ইঁদুরের ধানে ভাগ বসাচ্ছে তারা!


চলতি মৌসুমে ধান কাটা শুরু হয়েছে সারা দেশে। একইসঙ্গে জেলায় জেলায় চলছে নবান্ন উৎসব।
পাকা ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিভিন্ন জেলার কৃষকরা। সোনালি ধানের ঘ্রাণে ভরে আছে কৃষকের মাঠ ও আঙ্গিনা। শীত আসার আগে ভাগে ধান ঘরে তুলতে পেরে কারো কারো মুখেও ফুটেছে খুশির ঝিলিক।
প্রতি বছরের মতো মাঠে মাঠে ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে ধান বের করছে শিশুরা। এসব ধান কুড়ানি শিশুরা প্রতিদিন দলবেঁধে ছুটে যায় ফসলের মাঠগুলোতে। চলতি মৌসুমে ধান কাটা-মাড়াই ঘিরে যখন গৃহস্থ পরিবারের উৎসব চলছে। ঠিক তখনই ভূমিহীন পরিবারগুলোর শিশুরা খুঁজে বেড়াচ্ছে কৃষকের কেটে নেওয়ার সময় ঝরে পড়া ধান। সকাল বা বিকেলের মিষ্টি রোদে হাতে ব্যাগ ও দা আর খুন্তি নিয়ে মাঠে মাঠে ইঁদুরের গর্তগুলো থেকে ধানে ভাগ বসাচ্ছে তারা।
ক্ষেতজুড়ে দলবেঁধে ছুটে বেড়ানো শিশুরা ১৫ থেকে ২০ কেজির মতো ধানের শিষ কুড়িয়ে থাকে। যখন ধানের পরিমাণ বেশি হয় তারা বেচে দেয়। অনেকে আবার পিঠাপুলি খাওয়ার জন্য জমিয়ে রাখে সেই ধান। এ ধান কুড়িয়ে কারো আবার বছরের একবেলা খাবার কিংবা বছরে অন্তত একদিন পিঠা খাওয়ার সুযোগ হয়। এ মৌসুমে অনেক শিশু-কিশোর স্কুলে না গিয়ে দিন পার করছে ধান কুড়িয়ে।
শনিবার (৪ ডিসেম্বর) দেখা যায়, বরগুনার তালতলী উপজেলার বড় বগী ইউনিয়নের ছোট ভাই জোড়াগ্রামের ক্ষেতগুলোতে ধান কুড়াতে ব্যস্ত শিশু রবিউল (১৩) হাকিম (১০) ও তাওসিন (৭)।
ওদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, কৃষকরা যখন ক্ষেত থেকে ধান কেটে নিয়ে যাওয়ার পর অনেক ধানের ছড়া এমনিতেই পড়ে থাকে সেগুলো তারা কুড়িয়ে নেয়। এছাড়া ক্ষেতে ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে পাওয়া যায় অনেক ধান। যখন তাদের ব্যাগে ধানের পরিমাণ বেশি হবে তখন তা বিক্রি করবে বা বাড়িতে নিয়ে জমিয়ে রাখবে পিঠাপুলির স্বাদ নিতে।
কৃষক মিলন বলেন, আগে মাঠজুড়ে ধান কুড়ানি শিশুদের আনাগোনায় বেশি থাকত। তখনকার সময়ে ধান কাটার একটা উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল। এখন সবকিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে, শিশুরা নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে। অনেক শিশুদের এখনও মাঠে দেখা যাচ্ছে ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান কুড়াতে।
একই এলাকার ষাটোর্ধ্ব জয়নাব বেগম বলেন, ‘এক বছরের চাল কিনি ভাত খাই। বছরে অন্তত ঠাণ্ডার সময় পিঠাপুলি খাবার শখ হয়, হেইতে ধান পামু কুম্মে। হেই জন্য মাঠে মাঠে মাইনসের ধান কুড়াই’।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি বরগুনার উপ-পরিচালক মো. আব্দুর রশীদ বলেন, ক্ষেতে ইঁদুরের গর্তগুলোতে সাপ, পোকা-মাকড় থাকতে পারে। এই কাজ শিশুদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে, কৃষকের কোন উপকার নেই। এছাড়া ইঁদুর নিধনে আমরা বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি।
এসএম
