ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

Motobad news
আবুল হাসানাত ‍আবদুল্লাহ-এমপি’র নির্দেশে

সিদ্ধান্তের সাত বছর পর শেবাচিমে হৃদরোগসহ চারটি বহিঃবিভাগ চালু

সিদ্ধান্তের সাত বছর পর শেবাচিমে হৃদরোগসহ চারটি বহিঃবিভাগ চালু
শেবাচিম হাসপাতালে হৃদরোগসহ চারটি বহিঃবিভাগ ‍উদ্বোধন করেন চিকিৎসকবৃন্দ
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ বিশেষায়িত হাসপাতাল হওয়া সত্তেও প্রতিষ্ঠানটিতে ছিলো না ভাস্কুলার সার্জারী, কার্ডিওলজি, ইউরোলজি ও গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোরোলজি বহিঃ বিভাগ। এসব রোগে আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে চিকিৎসা পেতো না। ছুটতে হতো চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে।

তবে সেই সমস্যার অবসান ঘটলো দীর্ঘ ৫১ বছর পরে। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পরে গত ২ ফেব্রুয়ারি বুধবার শেবাচিম হাসপাতালে চালু করা হয়েছে ভাস্কুলার সার্জারী, কার্ডিওলজি, ইউরোলজি ও গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোরোলজি বহিঃ বিভাগ। হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে বিভাগগুলোতে চিকিৎসা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

জানা গেছে, ১৯৭০ সালের ২০ নভেম্বর দেশের দক্ষিনাঞ্চলের অন্যতম চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র বিশেষায়িত শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিষ্ঠার সময় এই হাসপাতালের সাথে যুক্ত ছিলো জেনারেল হাসপাতালটিও। ৬শ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিলো এই বিশেষায়িত হাসপাতালটির। তবে ২০২০ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জেনারেল হাসপাতালটিকে সিভিল সার্জনের অধিনে পৃথক করা হয়। তাই শুধুমাত্র শেবাচিম হাসপাতালকে ৫শ শয্যা থেকে এক হাজার শয্যায় উন্নিত করা হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে সব ধরনের রোগের চিকিৎসার ইনডোর-আউটডোর সেবা থাকতে হবে। কিন্তু শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চিকিৎসক ও স্থান সল্পতা থাকায় একাধিক রোগের ইনডোর আউটডোর সেবা কার্যক্রম চালু ছিলো না। বিশেষ করে কার্ডিওলজি (হৃদ রোগ) চিকিৎসার বহিঃ বিভাগ চালু না থাকায় গরিব ও সাধারণ রোগীরা প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে পরবর্তিতে বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পরেন।

এ অবস্থায় ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়ন কমিটির এক সভায় সভাপতি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ্ এমপি জরুরী ভিত্তিতে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হৃদ রোগ বহিঃ বিভাগ চালুর নির্দেশ দেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার কারণে সেই সিদ্ধান্ত এবং নির্দেশনা বিগত সাত বছর ফাইল বন্দী ছিলো। সাত বছরে পর পর সাতজন পরিচালক দায়িত্ব পালন করলেও তারা কেউ এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেনি।

তবে বর্তমান পরিচালক ডা. এইচ.এম সাইফুল ইসলাম স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়ন কমিটির সভাপতির সাত বছর পূর্বে নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ণে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়ন কমিটির সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র সহযোগিতায় বাস্তবায়নও করেছেন সেই উদ্যোগের। চালু করেছেন হৃদ রোড বহিঃর্বিভাগ। আর তার এই সফলতার নেপথ্যে থেকে কাজ করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরিশালের কৃতি সন্তান মো. লোকমান হোসেন মিয়া।

হাসপাতাল পরিচালক ডা. এইচ.এম সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘এ হাসপাতালে হৃদরোগ বহিঃবিভাগের প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘ দিনের। ইতোপূর্বে অনেক বিভাগই এই হাসপাতালে চালু হয়েছে। কিন্তু অতি জরুরি হৃদরোগ বহিঃবিভাগ চালুর বিষয়ে কেউ উদ্যোগ নেননি। আমি চেষ্টা করেছি স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়ন কমিটির সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলে হৃদরোগে আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার।

তিনি বলেন, ‘শুধু হৃদরোগ বহিঃবিভাগ নয়, এর পাশাপাশি গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোরোলজি, ইউরোলজি ও ভাস্কুলার সার্জারি বহিঃ বিভাগের চিকিৎসা কার্যক্রমও চালু করা হয়েছে। এখন থেকে হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে বহিঃ বিভাগে চিকিৎসা পাবেন রোগীরা। প্রতিদিন ডাঃ মোঃ শাহ আলম ইউরোলজি বহিঃবিভাগে চিকিৎসা দিবেন।

তবে স্থান সল্পতার কারণে প্রতি রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার হৃদ রোগ বহিঃ বিভাগে রোগী দেখনে সহকারি রেহিজষ্টার ডাঃ মুসফিকুর রহমান। এছাড়া ডাঃ একে চৌধুরি দেখবেন ভাস্কুলার সার্জারি এবং শনি, সোম ও বুধবার গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোরোলজি ইনডোর থেকে প্রেরিত একজন চিকিৎসক বহিঃর্বিভাগে রোগী দেখবেন।

জানা গেছে, ডাঃ এইচএম সাইফুল ইসলাম এই হাসপাতালে সহকারী পরিচালক হিসেবে সর্বপ্রথম যোগদান করেন। তার পরে পদোন্নতী পেয়ে চলে যান। তৃতীয় দফা পদোন্নতী পেয়ে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক পদে যোগদান করেন ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পরে রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে নানামুখি উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তারই একটি অংশ উল্লেখিত বহিঃর্বিভাগগুলো চালু করা।

এছাড়া এন্ড্রোক্রাইনোলজি (ডায়াবেটিস), চিকিৎসক না থাকায় বন্ধ হয়ে থাকা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি এবং নিউরোসার্জারি ইনডোর চিকিৎসা কার্যক্রম চালুর কার্যক্রম এগিয়ে নিয়েছেন। এরি মধ্যে বার্নের চিকিৎসক এসেছেন। দীর্ঘ প্রায় চার বছর পরে নিউরো সার্জারি বিভাগ চালু এবং দীঘদিন বন্ধ থাকা সিটিস্ক্যান, চোখের লেসিক ও এনজিওগ্রাম মেশিন চালু করা এবং নতুন এমআরআই মেশিন সরবারের প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছেন।

এর পাশাপাশি সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর থেকে আরো ৪টি অত্যাধুনিক আল্ট্রাসোনগ্রাম মেশিন সরবরাহ করেছেন ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম। পাশাপাশি তার সময়েই হাসপাতালে প্রথমবারের মতো ভারত সরকার প্রদত্ত আইসিইউ এ্যাম্বুলেন্স পেয়েছেন।

পরিচালক ডাঃ এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার মুল উদ্দেশ্য হলো এই হাসপাতালে সবধরনের সেবা নিশ্চিত করা। অন্য হাসপাতালে রেফাড শব্দটি বিলুপ্ত ঘটানো। এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে বিভিন্ন রোগের অন্তঃ ও বহিঃ বিভাগ চালু করতে পারায় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে বরিশালবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান।

এদিকে, অভিযোগ ‍উঠেছে হাসপাতালে হৃদরোগ বহিঃবিভাগ চালুর পরিকল্পনা বেশ কিছু দিন ধরেই হচ্ছিল। কিন্তু ‍এতে বাধা হয়ে দাঁড়ান খোদ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন। কেননা যেই কক্ষে হৃদরোগ বহিঃবিভাগটি চালু করা হয়েছে ওই কক্ষটি দখল করে রাখেন তিনি। হাসপাতালের বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের চাপে তিনি ওই কক্ষটি ছাড়তে বাধ্য হন। ‍এরপরই চালু করা হয় হৃদরোগ বহিঃবিভাগ।


কেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন