবার যাচাই করে কিছু বই কমেছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ কোটি বই কম ছাপতে হবে।

এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক ড. রিয়াদ চৌধুরীও প্রায় একই তথ্য জানান। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের সময় একটি বিশেষ বিষয় ছিল। এই শিক্ষাবর্ষে কারিকুলাম পরিবর্তনের কারণে নবম ও দশম শ্রেণির আলাদা পাঠ্যবই ছাপাতে হয়েছিল। এ কারণে প্রায় ৫ কোটির মতো বই বেশি ছাপতে হয়েছিল। আর এ সময় ধারণা করে বই ছাপানো হয়েছে। বিতরণ করতে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়তি পাঠ্যবইয়ের চাহিদা থাকে। এবার সমন্বয় করা হয়েছে, বারবার ক্রস চেক করা হয়েছে। এর ফলে যেসব ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চাহিদা মনে হয়েছে, সেসব জায়গায় নতুন করে চাহিদা নেওয়া হয়েছে। এতে দেখা গেছে বেশ কিছু চাহিদা কমেছে।

এসব কারণ ছাড়াও গত বছর কয়েকটি বিষয় আবশ্যিক ছিল। কারিকুলাম পরিবর্তনের কারণে এবার তা অপশনাল করা হয়েছে বলেও জানান রিয়াদ চৌধুরী। তিনি বলেন, এর ফলে যেসব শিক্ষার্থীর জন্য যে বই, সেগুলোই নির্দিষ্ট করে ছাপা হবে। ফলে আরও কিছু বই কমে গেছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ কোটির মতো পাঠ্যবই কম ছাপতে হবে।’

আন্তর্জাতিক টেন্ডার বাদ দেওয়ায় এ বছর প্রতিযোগিতা থাকছে না, সিন্ডিকেট নিজেরা কাজ ভাগ করে নেওয়ার আশঙ্কা থাকছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, আন্তর্জাতিক টেন্ডার বাদ দেওয়ার বিষয়টি হচ্ছে—বাংলাদেশের ক্ষুদ্র শিল্প টিকিয়ে রাখার একটি পলিসি। যাতে ছোট ছোট প্রেসগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা যায়। এটি সরকারের পলিসি ডিসিশন।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন