১৯ বছরেও সংস্কার হয়নি বরগুনার আশ্রয়ন প্রকল্পের ব্যারাক


বরগুনার ফুলতলা আশ্রয়নে বসবাস করেন অন্ধ এসতারা। বৃষ্টি হলেই পানিতে ভিজতে হয়। এমন অবস্থা বরগুনার প্রায় সকল আশ্রয়ন কেন্দ্রের। বরগুনার আশ্রয়ন প্রকল্পের ব্যারাকগুলো জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। অধিকাংশ রুমেরই বেড়া, দরজা, জানালা ও টিনের চালা নেই বললেই চলে।
বৃষ্টির সময় অনেকে আশ্রয় নেন অন্যত্র সুবিধাজনক জায়গায়। পয়নিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা দুর্গন্ধযুক্ত নর্দমায় পরিনত হয়েছে দীর্ঘবছর আগেই। নিরাপদ পানির তীব্র সংকট ব্যারাকগুলো তৈরির শুরু থেকেই। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ব্যারাক যাদের মাথাগোঁজার ঠাঁই হয়েছে তাদের সবাই ভূমিহীন হতদরিদ্র। ১৯ বছর আগে যখন এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয় তখন তাদের মুখে হাসি ফুটে ওঠেছিল। দীর্ঘ ১৯ বছরেও সংস্কার না হওয়ায় সেই আশ্রয়ন প্রকল্পের ব্যারাক এখন বসবাসকারীদের হতাশা, দুশ্চিন্তা আর ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্মাণের ২৯ বছরেও সংস্কার হয়নি বরগুনার সরকারিভাবে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩৭টি ব্যারাক। এতে ভূমিহীন ও হতদরিদ্রদের জন্য নির্মিত এসব ঘর এখন বসবাসের চরম অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা। আশ্রয়ন প্রকল্পের ব্যারাকে বসবাসরত ভুক্তভোগীরা বলছেন, মাথা গোঁজার বিকল্প না থাকায় একরকম বাধ্য হয়েই এখানে বসবাস করছেন তারা।
২০০২ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৩৭টি ব্যারাক নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে বরগুনা সদরে ১৫টি, পাথরঘাটায় ৮টি, আমতলীতে ৬টি, তালতলীতে ৬টি এবং বেতাগী উপজেলায় ২টি। নির্মাণের পর এসব ব্যারাকে ১৮০৯টি ভূমিহীন হতদরিদ্র পরিবারের মাথাগোঁজার ঠাঁই হয়। কিন্তু নির্মাণের দীর্ঘ ১৯ বছর পরও অবকাঠামোগত সংস্কার না হওয়ায় অধিকাংশ ব্যারাক বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে।
বরগুনা সদরের পোটকাখালী আশ্রয়নের বাসিন্দা আব্দুল মোতালেব বলেন, 'এখানে বসবাস করার মত কোন পরিবেশ এখন আর নাই। ঘরের দরজা জানালা না থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় জীবনযাপন করতে হচ্ছে। টিনের চালা ফুটো হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির কবল থেকে নিস্তার পাইনি। জোয়ারের পানিতেও মাঝে মধ্যে ভাসতে হয়েছে। সামর্থ্য না থাকায় বাধ্য হয়েই এখন এখানে থাকতে হচ্ছে।'
তালতলী উপজেলার চরপাড়া আশ্রয়নে বসবাসকারী রাহেলা বেগম জানান, 'এহানে থাহার মত কোন পরিবেশ নাই। অনেকেই বেরাক ছাইররা চইল্লা গ্যাছে। মোরাও যামু।' প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডর যেতে না যেতেই এ উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আইলা। ফের আইলার ক্ষত না শুকাতেই আসে মহাসেন। আর এভাবেই একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতবিক্ষত এখানকার অসহায় মানুষের আশ্রয়স্থলগুলো। এব্যাপারে বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, বিপর্যস্ত ব্যারাকগুলোর দুরাবস্থা কাটাতে দ্রুতই সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে।
এইচকেআর
