আমতলীতে পাল্টে গেছে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জীবন


বরগুনার আমতলী উপজেলার হুমায়রা রোকেয়া আলোকিত বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের ৪০জন শিক্ষক কর্মচারী দীর্ঘ ৪ বছর ধরে এমপিও ভুক্তির আশায় সরকারের সুদৃষ্টির প্রত্যাশায় প্রহর গুনছেন তারা। এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিক্ষকরা বিনা বেতনে পাঠদান করছেন। দীর্ঘদিনেও বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য নেই সরকারী সহযোগীতা। কোন কিছু না পেলেও খুব আন্তরিকতার সাথেই পাঠদান ও অন্যান্য কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন বিদ্যালয়টির শিক্ষক-কর্মচারীরা।
আমতলী সদর ইউপিচেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি মো.মোতাহার উদ্দিন মৃধার উদ্যোগে ২০১৭ সালে স্থাপিত হয় বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়টিতে প্রায় ২ শত প্রতিবন্ধী শিশু লেখাপড়া করছে। বর্তমানে স্বেচ্ছাশ্রমে এসব প্রতিবন্ধীদের পাঠদান করাচ্ছেন শিক্ষকরা।
সদর ইউপির নাচনা পাড়া ব্রীজের নিকট অবস্থিত প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে প্রতিবন্ধী শিশুদের পাঠদান করছেন। দিন দিন তাদের অনেক উন্নতি হচ্ছে। বিদ্যালয়টির জমি দাতা পরিচালনা কমিটির সভাপতি সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোতাহার উদ্দিন মৃধা, প্রধান শিক্ষক মো. নিয়াজ মোর্শেদ ইমন, মো. মাইনুদ্দিন, ইসরাত জাহান জানান, প্রতিবন্ধী শিশু ও ব্যক্তিদের কারিগরি ও কুটির শিল্পের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এতে করে তারা আত্ম-নির্ভরশীল হতে পারবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়টিতে প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশু ভর্তি হওয়ার পর থেকে বদলে গেছে তাদের জীবন। আগে যারা স্পষ্ট করে কথা বলতে পারতোনা, পারতো না লিখতে, চিনতো না বাংলা ও ইংরেজি বর্ণমালা বুঝতো না পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। ঠিক তারাই এখন স্পষ্টকরে কথা বলতে পারে, লিখতে পারে চেনে বর্ণমালা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়েও তারা এখন অনেক সচেতন। এ সব কিছুই সম্ভব হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্তরিকতায়। প্রতিবন্ধী শিশু শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্যও রয়েছে রিকসা-ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন।এবিদ্যালয় গড়ে তুলতে ইতোমধ্যে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। স্কুলের নামে ৩৩ শতাংশ জমিও দান করেছেন সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোতাহার উদ্দিন মৃধা। আর এ কারনে বিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী শিশুদের সুদিন ফিরতে শুরু করেছে। এমতাবস্থায় এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে দ্রুত বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়টির এমপিওভুক্ত করতে হবে। তা না হলে এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা অন্যপেশায় চলে যাবেন। ফলে আবারও অবহেলা ও অসহযোগিতায় পিছিয়ে যাবে প্রতিবন্ধীরা ।
অভিভাবক মো. আব্বাস মিয়া বলেন, আমার মেয়েটা আগে কিছু বুঝতো না। এখন মানুষের সঙ্গে মেশে। কথা বলার চেষ্টা করে। বাবা-মা বলে ডাকে। ইশারার মাধ্যমে পায়খানা-প্রসাব করার কথা বোঝায়। দিন-দিন তার অনেক উন্নতি হচ্ছে।
সহকারী শিক্ষক বেলাল হোসেন বলেন, বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হলে আরও যেমন সুযোগ-সুবিধা বাড়বে তেমনি উপকৃত হবে প্রতিবন্ধীদের পরিবারসহ শিক্ষক-কর্মচারীরা।
প্রধান শিক্ষক নিয়াজ মোর্শেদ ইমন বলেন, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিবন্ধীদের জীবনপট পাল্টে উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। তারা এখন অনেক কাজে পারদর্শী হয়ে উঠছে। কিন্তু আমাদেরই কেবল কোনো উন্নতি হচ্ছে না। বিদ্যালয় থেকে কেউ কোনো প্রকার বেতন ভাতাদি পাচ্ছি না। ফলে অনেক কষ্ট করে সংসার চালাতে হচ্ছে শিক্ষক-কর্মচারীদের।অতিদ্রুত বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্তির আওতায় আনা জরুরি। এমপিওভুক্তির জন্য আমরা সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
শিক্ষক ম্যানেজিং কমিটি ও এলাকাবাসীর দাবী বিদ্যালয়গুলো এমপিও ভুক্ত করা হলে যেমন সুযোগ-সুবিধা বাড়বে তেমনি উপকৃত হবে প্রতিবন্ধিদের পরিবার এবং শিক্ষক-কর্মচারীরা।
শিক্ষকরা জানায় বিদ্যালয়টিতে প্রতিবন্ধির সংখ্যা ১৯০ জন। প্রতিবন্ধি ছাত্র/ছাত্রীর জীবনমান পাল্টে তারা উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্তরিকতায় এই বিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী শিশুরাও এখন অনেক কাজে পারদর্শী হয়ে উঠেছে। রয়েছে ফিজিওথেরাপিস্টসহ সংগীত ও বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষক।
বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মো.মোতাহার উদ্দিন মৃধা বলেন, প্রতিবন্ধী শিশু ও ব্যক্তিদের উন্নয়নে তাদের চাহিদা মতো সকল প্রকারশিক্ষাওব্যয়ামের উপকরণ রয়েছে। জমি কেনা, অবকাঠামো তৈরিসহ বিভিন্ন খাতে ইতোমধ্যে এসব বিদ্যালয়ের পেছনে ২৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এতকিছু করার পরও বিদ্যালয়টিতে সরকারের কোনো সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, সরেজমিন পরিদর্শন করে এমপিও ভুক্তির জন্য সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে।
এইচকেআর
