দেশের ‘সবচেয়ে আধুনিক ফাঁসির মঞ্চ’ খুলনার নতুন কারাগারে!

খুলনায় নবনির্মিত জেলা কারাগার আগামী ১ নভেম্বর চালু হবে। এর মাধ্যমে শেষ হবে ১৪ বছরের প্রতীক্ষা। ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আগের কারাগারটি শতবর্ষী পুরোনো ও অতিরিক্ত জনাকীর্ণ। আপাতত সাজাপ্রাপ্ত ১ম বন্দিকে স্থানান্তর করেই নতুন কারাগারের কার্যক্রম শুরু হবে। কেমন হবে নতুন এ কারাগারটি তা নিয়ে মানুষের মনে রয়েছে নানা কৌতূহল। নতুন কারাগারের ভেতরে পাকা পথ, রঙিন ভবন, পার্কিং টাইলসের ফুটপাত, মসজিদ, হাসপাতাল।
বন্দিদের জন্য নির্মিত প্রতিটি ভবনের চারপাশে রয়েছে পৃথক সীমানাপ্রাচীর, যাতে এক শ্রেণির বন্দি অন্য শ্রেণির সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারে। মোট ৫৭টি স্থাপনা নির্মিত হয়েছে, এর মধ্যে বন্দিদের থাকার ভবন ১১টি। নিরাপত্তা জোরদারে। পুরো কারাগারের ভেতরে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ দেয়াল নির্মিত হয়েছে। নবনির্মিত কারাগারের দক্ষিণ- পশ্চিম কোণে রয়েছে ফাঁসির মঞ্চ। ছাই রঙের টিনের শেড আর চালে ঢেউ টিনে নির্মিত ফাঁসির মঞ্চের ঘরটি। যা কি না দেশের ‘সবচেয়ে আধুনিক ফাঁসির মঞ্চ’ বলে দাবি কারা কর্তৃপক্ষের।
যেমন দেখতে ফাঁসির মঞ্চ
খুলনার সিটি (রূপসা সেতু) বাইপাস সড়কে প্রায় ৩০ একর জায়গাজুড়ে নবনির্মিত এ কারাগারের দক্ষিণ- পশ্চিম কোণের শেষ প্রান্তের সীমানা প্রাচীরের পাশেই ছাই রংয়ের টিনের ফাঁসির মঞ্চের ঘর। ফাঁসির মঞ্চটিও তৈরি করা হয়েছে অত্যাধুনিকভাবে। মঞ্চবেষ্টিত ঘরটির দৈর্ঘ্য ৩৪ ফুট। এবং প্রস্থও একই। ফাঁসির মঞ্চের উচ্চতা সামনে ২০ ফুট পেছনে ১৭ ফুট। আসামিদের ফাঁসিতে ঝোলানোর জন্য মঞ্চের নিচে প্রায় ১০ ফুটের মতো গভীরতা রাখা হয়েছে। মঞ্চটিতে ওঠার জন্য দু’দিক থেকেই পাকা সিঁড়ি দেওয়া হয়েছে। সিঁড়ি দিয়ে উঠলেই মেঝেতে চোখে পড়বে লোহার দুটি পাত আর একটি লিভার। লিভার টান দিতেই আসামির পায়ের নিচ থেকে সরে যাবে পাতগুলো।
কারা কর্তৃপক্ষ যা বলছেন
খুলনা জেলা কারাগার জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান সাংবাদিকদের বলেন, নবনির্মিত কারাগারের কার্যক্রম শনিবার (১ নভেম্বর) শুরু হবে। দেশের সবচেয়ে আধুনিক ফাঁসির মঞ্চ রয়েছে খুলনার নতুন এ কারাগারে। ফাঁসির মঞ্চ সাধারণত উন্মুক্ত এবং নির্জন এলাকা হয়। অন্যান্য জায়গায় ফাঁসি কার্যকরের সময় বিভিন্ন পর্দা ব্যবহার করে ঘিরে দেওয়া হয়। যাতে করে আসামিরা ভয় না পায়। তবে এখানের ব্যবস্থাপনা অনেক সুন্দর। আধুনিক ডিজাইনে এটা তৈরি করা হয়েছে। এমনটি বাংলাদেশের আর কোথাও আমার জানা মতে নেই।
খুলনা জেলা কারাগারের জেলার মুহাম্মদ মুনীর গণমাধ্যমকে বলেন, ফাঁসির মঞ্চটি নির্জন এলাকায় করা হয়েছে। ফাঁসির মঞ্চ টিন দিয়ে ঢাকা মূল মঞ্চ। অন্যান্য জায়গায় ফাঁসির মঞ্চ খোলা জায়গায় থাকে সেখানে অস্থায়ীভাবে ঘেরা দিয়ে ফাঁসির মঞ্চ তৈরি করা হয় কিন্তু এখানে স্থায়ীভাবে টিন দিয়ে ঘিরে ফাঁসির মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ফাঁসির মঞ্চটিও তৈরি করা হয়েছে অত্যাধুনিকভাবে। মঞ্চবেষ্টিত ঘরটির দৈর্ঘ্য ৩৪ ফুট। এবং প্রস্থও ৩৪ ফুট। ফাঁসির মঞ্চের উচ্চতা সামনে ২০ ফুট পেছনে ১৭ ফুট। আসামিদের ফাঁসিতে ঝোলানোর জন্য মঞ্চের নিচে প্রায় ১০ ফুটের মতো গভীরতা রাখা হয়েছে। খুলনার পুরাতন কারাগারে বর্তমানে ৩৩ জন ফাঁসির আসামি রয়েছেন।
কোন অপরাধে ফাঁসি হয়
খুন, ধর্ষণ, ধর্ষণজনিত কারণে মৃত্যু, যৌতুকের জন্য হত্যা, ডাকাতিকালে হত্যা, অ্যাসিড নিক্ষেপ, মাদক বহন, মানব পাচার, রাষ্ট্রদ্রোহ, অপহরণকালে কারও মৃত্যু ঘটানো এ ধরনের গুরুতর অপরাধে প্রাণদণ্ডের মতো কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। বিশেষ ক্ষমতা আইনের কিছু ধারায় মৃত্যুদন্ডের বিধান আছে। অধস্তন আদালতে কারও মৃত্যুদণ্ড হলে কারাবিধির (জেল কোড) ৯৮০ ধারা অনুযায়ী আসমিকে অন্যান্য বন্দি থেকে পৃথক রাখা হয়। এই পৃথক সেল ব্রিটিশ আমল থেকে ‘কনডেম সেল’ নামে পরিচিত। অন্যান্য বন্দি থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির জীবনাচারও ভিন্ন হয়। অধস্তন আদালতে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ডের সাজা হলেও উচ্চ আদালতের অনুমোদন ছাড়া সাজা কার্যকর করা যায় না।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুযায়ী, অধস্তন আদালতে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর যাবতীয় নথি হাইকোর্টে পাঠালে তা ডেথ রেফারেন্স হিসেবে নথিভুক্ত হয়। আসামির (কারাগারে থাকলে) পক্ষে আপিল এবং আপিলের আর্থিক সামর্থ্য না থাকলে জেল আপিল হয়। পেপারবুক (রায়সহ যাবতীয় নথি) প্রস্তুত সাপেক্ষে মামলা শুনানির কার্যতালিকায় আসে। হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে আপিল বিভাগে আপিল কিংবা জেল আপিলের সুযোগ পান আসামি। আপিল বিভাগে সাজা বহাল থাকলে আসামি রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করতে পারেন। রিভিউ আবেদন নামঞ্জুর হলে আসামি শেষ সুযোগ হিসেবে দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারেন। সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হলে কারাবিধি অনুযায়ী আসামির ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
এইচকেআর