ইন্দুরকানীতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ভোট বর্জন নিয়ে আলোচনার ঝড়


পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে দুটি ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে একটিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হলেও অপরটিতে জেপি (মঞ্জু) মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হন।
উপজেলার ২ নম্বর পত্তাশী ইউপিতে জেপি (মঞ্জু) মনোনীত প্রার্থী মো. শাহিন হাওলাদার বাইসাইকেল প্রতীক নিয়ে ৩৫৫৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান হাওলাদার মোয়াজ্জেম হোসেন পান ২৪৯৯ ভোট। ১০৫৬ ভোটের ব্যাবধানে পরাজিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোয়াজ্জেম।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দুই ইউনিয়নে প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে সবগুলো কেন্দ্রেই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা প্রশাসন ও উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সাধারণ ভোটারদের। তবে দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যে পত্তাশী ইউপিতে সবগুলো কেন্দ্র থেকেই নৌকার প্রার্থীর এজেন্টরা কেন্দ্র ত্যাগ করেন। এ কারণে দুপুরের পর নৌকার প্রার্থীর অনেক কর্মী-সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে দেখা যায়নি। দুপুরের দিকে নৌকার প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন এমন খবর সবগুলো কেন্দ্রে ছড়িয়ে পড়লে মোয়াজ্জেমের কর্মী-সমর্থক এবং অনেক সাধারণ ভোটার দুপুরের পর ভোট দিতে কেন্দ্রে যাননি। কী কারণে নৌকার প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন এবং তার এজেন্টরা হঠাৎ কেন্দ্র ত্যাগ করেছেন তা নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে নানা আলোচনার সৃষ্টি হয়। দলের দায়িত্বশীল নেতাকর্মীরাও তাৎক্ষণিক এর সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। ভোট বর্জনে তার কর্মী-সমর্থকরাও চরম হতাশ হয়ে পড়েছেন। এ নিয়ে এখন আলোচনার ঝড় বইছে।
তবে ভোট বর্জনের বিষয়ে নৌকার মনোনীত প্রার্থী হাওলাদার মোয়াজ্জেম হোসেন শুক্রবার রাতে গণমাধ্যকে জানান, দুপুরের আগে বহিরাগত লোকজন আমাকে ও আমার এজেন্টদের কেন্দ্র ছাড়ার জন্য হুমকি দেয়। নইলে আমার ও আমার লোকজনের অবস্থা খারাপ হবে। এছাড়া বাইসাইকেলের অনুসারী অনেক পর্যবেক্ষককে দিয়ে অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ আনেন তিনি। এ অবস্থায় আমি ও আমার কর্মী-সমর্থকরা শক্ত অবস্থান নিতে গেলে ব্যাপক সহিংসতার আশঙ্কা ছিল বিধায় আমি নির্বাচনী মাঠ ছেড়ে চলে আসি।
তবে এ ব্যাপারে তিনি ভোটের দিন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও প্রশাসনকে লিখিত কিংবা মৌখিক কোনো অভিযোগ দেননি বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জেপির নেতৃবৃন্দ বলছেন, সুষ্ঠু ভোট হলে (নৌকার প্রার্থী) হারবেন এ বিষয়টি আঁচ করতে পেরেই তিনি দুপুরের দিকে ভোট বর্জন করেছেন। অবৈধ সুবিধা নিতে না পরায় তিনি এখন এ অভিযোগ দিচ্ছেন।
ভোট বর্জনের বিষয়ে আ.লীগের সিনিয়র নেতারাও এ বিষয়ে সুনির্দিস্ট কিছু জানেন না। তারা এ নির্বাচনের বিষয়টা নিয়ে অনেকটা হতবাক।
তবে সাধারণ ভোটারদের অভিমত, ভোট বর্জনের সিদ্ধান্তের বিষয়টা নৌকার প্রার্থীর জন্য ভুল ছিল। আর এ ভোট বর্জনের কারণে কপাল খুলেছে জেপির প্রার্থীর।
এ বিষয়ে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন গাজী প্রতিবেদককে জানান, দুপুর ১২টার পরে হঠাৎ করে খবর পেলাম আমাদের প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। এ খবরে একে একে কেন্দ্রগুলোতে নৌকার এজেন্টরা কেন্দ্র ছাড়ছেন। দুপুরের পরে অনেক কর্মী-সমর্থকদের ভোট দিতে যাওয়ার কথা থাকলেও তারা যাননি। তবে তিনি জানান, ভোট বর্জন না করে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কেন্দ্রে অবস্থান করলে নৌকার বিজয় অনেকটাই সুনিশ্চিত ছিল।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান সেলিম সাংবাদিকদের জানান, সকাল থেকেই বাইসাইকেল প্রতীকের লোকজন কয়েকটি কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণে নেন। সেখানে তারা বহিরাগত লোক দিয়ে প্রভাববিস্তার করেন এবং আমাদের লোকজনকে হুমকি দেন। যার কারণে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বিধায় আমাদের নৌকার এজেন্টরা দুপুরের দিকে কেন্দ্র ছাড়েন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা এএসএমএ রোকনুজ্জামান খান বলেন, আমরা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের বিষয়ে তৎপর ছিলাম। দুটি ইউনিয়নে কোনোরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। পত্তাশীতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ভোট বর্জনের বিষয়ে তিনি বলেন, কী কারণে তিনি ভোট বর্জন করেছেন তা আমরা জানি না। কোনো ধরনের অভিযোগ থাকলে তিনি মাঠ প্রশাসন এবং রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মৌখিক বা লিখিতভাবে জানাতে পারতেন। কিন্তু ওই প্রার্থীর পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি।
সূত্রঃ কালের কন্ঠ
এসএম
