ঢাকা সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

Motobad news

করোনার বন্ধে  বিরামপুরে ৩ শতাধিক বাল্যবিয়ে

করোনার বন্ধে  বিরামপুরে ৩ শতাধিক বাল্যবিয়ে
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

করোনা মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৩ শতাধিক শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। করোনা সতর্কতায় লকডাউন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে নাগাদ খুলবে এ অনিশ্চয়তার দোলাচলে পড়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর জীবনে বাল্যবিয়ের মতো ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে সারা দেশে চলমান কঠোর লকডাউনে সরকার ঘোষিত নির্দেশনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালে উপজেলায় মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা অধিদফতরের নির্ধারিত ফরমেটে শিক্ষার্থীদের বাল্যবিয়ের তথ্য চাওয়া হয়েছিল। এ সময় উপজেলার ৬৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ২০টি হাই স্কুল ও মাদ্রাসা বাল্যবিয়ের তথ্য প্রদান করে। এ প্রাপ্ত তথ্যমতে উপজেলার ১৬৪ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। তাদের মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণির ৬ জন, সপ্তম শ্রেণির ১৯ জন, অষ্টম শ্রেণির ৩৬ জন, নবম শ্রেণির ৩৪ জন ও দশম শ্রেণির ৬৯ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে বাল্যবিয়ের তথ্য দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২০২১ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে হয়েছে মোহনপুর উচ্চ বিদ্যালয়।

কিন্তু অনুসন্ধান বলছে অন্য কথা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিষ্ঠানকে বাল্যবিয়ের মতো দুর্নাম থেকে বাঁচাতে শিক্ষা অধিদফতরের নির্ধারিত ফরমেটে তথ্য প্রদানকালে বাল্যবিয়ের তথ্য গোপন করেছেন। বাল্যবিয়ে হওয়া শিক্ষার্থীর তথ্যকে ওই ফরমেটে বাল্যবিয়ে না দেখিয়ে ড্রপ-আউট বা ‘অন্যান্য’ অপশন দেখিয়ে তথ্য জমা দিয়েছেন। এরকম তথ্য দেওয়া কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে ২০-৪৫ জন্য শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেছে। তথ্য গোপন করার কারণে করোনা মহামারিতে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেয়ে শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ের সংখ্যার আসল চিত্রটি উপস্থাপিত হয়নি। ফলে বাল্যবিয়ের এ সংখ্যাটি ৩ শতাধিক হবে যা অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, করোনা মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালীন আমার প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৪৫ জন ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। যাদের আমরা আর বিদ্যালয়ে ফেরাতে পারিনি। শিক্ষার্থীদের বাল্যবিয়ে ঠেকাতে আমরা অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু এলাকায় লকডাউন থাকায় আমরা ব্যর্থ হয়েছে। অভিভাবকরা বিভিন্নভাবে শিক্ষক ও প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে তাদের মেয়ের বাল্যবিয়ে দিয়েছেন। একই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুক-ই-আজম বলেন, করোনার কারণে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ের সঠিক সংখ্যা দেওয়া সম্ভব হয়নি। শিগগিরই এ তথ্য শিক্ষা অফিসকে জানানো হবে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নূর আলম বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একটি ফরমেটের মাধ্যমে বাল্যবিয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছিল। সেখানে ১৬৪ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ের পাওয়া গেছে। কোনো প্রতিষ্ঠান যদি বাল্যবিয়ে তথ্য গোপন করে তাহলে যাচাই করার জন্য পুনরায় তথ্য নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পরিমল কুমার সরকার বলেন, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে বিরামপুর উপজেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে এবং নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাল্যবিয়ে সংক্রান্ত তথ্য সরকারকে না দিয়ে থাকলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে উপজেলা প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
 


পিএম
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন