ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

Motobad news

বাঘের গর্জন আর পায়ের ছাপে আতঙ্কে এলাকাবাসী

বাঘের গর্জন আর পায়ের ছাপে আতঙ্কে এলাকাবাসী
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

নীলফামারী সদর উপজেলার চওড়া বড়গাছা ও গোড়গ্রাম ইউনিয়নে বাঘ আতঙ্ক বিরাজ করছে। বৈদ্যুতিক ফাঁদে পড়ে এক চিতাবাঘের মৃত্যুর পর মৃত বাঘটির সঙ্গীর গর্জন আর পায়ের ছাপ দেখে চরম আতঙ্কে রয়েছে এলাকাবাসী। তবে ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর ও স্থানীয় বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের তৎপরতায় চলছে মৃত বাঘটির অপর সঙ্গী বাঘটি উদ্ধারের কার্যক্রম। 

টানা দুদিন ধরে উদ্ধারের কার্যক্রম চললেও বাঘের দেখা মেলেনি। তবে চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে কয়েক জায়গায় বাঘের পায়ের ছাপ মিলেছে। এতে নির্ঘুম রাত কাটছে এলাকাবাসীর। মানুষকে সচেতন করতে ইউপি চেয়ারম্যানের উদ্যোগে মসজিদে মসজিদে ও অটোরিকশায় চলছে মাইকিং।

জানা গেছে, ৯ বছর আগে মুরগির খামার করেন নীলফামারী সদর উপজেলার চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের কাঞ্চনপাড়ার অলিয়ার রহমান। তার খামারে প্রায় ১০ হাজার মুরগি রয়েছে। গত দেড় থেকে দুই মাস ধরে মুরগি খেকো নানা প্রাণীর উৎপাতে তিনি চরম বিপাকে পড়েছেন। এসব প্রাণীর উৎপাত ঠেকাতে খামারজুড়ে জি আই তারের মাধমে ব্যবহার করা হয় বৈদ্যুতিক ফাঁদ। আর সেই ফাঁদে পড়ে প্রাণ গেছে ভারত থেকে আসা একটি চিতাবাঘের। আরেকটি চিতাবাঘ পার্শ্ববর্তী ভুট্টাখেতে
 লুকিয়ে আছে বলে ধারণা এলাকাবাসীর। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, বন বিভাগের পক্ষ থেকে ঘটনাস্থলের আশপাশে লাল পতাকা টানিয়ে দিয়ে গ্রামবাসীর চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চলছে বাঘ খোঁজার কার্যক্রম। ঢাকা থেকে আনা হয়েছে চেতনানাশক ওষুধ। বাঘের দেখা না মিললেও থেমে নেই কার্যক্রম। দুই ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে- বাড়ির বাইরে তেমন লোকজন নেই। সবার চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। 

চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের ধোপাডাঙ্গা এলাকার ইমরান সরকার বলেন, মৃত বাঘের সঙ্গে এক বা একাধিক বাঘ আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে সবার মনে আতঙ্ক কাজ করছে। অনেক কৃষক ভয়ে মাঠে যাচ্ছেন না। বন বিভাগের কর্মকর্তারা এসে এলাকায় বাঘ আছে কিনা পর্যবেক্ষণ করে গেছেন। তবে প্রাথমিকভাবে তারা বাঘের পায়ের ছাপ শনাক্ত করতে পেরেছেন। ঘটনার পর থেকে অনেকেই হাট বাজার থেকে সন্ধ্যার আগে দলবদ্ধভাবে বাড়ি ফিরছেন। বাচ্চাদের নিয়েও অনেক দুশ্চিন্তা করছেন অভিভাবকরা। তাছাড়া এখন মানুষ কুকুর দেখলেও অনেক ভয় পাচ্ছে।

একই এলাকার আবুল কাসেম বলেন, কাঞ্চনপাড়ার মুরগির খামার থেকে ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার দূর হবে এই এলাকা। গত রাতে আমার জামাই বাঘের গর্জন শুনতে পায়, ওইটা শুনে আমরা আতঙ্কে আছি ছোট বাচ্ছাদের নিয়ে। জীবনেও আমরা এই এলাকায় বাঘ দেখি নাই, এখন বাঘের পায়ের ছাপ দেখছি।

দলবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মাজেদুল ইসলাম বলেন, ছোট বাচ্চাদের নিয়ে অনেক ভয় হচ্ছে। তাদের ঘরের বাইরে বের হতে বাধা দিচ্ছি। তারা বাধা মানতে চায় না। হঠাৎ এলাকায় বাঘ আসার কথা শুনে আতঙ্কে আছি। বন বিভাগের লোকজন চেষ্টা করছে বাঘটা ধরার জন্য। আশা করি বাঘটা তাড়াতাড়ি ধরা পড়বে।

নীলফামারী বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা রথিন্দ্র কুমার বিশ্বাস বলেন, আমরা এখানে শনাক্ত করার চেষ্টা করছি যে আরও কোনো চিতাবাঘ আছে কিনা । আমরা যে পায়ের ছাপ দেখলাম সেটি হতেও পারে মারা যাওয়া বাঘটির পায়ের ছাপ। আমরা এখানে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করছি, যাতে  মানুষের কোনো ক্ষতি না হয়। আর মৃত বাঘটির ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি রিপোর্ট চলে আসবে। রিপোর্ট এলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রংপুর বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা স্মৃতি সিংহ বলেন, ঘটনাস্থল থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের চৌরাঙ্গী বাজারের নতিবাড়ী গ্রামের সড়কে একাধিক বাঘের পায়ের ছাপ দেখা গেছে। এসব পায়ের ছাপ দেখে মনে হচ্ছে আজ ভোরের দিকে এখানে বাঘের আনাগোনা ছিল। এ এলাকায় একাধিক বাঘ থাকতে পারে। 

এ সময় ঢাকা ও রাজশাহী বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট, উপজেলা প্রশাসন ও নীলফামারী বন বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

এর আগে গতকাল শুক্রবার (১৮ মার্চ) ভোরে সদর উপজেলার চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের কাঞ্চনপাড়ার অলিয়ার রহমানের মুরগির খামার থেকে একটি মৃত চিতাবাঘ উদ্ধার করা হয়। শিয়াল মারার বৈদ্যুতিক ফাঁদে পড়ে মারা যাওয়া বাঘটি নীলফামারী প্রাণিসম্পদ বিভাগে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। 

নীলফামারী জেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মোনায়েম খান বলেন, এটি একটি লেপার্ড, ভারতীয় হতে পারে। লুকিয়ে থাকা বাঘ জীবিত অবস্থায় ধরতে কাজ করছে ঢাকা, রাজশাহী ও রংপুর থেকে আসা বন বিভাগের তিনটি ইউনিট। জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমানসহ বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।


এসএম
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন