কাউখালীতে জন্ম নিবন্ধনে সাধারণের ভোগান্তি

কাউখালীতে জন্ম নিবন্ধন এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্তৃপক্ষের ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। অদক্ষ কম্পিউটার অপারেটর ও গুরুত্বহীনভাবে কাজ করায় এখন সাধারণ মানুষ দিশেহারা। মানুষের ভোগান্তি আর হয়রানি ইউনিয়ন পরিষদ ও কম্পিউটার দোকানে নিত্যদিনের চিত্র।
স্কুলে ভর্তি থেকে শুরু করে বিয়ে করা পর্যন্ত সর্বত্রই এখন প্রয়োজন জন্ম নিবন্ধন। জন্ম নিবন্ধন এখন যেন সোনার হরিণ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, জমি রেজিস্ট্রি, বিবাহ নিবন্ধন, মৃত্যুর সনদ গ্রহণ, পাসপোর্ট তৈরিসহ সকল কাজের জন্য প্রথম প্রয়োজন জন্ম নিবন্ধন সনদ। একসময়ের গুরুত্বহীন অপ্রয়োজনীয় ভেবে অনেকেই জন্ম নিবন্ধন সঠিকভাবে করেননি। ইচ্ছা খেয়ালখুশিমতো নাম, বাবা - মায়ের নাম ঠিকানা মোবাইল নাম্বার বা অন্যান্য তথ্য দিয়েছেন। সঠিক কাগজপত্র যাচাই-বাছাই ছাড়া ভুলে ভরা ভাবে অনেকের জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা হয়েছে। কালের পরিবর্তে বর্তমানে সরকার জন্ম নিবন্ধন কে সর্বপ্রথম গুরুত্ব দিয়ে সরকারি সেবা গ্রহণের জন্য গুরুত্ব দিয়েছেন। যার ফলে একসময়ের গুরুত্বহীন জন্ম নিবন্ধন সনদ এখন যেন সোনার হরিণে রূপ নিয়েছে।
কাজের প্রয়োজনীয়তার তাগিদে আজ সবাই ভুল সংশোধনের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন মেম্বার চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দ্বারে দ্বারে। সামান্য ভুলের জন্য এখন অনেককেই ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। দিনের পর দিন মাসের-পর-মাস ঘুরেও নিবন্ধন সঠিক করতে পারছেন না অনেকেই।
উপজেলার আয়রন গ্রামের মোঃ রাহাত হোসাইন জানান, জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে করার সময় সঠিক যাচাই-বাছাই ছাড়াই অপারেটররা ভুল মোবাইল নাম্বার, নামের বানান, বয়স, জাতীয়তা, লিঙ্গ, মাতা পিতার নামসহ বিভিন্ন ভুল তথ্য লিপিবদ্ধ করেছেন। অথচ বর্তমানে জন্ম সনদ তৈরি করতে জুড়ে দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু শর্ত। এই শর্ত পূরণ করতে গিয়েই বিপাকে পড়ছেন।
উপজেলার ৫ টি ইউনিয়ন ঘুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে ছেলে-মেয়ের জন্ম নিবন্ধন করতে গিয়ে মা বাবার জন্ম নিবন্ধন এবং জাতীয় পরিচয় পত্র প্রয়োজন। দেখা গেছে, একই নামে একাধিকবার জন্ম নিবন্ধন হওয়া,অনেক মা-বাবার সনদপত্র, পরিচয় পত্র, জন্ম নিবন্ধনে বিভিন্ন ভুল রয়েছে যার ফলে ওই ভুল সংশোধন করার আগ পর্যন্ত সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করতে পারছেনা। আর মা-বাবার কাগজ সংশোধন করতে হলে জাতীয় পরিচয় পত্র, সনদপত্র, জন্ম নিবন্ধন সহ সবগুলোই সংশোধন করতে হবে। মা-বাবার কাগজ সঠিক হওয়া ছাড়া ছেলেমেয়েরা পাচ্ছেনা জন্ম নিবন্ধন। এটাই যেন এখন তাদের সামনে পথ চলায় গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উপজেলার চিরাপাড়া ইউনিয়নের সালেকিয়া দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণীর ছাত্রী মরিয়ম জানায়, জন্ম নিবন্ধনে ভুল হয়েছে, সংশোধন করতে এসে বাবা-মার কাগজগুলোতে ভুল পাওয়া গেছে। যার ফলে এক মাস ধরে প্রতিদিনই ইউনিয়ন পরিষদ উপজেলা স্কুল সহ নানা জায়গায় সংশোধনের জন্য ধর্না দিয়েও করতে পারেন নাই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাজ জন্ম নিবন্ধন ছাড়াও করতে পারছে না। উপজেলার শিয়ালকাঠী ইউনিয়নের সাপলেজা গ্রামের হাসিনুর বেগম জানান স্কুলের ছেলের সনদপত্রে জন্ম নিবন্ধন এর সাথে মিলে না যে কারণে মা-বাবা এবং ছেলের জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে হবে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেও সংশোধন করতে না পারায় হতাশা প্রকাশ করেন।
চিরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সুমন সিকদার জানান, অন্য সকল কাজ রেখেও এখন সময় বেশি ব্যয় করতে হয় নিবন্ধনের জন্য। মানুষের উপচে পড়া ভিড় ভোগান্তির কথা চিন্তা করে বেশিরভাগ সময়ই অফিস টাইম ছাড়াও কাজ করতে হয়। তিনি আরো জানান, মা-বাবার জন্ম নিবন্ধন বাংলা ইংরেজি একই হতে হবে, যেটা অনেকেরই নাই। ভুল সংশোধনের জন্য অনলাইন আবেদন করার পর উপজেলা নির্বাহ কর্মকর্তার নিকট পাঠানো হয়। তিনি যাচাই-বাছাই করে ঠিক করে দেন। যার কাগজপত্র সঠিক না পাওয়া যায় সেটা বাতিল করেন। যার ফলে ওই ভুল সংশোধনের জন্য একই ব্যক্তির বারবার আবেদন করতে হয়। এছাড়া সার্ভারের সমস্যা, ওটিপি না পাওয়ার মত সমস্যা তো আছেই।
উপজেলার চিরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা মাহাতাব হোসেন জানান, ২০০১ সালের পর থেকে জন্ম নিবন্ধন করতে হলে মা বাবার জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে যার ফলে এই ভোগান্তি বেড়েছে। তিনি আরো জানান, জন্ম নিবন্ধন অথবা জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে জন্ম নিবন্ধন করার নির্দেশনা থাকলে কাউকে হয়রানি হতে হতো না।
এ ব্যাপারে কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ খালেদা খাতুন রেখা জানান, নিবন্ধন নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দিন রাত সমান কাজ করতে হয়। অনেকের কাগজপত্র সঠিক না থাকায় বারবার আসতে হয়। তবে জন্ম নিবন্ধন পদ্ধতি সহজ করার জন্য ঊধ্বতন কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নেবেন। দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এমবি
