ঘরে বসে থাকার আর বিন্দুমাত্র সময় নেই, মাঠে যেতে হবে: তারেক রহমান

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের আর বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে মাঠে নামার আহ্বান জানিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আর ঘরে বসে থাকার বিন্দুমাত্র সময় নেই। মাঠে চলে যেতে হবে। মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। পথে-প্রান্তরে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির আয়োজনে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ অনুষ্ঠানে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আসুন, এটাই হোক আজকে আমাদের প্রতিজ্ঞা। এটাই হোক আজকে আমাদের এই দেশ গড়ার পরিকল্পনার শপথ। পরিকল্পনা করেছি, এখন বাস্তবায়ন করতে হবে। বাস্তবায়নের জন্য মাঠে নেমে পড়তে হবে।’
অতীতে বিএনপি সরকারের বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা ও তার সফল বাস্তবায়নের নজির তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, ‘কথার ফুলজুড়ি দিয়ে জনগণের পেটে খাবার আসে না। কথার ফুলজুড়ি দিয়ে কর্মসংস্থান হয় না। কথার ফুলজুড়ি দিয়ে জনগণের অর্থের সংস্থান হয় না, কর্মসংস্থান হয় না। কর্মসংস্থান করতে হলে পরিকল্পনা লাগে। জনগণের পেটে আহার দিতে হলে, ভাত দিতে হলে পরিকল্পনা লাগে, যা একমাত্র আপনার আছে, যা একমাত্র এই দলের আছে, যা একমাত্র বিএনপির আছে। আর কারও নেই।’
‘আজ দেশের স্বাধীনতা বলেন, সার্বভৌমত্ব বলেন, গণতন্ত্র বলেন- সবকিছু নির্ভর করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ওপর। আমরা যদি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারি, এই দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে। এই দেশকে আমরা ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করতে পারবো। এই দেশের অর্থনীতি, নারী স্বাধীনতা থেকে শুরু করে তরুণদের কর্মসংস্থান- সবকিছু ধীরে ধীরে আমরা নিশ্চিত করতে পারবো,’ যোগ করেন তিনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘যদি আমরা দেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে না পারি, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে না পারি, জনগণকে সাথে রাখতে না পারি, এই দেশের অস্তিত্ব নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন দেখা দেবে।’
বিএনপি প্রণীত দেশ গড়ার পরিকল্পনা সারাদেশে ঘরে ঘরে মা-বোন, তরুণ প্রজন্ম, মুরব্বি ও ইমাম-মোয়াজ্জিনদের কাছে অবশ্যই পৌঁছে দিতে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশনা দেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘ইয়েস, আমাদের কাছে কোনো জাদু নেই, এটা জনগণ জানে। কিন্তু জনগণ দেখতে চায় বিএনপি কিছু করছে কি না, করবে কি না। ইনশআল্লাহ, যদি আমরা ৪০ শতাংশ করতে পারি সেটির, জনগণ আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবে।’
দুর্নীতি দমনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপির ট্র্যাক রেকর্ড আছে, আমরা দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরেছি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করা হয়েছিল। আপনারা সকলে না জানলেও কেউ কেউ অবশ্যই জানেন, সেই দুর্নীতি দমন কমিশনকে এতটাই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল, কমিশন যদি সরকারের কোনো একটি বিষয়ে তদন্ত করতে চাইতো তাহলে সরকারের কোনো পারমিশনেরই প্রয়োজন ছিল না। তারা সম্পূর্ণ স্বাধীন ছিল। বেগম খালেদা জিয়া কতটা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, কতটা দৃঢ় শপথ ছিলেন যে দুর্নীতিকে দমন করার জন্য ওনি কমিশনকে সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন করে দিয়েছিলেন। ইনশাআল্লাহ, এটি আমরা আবার করবো। গত ফ্যাসিস্ট-স্বৈরাচার এই নিয়ম পাল্টে দিয়েছিল যে সরকারের কোনো দুর্নীতি তদন্ত করতে হলে সরকারের পারমিশন লাগবে। আমরা দরকার হলে দেশের স্বার্থে একে আবার চেঞ্জ করে দেব।’
তারেক রহমান আশা প্রকাশ করেন, জনগণের রায়ে বিএনপি সরকার গঠন করতে সক্ষম হবে এবং সেই সরকারকে সফল করতে হলে সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দলের লাখ লাখ নেতাকর্মীকে সহযোগিতা করতে হবে বলে জানান তিনি। দেশের স্বার্থ রক্ষার প্রসঙ্গে তিনি জানান, বিএনপি সরকার দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের ওপর দেশের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং পানির হিস্যা নিয়ে এসেছিল।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আইনশৃঙ্খলা কঠোরভাবে রক্ষা, ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালু, প্রান্তিক মানুষ থেকে শুরু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পর্যায়ক্রমে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া, কৃষকদের জন্য ফার্ম কার্ড, সাধারণ মানুষের জন্য স্বাস্থ্য কার্ড, ভোকেশনাল প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলাসহ বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন তারেক রহমান।
দেশ গড়ার পরিকল্পনা শীর্ষক কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
এইচকেআর