ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

Motobad news

যেভাবে দিন কাটছে ‘সিডর বেবির’

যেভাবে দিন কাটছে ‘সিডর বেবির’
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

চারদিকে চলছে সুপার সাইক্লোন সিডরের তান্ডব। এ তা-বের মধ্যেই বরগুনার পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের পদ্মাগ্রামের আশ্রয়কেন্দ্রে ভূমিষ্ঠ হয় ফুটফুটে একটি মেয়ে। নাম রাখা হয় মারিয়া। সিডরের সময় জন্ম নেওয়ায় দেশে তো বটেই, সারাবিশ্বে সে পরিচিতি পায় ‘সিডর বেবি’ হিসেবে। ভয়াল সিডরের ১৪ বছর আজ।

দেখতে দেখতে ‘সিডর বেবি’ মারিয়ারও ১৪ বছর পূর্ণ হলো। সিডরে সব হারানো মারিয়া ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু কথা রাখেননি কেউই। বলেশ্বর পাড়ের পদ্মা গ্রামের মা বাবার সঙ্গে বসবাস করে মারিয়া। বাবা ফারুক মোল্লা ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে সংসার চালায়। মা জাকিয়া বেগমের পৈতৃক সূত্রে পাওয়া একখ- জমিতে ঘর তুলে সেখানে বসবাস করেন তারা। অভাবের সংসারে লেখাপড়া করার সুযোগ হয়নি মারিয়ার। তাই মাত্র ১৩ বছরের কিশোরী মারিয়াকে বসতে হয়েছিল বিয়ের পীড়িতে।

 ২০২০ সালে বরগুনা পৌর শহরের নয়ন মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় তার। বিয়ের পর নয়নও আশ্রয় নেন শ্বশুরবাড়িতে। সেখানে থেকেই নদীতে মাছ শিকার করেন নয়ন। মারিয়ার মা জাকিয়া বেগম বলেন, যখন মারিয়ার জন্ম হয় তখন ব্র্যাক এনজিও আমাদের একটা ঘর দিয়েছিল। বাবার দেওয়া জমিতে ঘরটা তুলে তাতেই আমরা বসবাস করে আসছি। তারা বলছিল মারিয়াকে লেখাপড়াসহ যাবতীয় খরচ দেবে। কিন্তু এ ঘরটা ছাড়া কিছুই পাইনি। মারিয়ার ভরন-পোষণ দূরে থাক লেখাপড়ার খরচও দেয়নি। গরীব মানুষ আমরা। মেয়ে বড় হওয়ার পর বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। ১৪ বছর আগে দেওয়া ঘরটাও ভেঙে গেছে। এ ঘরে মেয়ে-জামাই নিয়ে থাকি। কেউ আমাদের খবরই নেয় না। মারিয়ার নানা গোলাম মোস্তফা বলেন, সিডরের সময় আমার নাতনিকে অনেককিছু দেবে বলেছিল তারা। কিন্তু কিছুই দেয়নি। আমি নাতনিটাকে থাকার জন্য একটু জায়গা দিয়েছি। সে জায়গায় ব্র্যাকের দেওয়া একটা ঘরে জামাই নিয়া থাকে আমার নাতিটা। কথা হয় ‘সিডর বেবি’ মারিয়ার সঙ্গে। সে বলে, সিডরের সময় জন্ম নিয়ে আমার জীবনটাও সিডরের মত হয়ে গেছে। নানুর বাড়িতে থাকি। বাবা যা কামাই-রোজগার করে তাতে আমাদের সংসার চালাতিই কষ্ট হয়। অভাবের কারণে লেখাপড়া বন্ধ করে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। আমার স্বামী মাছ ধরে যা কামাই করে তা দিয়ে মা-বাবাকে নিয়ে এক সঙ্গে খাই। এ বয়সে আমার স্বামী-সংসার করা লাগতো না।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু বকর সিদ্দিক বলেন, কষ্টে দিন কাটছে মারিয়ার পরিবারের। আমাদের সাধ্যমতো সাহায্য দিয়ে যাচ্ছি। সরকারের কাছে মারিয়াদের জন্য একটি আবাসনের দাবি জানাচ্ছি। ব্র্যাক বরগুনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের সমন্বয়ক মারুফ পারভেজ বলেন, মারিয়াকে সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। এরপরও আমরা মারিয়ার বিষয়ে খোঁজ নেবো। ব্র্যাকের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য সহায়তা দেওয়া হবে। বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সিডর বেবি’ মারিয়ার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে আমরা তাকে সরকারের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করবো।

 

 


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন