সাতক্ষীরায় টিকা নিতে শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভিড়: টিকাকেন্দ্রে ভোগান্তি

করোনা প্রতিরোধক টিকা নিতে গিয়ে নানামুখী ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। টিকাকেন্দ্রে গিয়ে প্রচন্ড ভিড়ের কারণে একদিকে যেমন স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের মুখে পড়তে হচ্ছে, পাশাপাশি দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। আবার কেউ কেউ কেন্দ্রে এসে নাকি ফিরেও যাচ্ছে। পাশাপাশি টিকাদান কর্মসূচিটি দেড় মাসের বেশি সময় আগে শুরু হলেও সাতক্ষীরায় শুরু হয় ২০ ডিসেম্বর থেকে।
৯ জানুয়ারি টিকা প্রদান কার্যক্রম শেষ হবার কথা থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ে টিকা না পাওয়া ও প্রস্তুতি না থাকায় তা শেষ করা যায়নি। টিকা প্রদান কার্যক্রম শেষ হবে ১৫ জানুয়ারি। ফলে হঠাৎ করেই টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেন্দ্র সংখ্যা কম হওয়ায় একটি কেন্দ্রে একসঙ্গে অনেক শিক্ষার্থীকে টিকা নেওয়ার জন্য যেতে হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের টিকা নেওয়ার খবরটি জানানো হয় ঠিক আগের দিন সন্ধ্যায়। স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের এসএমএস দিয়ে জানান। কেউ এসএমএস পায়, কেউ পায় না। গ্রামাঞ্চলের কেউ আবার সেই এসএমএস দেখে, কেউ দেখে না। ফলে অনেকে প্রথম ডোজের টিকা নিতে পারছে না।
বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) সাতক্ষীরা শিক্ষা অফিসে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে টিকা নেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। গাদাগাদি, ঠাসাঠাসি করে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে শিক্ষার্থীরা। অনেকেই এসেছে দূরের স্কুল থেকে। সদরের ঝাউডাঙ্গা স্কুল থেকে বাস ভাড়া করে এসেছে কয়েকশ’ শিক্ষার্থী।
তাদের মুখে মাস্ক পরিধান করা থাকলেও সাথে আসা শিক্ষকদের ছিল না। সকাল সাড়ে দশটার দিকে দেখা যায় শিক্ষা অফিসের সামনে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতশত শিক্ষার্থী করোনা প্রতিরোধক টিকা নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।
একই চিত্র দেখা যায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সামনে। এখানেও টিকা নিতে আসা কলেজ শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। দূর-দূরান্ত থেকে এসব শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানের মেসেজ পেয়ে টিকা নিতে এসেছে। তবে শিক্ষার্থীদের অনেকেই টিকা দেওয়ার বিষয়টি জানতে পারেনি।
এদিকে, প্রচন্ড ভিড়ের মধ্যে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে বলে জানান অভিভাবকরা। তারা জানান, একটি কেন্দ্রে এক দিনে কেন কয়েক হাজার শিক্ষার্থীকে টিকা জন্য আসতে হবে। এতো ভিড় হলে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন তো হবেই।
তবে সিভিল সার্জন (সাতক্ষীরা) ডা. মো: হুসাইন শাফায়াত বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো সমস্যা নেই। টিকা দেওয়ার সময় যেসব ব্যবস্থাপনা দরকার তা স্বাস্থ্য বিভাগ করছে। শিক্ষা বিভাগ করছে কি না, সেটা তাদের বিষয়।
সিভিল সার্জন বলেন, সাতক্ষীরা জেলায় এ পর্যন্ত ফাইজার ভ্যাকসিন গ্রহণ করা হয়েছে এক লাখ ৯৭ হাজার ৭৩০ ডোজ। এরমধ্যে অবশিষ্ঠ আছে ৭৩ হাজার ৯৮৬ ডোজ। সাতক্ষীরা জেলার ছাত্র-ছাত্রীর লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ৮৭ হাজার ৩৫০। এদের মধ্যে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে ৫৮ হাজার ৮৭৯জনকে। ড্রপ আউট রয়েছে এক লাখ ২৮ হাজার ৪৭১ জন। সাতক্ষীরা জেলায় ভ্যাকসিনের (ফাইজার) চাহিদা রয়েছে ৫৪ হাজার ৬০০। শূন্য দশমিক তিন এমএল এডি সিরিঞ্জের চাহিদা রয়েছে ৫৫ হাজার, ২ এমএল এডি সিরিঞ্জের চাহিদা রয়েছে ৯ হাজার ১০০ এবং সেফটি বক্সের চাহিদা রয়েছে ৩১০টি।
সাতক্ষীরা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ২০ ডিসেম্বর প্রথম দফায় সাতক্ষীরা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের টিকা প্রদান শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে জেলার সকল মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে টিকা প্রদান করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, সাতক্ষীরা জেলার সাতটি উপজেলার ৬০৫টি মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী এক লাখ ৮৭ হাজার ৩৫০জন শিক্ষার্থীকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধক টিকা প্রদান করা হচ্ছে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ৩৫ হাজার ২০০, দেবহাটা উপজেলায় ৯ হাজার ৬০০, আশাশুনি উপজেলায় ২৮ হাজার ৬০০, কলারোয়া উপজেলায় ২২ হাজার ৬০০, কালিগঞ্জ উপজেলায় ২৩ হাজার ৭৫০, শ্যামনগর উপজেলায় ৪০ হাজার ৬০০ এবং তালা উপজেলায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থীকে করোনা টিকা প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
এইচকেআর