আমতলীসহ উপকূল থেকে বিলুপ্তির পথে বটগাছ

কালের বিবর্তনে বরগুনার আমতলীসহ উপকূলীয় এলাকা থেকে দিন দিন কমে যাচ্ছে বট গাছ। বাংলা সংস্কৃতি ও প্রকৃতির সংস্পর্শে মিশে আছে এই বটবৃক্ষ। এক সময় এ অঞ্চলে প্রচুর বটগাছ দেখা যেত।
একটা সময় ছিল যখন বাড়ির সামনে, জমির ধারে ও খেয়াঘাটগুলোতে বটগাছ থাকত। তখন কোনো ঠিকানা নিশ্চিত করতে বটগাছকেই ব্যবহার করা হতো। বটগাছ ছিল মানুষের মিলন মেলা। বর্তমানে বিলুপ্তের পথে বটগাছ। এখনও পরিবারের জীবিত বয়স্ক ব্যক্তিকে বটগাছের সঙ্গে অমূল্যহীন বলে তুলনা করা হয়।
একসময় গ্রাম-গঞ্জের হাট বাজার, মেলাও বসতো বটগাছের নিচে। এমনকি কৃষি শ্রমিকরা এক সময় বিশ্রাম নিত এই বটবৃক্ষের তলায়। প্রতিনিয়ত পুরনো বটগাছগুলো মানুষ কেটে ফেললেও নতুন করে কোনো চারা রোপণ না করায় আর চোখে পড়ছে না প্রকৃতিবান্ধব এই বটগাছ।
এলাকার সচেতন মহল বলেন, বটগাছের ফল আমরা খাই না, অতীতে মানুষের কাছে বৃক্ষের ছায়া অতি লোভনীয় ছিল কিন্তু বর্তমানে রাস্তার উন্নয়ন ও দ্রুতগামী যানবাহন হওয়ায় সেটার প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে গেছে। জীবন জীবিকার সংগ্রামে ছুটতে গিয়ে বাল্যকালে শিখে আসা কিছু বাক্য ভুলতে বসেছি “মানুষ একা বাস করতে পারেনা” তেমনি “আমাদের চার পাশে যা কিছু আছে তা নিয়েই আমাদের পরিবেশ।
এ গাছের ফল অধিকাংশ পাখির প্রধান খাবার। বটগাছ না থাকলে সেই এলাকায় বিভিন্ন ধরনের পাখির খাদ্য ও বসবাসের সমস্যা তৈরি হবে সেটা কে না জানি। যেমন টিয়া পাখি এসব বড় গাছের মগ ডালের গর্তে বাস করত।
আজ টিয়া পাখির মত কিছু পাখির বৈচিত্র্য নীরবে কমে যাচ্ছে, সেটা দেখার সময় কি আমাদের আছে? পাখিরা যে ফসল সহ ফুল ফলের পরাগায়গণ ও বিভিন্ন গাছের বংশবৃদ্ধিতে সহায়তা করে যাচ্ছে সেটা আমাদের প্রত্যেকের অজানা নয়। এমনকি বটগাছের আবিষ্কারক হচ্ছে পাখি, ফল খেয়ে মল ত্যাগের মাধ্যমে গাছটি তৈরি হয়। গাছ সাধারণত মানুষেরই নয়, সকল প্রাণির জন্য অক্সিজেন প্রদান করেন। এ সকল বড় গাছ আবহাওয়া, জলবায়ু, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, ঝড় ও বজ্রপাত প্রতিরোধসহ বিভিন্নভাবে যে আমাদের জীবনের সাথে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত তা সকলেই উপলব্ধি করে থাকি। একটি বটগাছ শুধু গাছ নয়, এক একটি বাস্তসংস্থান। আর এই বাস্তু সংস্থানের উপর নির্ভর করেই সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল প্রাণি মানুষও টিকে আছে। তাই বাঁচার জন্য এই উদ্যোগ মানুষকেই নিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে আমতলী উপজেলা বনবিভাগের কর্মকর্তা কেএম ফিরোজ কবির বলেন, বটগাছ উপকারী গাছ। পথচারীদের ছায়া প্রদান করে, পাখিদের খাবারের সংস্থান, আবাস স্থল, প্রচুর অক্সিজেন প্রদান করে। সরকারী ভাবে বিভিন্ন স্থানে বটগাছ রোপণ করা হচ্ছে। ইটভাটায় জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার ফলে বটগাছ ধ্বংসের মূল কারণ।
এমবি
