ঢাকা শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Motobad news

শিক্ষা-প্রযুক্তির উন্নয়নে ৪৫ কোটি টাকা বৈশ্বিক বিনিয়োগ পেলো শিখো

শিক্ষা-প্রযুক্তির উন্নয়নে ৪৫ কোটি টাকা বৈশ্বিক বিনিয়োগ পেলো শিখো
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

জাতীয় পাঠ্যক্রমকে অনলাইনে সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করে তুলতে কাজ করছে বাংলাদেশ-ভিত্তিক শিক্ষা প্রযুক্তি (এডটেক) স্টার্টআপ শিখো। 

শিক্ষা প্রযুক্তির উন্নয়নে সম্প্রতি আরও ৪০ লাখ মার্কিন ডলার ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে দ্বিতীয় সিড রাউন্ড শেষ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। 

বিগত বছরের আগস্ট মাসে প্রথম সিড রাউন্ডে স্টার্টআপটি ১৩ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ পায় এবং দুটি রাউন্ড মিলিয়ে শিখো সর্বমোট ৫৩ লাখ মার্কিন ডলার (৪৫ কোটি টাকা) বৈশ্বিক বিনিয়োগ পেয়েছে। যা এখন পর্যন্ত একটি বাংলাদেশি স্টার্টআপের সর্ববৃহৎ সিড রাউন্ড।

এই রাউন্ডে বিনিয়োগ করেছে সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান ওয়েভমেকার পার্টনার্স এবং অংশগ্রহণ করেছে আরও ৭টি বৈশ্বিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। বিগত বছরের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পুনর্বিনিয়োগ করেছে লার্ণ ক্যাপিটাল, অ্যাঙ্করলেস বাংলাদেশ এবং ভাইব ক্যাপিটাল। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটিতে নতুন বিনিয়োগকারী হিসেবে যুক্ত হয়েছে ডিএসজি কনজিউমার পার্টনারস, ব্ল্যাক কাইট ক্যাপিটাল, রেশিও ভেঞ্চারস এবং ডিমান্ড কার্ভ-এর প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান শাপিরো।

শিখো’র যাত্রা শুরু হয় তাদের মোবাইল লার্নিং অ্যাপ দিয়ে ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে। বর্তমানে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় ৩ লাখ  ৫০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী অ্যাপটিতে প্রতিদিন গড়ে ৬৮ মিনিট করে ব্যয় করে থাকেন।

শিখোতে রয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্ত এসএসসি, এইচএসসি এবং বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা সিলেবাসের সকল একাডেমিক কোর্স। শিক্ষার্থীদের জাতীয় বোর্ড পরীক্ষায় ভালো ফলাফলে সহায়তা করে, এমন সাশ্রয়ী ডিজিটাল রিসোর্স ও টুলসহ একাডেমিক কোর্স প্রদান করার পাশাপাশি পেশাগত এবং ভাষাশিক্ষা সহজতর করতে নিয়োজিত এই প্রতিষ্ঠানটি। 

শিখো’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা শাহীর চৌধুরী (সিইও) এবং জিশান জাকারিয়া (সিওও) তাদের এক দশকের আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে জাতীয় পাঠ্যক্রমকে একবিংশ শতকের উপযোগী করে তুলতে কাজ করছেন। 

শাহীর চৌধুরী বলেন, শিখো এমন একটি প্রতিষ্ঠান যার উদ্দেশ্য হলো সবচেয়ে ভালো মানের লার্নিং কন্টেন্ট সবার জন্য সহজলভ্য করা আর আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে সমগ্র বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের শেখার প্রক্রিয়াকে বদলে দেয়া। ভিজ্যুয়াল লার্নিংয়ের জন্য অ্যানিমেটেড ভিডিও কন্টেন্টের পথিকৃৎ হিসাবে এবং বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র পার্সোনালাইজড আর ডেটা-নির্ভর লার্নিং অ্যাপ চালু করতে পেরে আমরা গর্বিত।

শিখো’র মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী খুবই সহজে এবং কম খরচে বিষয়ভিত্তিক পাঠ্যসূচির মাধ্যমে নিজস্ব গতিতে শুরু করতে পারে তার শেখার যাত্রা। অ্যাপের ভেতর অ্যানিমেটেড ভিডিও লেসনের মাধ্যমে প্রতিটি বিষয়কে সহজভাবে ব্যাখা করা হয়েছে, প্রায়োগিক সূত্রসমূহের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার দেখানো হয়েছে যা যেকোনো পাঠ্যক্রমকে সবার জন্য বোধগম্য করে তোলে। সমাধানসহ বিশাল প্রশ্নব্যাংকের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে অনুশীলনী। 

আরও রয়েছে সংজ্ঞা, সূত্র, প্রমাণ এবং বিভিন্ন ‘হ্যাক’ সম্বলিত স্মার্ট নোটস এবং অফলাইন কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষকদের সাথে লাইভ ক্লাসে অংশগ্রহণের সুযোগ। রিয়েল-টাইম ডেটা অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পারফর্ম্যান্স ও অগ্রগতি ট্র্যাক করে অ্যাপটি প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বিষয়ভিত্তিক দূর্বলতা দূর করার পরামর্শ দেয় যা একজন অভিভাবককে সন্তানের শিক্ষা নিয়ে চিন্তামুক্ত করতে পারে। সর্বোপরি দেশের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক, প্রফেশনাল লার্নিংসহ সম্পূর্ণ শিক্ষাযাত্রায় অবদান রাখতে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

শাহীর চৌধুরী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ২০২১ সালের আগস্টের পর থেকে আমাদের ৬০ জনের টিম চারটি আলাদা জায়গায় ছড়িয়ে এখন ৩০০ জনেরও বেশি সদস্যের টিমে পরিণত হয়েছে এবং কয়েকটা ডিপার্টমেন্টকে আরো শক্তিশালী করার জন্য কাজ করছি আমরা। আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যতে বিশ্বাস রাখা বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত ও অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের সমর্থন পাওয়াটা আসলেই আনন্দের। ২০২২ সালের জন্য আমাদের আরো বড় মাপের কিছু পরিকল্পনা রয়েছে এবং আমাদের সব স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারকে সাথে নিয়ে সে লক্ষ্য অর্জনে আমরা আশাবাদী। 


শিখো’র কন্টেন্ট তৈরির প্রতিটি ধাপ মূল টিমের সাথে পর্যালোচনা করেছেন শিক্ষা বিশেষজ্ঞ এবং সৃজনশীল ব্যক্তিগণ এবং বিভিন্ন স্তরের গুণগত মান পরীক্ষার মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে তৈরি করেছেন একটি শিক্ষাপদ্ধতি বা কারিকুলাম। শেখার অভিজ্ঞতাকে ‘গেমিফাই’ করে তোলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য আরও ফলপ্রসূ শিক্ষা প্রদানে আগ্রহী শিখো।

এছাড়াও একটি ‘টিচার্স অ্যাকাডেমি’ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে শিখো’র প্রতিষ্ঠাতাদের, যার মাধ্যমে অভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ এবং তাদের আরও প্রশিক্ষিত করে তোলা হবে যাতে করে তারা শিখো প্ল্যাটফর্মে শিক্ষার্থীদের দিক নির্দেশনা ও ফিডব্যাক দিতে পারেন। একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাযাত্রায় পরিপূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে শিখো প্রতিনিয়ত গড়ে তুলছে কার্যকরী লার্নিং ম্যাটেরিয়াল যা সৃজনশীল, প্রায়োগিক এবং যুগোপযোগী।

বিনিয়োগ সম্পর্কে ওয়েভমেকার পার্টনারসের ম্যানেজিং পার্টনার পল সান্তস বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছে এখনও রিমোট লার্নিং টুল এবং মানসম্মত শিক্ষাগ্রহণের মাধ্যম সহজলভ্য নয়। অনেকেই মনে করে থাকে যে ভালো ফলাফল করতে শুধু ব্যয়বহুল প্রাইভেট বা কোচিং করা আবশ্যক। কিন্তু শিখো অ্যাপের মাধ্যমে প্রত্যেক শিক্ষার্থীই দেশের স্বনামধন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে নিতে পারে মানসম্মত শিক্ষা কম খরচে, নিজ ঘরে বসে, মুঠোফোনে বা কম্পিউটারেই। বাংলাদেশের সকল শিক্ষার্থীর জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার শিখোর এই নিরলস প্রয়াসে আমরা অনুপ্রাণিত এবং শিখোর অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার একটি ইতিবাচক ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী।

এই রাউন্ডের বিনিয়োগ পাবার আগে, শিখো লার্নস্টার্ট ও অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টরদের কাছ থেকে প্রি-সিড ফান্ড হিসেবে ২ লাখ ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার বিনিয়োগ পায়। শিখো অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে গুগল প্লে স্টোর থেকে এবং আরও জানতে ভিজিট করুন shikho.tech


এসএমএইচ
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন